শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৯ ফাল্গুন ১৪৩১

কারাগারে বসে কি স্ট্যাটাস দেওয়া যায়, প্রশ্ন ফারুক খানের

রাজীব রায়হান | প্রকাশিত: ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১৮:২৩

ছবি: সংগৃহীত

ফারুক খান বাংলাদেশের আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী নেতা এবং সাবেক বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী। ২০২৫ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি, ফারুক খানের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে একটি স্ট্যাটাস পোস্ট করা হয়, যদিও তিনি তখন কারাগারে বন্দী ছিলেন। এ ঘটনা প্রকাশিত হওয়ার পর ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়, কারণ এটি প্রশ্ন উত্থাপন করে যে একজন বন্দী কীভাবে তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করতে পারেন। পরে ফারুক খান এই স্ট্যাটাসের বিষয়ে দাবি করেন, "কারাগার থেকে কীভাবে স্ট্যাটাস দিবো? কারাগার থেকে কি স্ট্যাটাস দেওয়া যায়? এটা মিথ্যা কথা।"

২০১৫ সালের ১৪ অক্টোবর রাতে ফারুক খানকে ক্যান্টনমেন্ট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরবর্তীতে তিনি কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক হন। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় মতিঝিল থানায় দায়ের করা মামলায় আজ বুধবার রিমান্ড শুনানি শেষে হাজতখানায় যাওয়ার পথে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ পাল্টা প্রশ্ন তোলেন।

মির্জা আব্বাসের গাড়িবহরে হামলায় করা মামলার শুনানি শেষে আদালত ফারুক খানকে পাঁচ দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন শঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের বিচারক এম এ আজহারুল ইসলাম। এ ছাড়া এ মামলায় সাবেক মন্ত্রী, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননকেও পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন একই আদালত।

শুনানি শেষে সিএমএম আদালতের হাজতখানায় নিয়ে যাওয়ার পথে কারাগার থেকে ফারুক খানকে তার ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে স্ট্যাটাস দেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চান এক সাংবাদিক। জবাবে সাবেক এ মন্ত্রী বলেন, ‘কারাগার থেকে কি স্ট্যাটাস দেব? এটা মিথ্যা কথা। কারাগার থেকে কি স্ট্যাটাস দেওয়া যায়?’

গত বছরের ১৪ অক্টোবর রাতে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এলাকা থেকে ফারুক খানকে গ্রেপ্তার করা হয়। বর্তমানে তিনি একাধিক মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন।

গত ৩ ফেব্রুয়ারি কারান্তরীণ ফারুক খানের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে একটি স্ট্যাটাস দেওয়া হয়। যা ভাইরাল হয়ে পড়ে। এ নিয়ে নেট দুনিয়ায় ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়।ওই স্টাস্টাসে লেখা হয়, ‘অনেক কিছু বলতে চাই, কিনতু এখন সবই বলতে পারছি না। এতটুকুই বলবো শেখ হাসিনাকে নেত্রী মেনেছিলাম কিন্তু আজকে তার হঠকারিতার জন্যেই আমাদের দলের এই পরিণতি। দলের নেতৃ্ত্েব পরিবর্তন এবং সর্বস্তরে শুদ্ধি অভিযান ব্যতিত কোন ধরনের রাজনীতিতে ফেরা উচিত হবেনা। শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ আর চাই না, বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ ফেরত চাই। জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু।’

২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ছেড়ে ভারতে চলে যান। এরপর তার সরকারের বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী মন্ত্রী-এমপি ও দলের নেতা ধরা পড়েন। তবে অধিকাংশ নেতা হয় দেশ ছেড়েছেন না হয় আত্মগোপনে চলে গেছেন। নিচের সারির নেতাকর্মীরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। দলটির ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এমন ছত্রভঙ্গ অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা চলতি মাসে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করছে আওয়ামী লীগ। এমন প্রেক্ষাপটে ফারুক খানের ফেসবুক আইডি থেকে এই পোস্ট দেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই সেটির স্ক্রিনশট ফেসবুকে ভাইরাল হয়।

এর পরিপ্রেক্ষিতে রাতে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেয় কারা অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের সহকারী কারা মহাপরিদর্শক (উন্নয়ন) জান্নাত-উল ফরহাদ স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সোমবার ফারুক খান নামের এক ব্যক্তির ফেসবুক আইডি থেকে দেয়া একটি পোস্টের স্ক্রিনশট শেয়ার করে তা কারাগারে আটক সাবেক মন্ত্রী ফারুক খানের বলে প্রচার করে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। কারা কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিশ্চিত করছে যে, কারাগার হতে এ ধরনের প্রচার বা ফেসবুক চালানো সম্ভব নয়।

কারা কর্তৃপক্ষ বলেছে, ফারুক খান বর্তমানে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কেরাণীগঞ্জে আটক আছেন। কারাগারে আটক কোনো বন্দির পক্ষে মোবাইলফোন ব্যবহারের কোনো সুযোগ নেই। ফারুক খান নামের যে ফেসবুক আইডিটি থেকে পোস্ট দেয়ার কথা বলা হচ্ছে সেটি অন্য কেউ বা তার আত্মীয়-স্বজন পরিচালনা করছে কি না তা কারা দপ্তর জানে না। বিষয়টি অনুসন্ধান করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অনুরোধ জানানোর বিষয়টিও তুলে ধরা হয়েছে কারা কর্তৃপক্ষের বিজ্ঞপ্তিতে।

গত ১৫ অক্টোবর রাতে ঢাকার সেনানিবাস এলাকার বাসা থেকে ফারুক খানকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের আলোচিত কোম্পানি ‘সামিট গ্রুপ’ ফারুক খানদের পারিবারিক ব্যবসা। তার বড় ভাই আজিজ খান সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান। অর্থ পাচারের’ অভিযোগের তদন্তের অংশ হিসেবে সম্প্রতি আজিজ খান, ফারুক খানসহ তাদের পরিবারের ১১ সদস্যের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।

 




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top