বৃহঃস্পতিবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

রাজবাড়ীতে নায়েব মণ্ডলের মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া

কিডনি দান করেও সন্তানকে বাঁচাতে পারলেন না মা

রাজবাড়ী প্রতিনিধি | প্রকাশিত: ৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:৩৫

ছবি: সংগৃহীত

অজপাড়া গাঁয়ের দরিদ্র পরিবারের মেধাবী সন্তান নায়েব মন্ডল। স্বপ্ন ছিল বড় কিছু করার, পরিবারের দুঃখ দূর করার। লেখাপড়া শেষ করে যোগ দেন রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি পলিটেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে। সংসার গড়ার স্বপ্নে বিয়ের জন্য পাত্রীও দেখা হয়েছিল। ঠিক এমন সময় নেমে আসে জীবনের নির্মম মৌসুম।

হঠাৎ অসুস্থতা অনুভব করলে চিকিৎসকের কাছে যান নায়েব। সেখানেই জানতে পারেন, তার দুটি কিডনিই সম্পূর্ণ বিকল হয়ে গেছে। বিষয়টি শুরুতে পরিবারের কাছে গোপন রাখলেও পরে সব জানাজানি হলে শুরু হয় চিকিৎসার ব্যয়বহুল পথযাত্রা। দারিদ্র্যের মাঝেও ছেলের চিকিৎসায় কোনো ধরনের কার্পণ্য করেননি তার বাবা। উন্নত চিকিৎসার জন্য নায়েবকে নেওয়া হয় ভারতেও।

এদিকে ছেলের প্রাণ বাঁচাতে নিজের জীবনকেও তুচ্ছ করলেন নায়েবের মা। দুনিয়ার বিরল উদাহরণ সৃষ্টি করে নিজের একটি কিডনি দান করেন তিনি। গত ২৬ আগস্ট রাজধানীর শ্যামলীর সিকেডিইউ হাসপাতালে সম্পন্ন হয় প্রতিস্থাপন অস্ত্রোপচার। আশায় বুক বাধে পরিবার, সুস্থ হয়ে উঠবেন নায়েব।

কিডনি দানের খবর ছড়িয়ে পড়তেই এলাকায় সৃষ্টি হয় আলোড়ন। প্রশংসায় ভেসে যান নায়েব মণ্ডলের মা—মায়ের নিঃস্বার্থ ত্যাগ সবাইকে আবেগাপ্লুত করে তোলে। প্রতিস্থাপনের পর কিছুদিনের জন্য সুস্থও ছিলেন নায়েব। মনে হয়েছিল অন্ধকার সময় যেন কেটে যাচ্ছে।

কিন্তু ভাগ্য ছিল নির্মম। সব চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে গত ২ ডিসেম্বর রাতে ঢাকার একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার পাট্টা ইউনিয়নের মুছিদাহ গ্রামের আবু জাফর মণ্ডলের ছেলে নায়েব মণ্ডলের মৃত্যুতে মুহূর্তেই শোকে স্তব্ধ হয়ে যায় গোটা এলাকা।

যে মায়ের কিডনি বাঁচিয়ে রাখতে পারেনি ছেলের জীবন, সেই মা আজ বুকভাঙা আহাজারিতে সন্তানহারা বেদনায় নিস্তব্ধ। প্রতিবেশী, স্বজন— এমনকি যারা কখনো তাকে দেখেনি, তারাও চোখের জল ধরে রাখতে পারছেন না।

নায়েব মণ্ডলের মৃত্যু শুধু একটি পরিবারের নয়, সমগ্র সমাজের হৃদয়ে এক অনির্বচনীয় বেদনার স্মৃতি হয়ে থাকবে। মায়ের আত্মত্যাগ এবং সন্তানের এমন হৃদয়বিদারক বিদায় মানুষের মনে চিরদিন জেগে থাকবে এক গভীর মানবিক গল্প হয়ে।

 
 


বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top