পদত্যাগপত্রে যা বলেছেন বিএনপি

স্পিকারের হাতে পদত্যাগপত্র জমা দিলেন বিএনপির ৭ সাংসদ

রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ১২ ডিসেম্বর ২০২২, ০৫:৫৮

বিএনপির সংসদ সদস্যদের পদত্যাগ

জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন বিএনপির সাত সংসদ সদস্য। রোববার জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে সশরীরে পাঁচজন উপস্থিত হয়ে এবং দুইজনের পক্ষে এই পদত্যাগপত্র জমা দেওয়া হয়। স্পিকার সাতজনের পদত্যাগপত্র পাওয়ার কথা নিশ্চিত করলেও একজনের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হবে না বলে জানিয়েছেন।

সশরীরে পদত্যাগপত্র দেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের আমিনুল ইসলাম, বগুড়া-৪ আসনের মোশাররফ হোসেন, বগুড়া–৬ আসনের গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ, ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের জাহিদুর রহমান এবং সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা।

তবে বিদেশে থাকায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য হারুন অর রশিদ এবং অসুস্থতার কারণে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের সংসদ সদস্য আবদুস সাত্তার সশরীরে উপস্থিত ছিলেন না। এদের মধ্যে সংসদের হাজিরা খাতার সঙ্গে আবদুস সাত্তারের স্বাক্ষর মিলিয়ে তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হয়। আর হারুন অর রশিদ স্ক্যান করে পাঠানো স্বাক্ষর দেওয়ায় তাঁর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হয়নি।

বিএনপির সংসদ সদস্য গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ বলেন, আমরা যা কিছু করলাম বা করেছি সবই দলের সিদ্ধান্ত। আমরা লাখ লাখ মানুষের সামনে আনন্দ ও গর্বের সঙ্গে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছি। একদিন আগেও কেউ ক্ষমতা ছাড়তে চায় না। আমরা এক বছর একমাস আগে ছেড়ে দিয়েছি স্বইচ্ছায়।

পদত্যাগপত্রে বলা হয়েছে, বর্তমানে বাংলাদেশে চরম স্বৈরশাসন চলছে। বর্তমান সরকারের গণতন্ত্র ও গণবিরোধী কার্যকলাপে গণতন্ত্রহীনতা, বিরোধী রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ওপর দমনপীড়ন, গণগ্রেপ্তার, গুম, হত্যা এবং মতপ্রকাশ, বাকস্বাধীনতা হরণ, ভোটাধিকার ও মানবাধিকার হরণ, সর্বপরি মহান জাতীয় সংসদকে অকার্যকর করার প্রতিবাদে তারা পদত্যাগ করেছেন।

রুমিন ফারহানা বলেন, জনস্বার্থের বিরুদ্ধে অবস্থানগ্রহণকারী এই সংসদের সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করে এই সংসদ বাতিলের গণদাবির সঙ্গে একমত পোষণ করছি এবং দলীয় সিদ্ধান্তের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে স্বেচ্ছায়, সুস্থ শরীরে, স্থির মস্তিষ্কে অন্যের বিনাপ্ররোচণায় গভীরভাবে চিন্তা ও বিবেচনার পর অদ্য ১০ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে সংসদ থেকে যার যার আসন থেকে পদত্যাগ করলাম।

স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, পদত্যাগপত্র সশরীরে এসে জমা দিতে হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। যে পাঁচজন পদত্যাগপত্র নিয়ে এসেছেন তাঁদের আসন শূন্য হয়ে গেছে। বাকি দুটি আবেদনের সই যাচাই করা হবে এবং তারাই পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন কি না, সংসদ সচিবালয় তা খোঁজ নেবে। তবে হারুনুর রশীদ পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন ইমেইলে, তাঁর সই স্ক্যান করে বসানো হয়েছে। এটা গ্রহণ করা হবে না, তাঁকে আবার পদত্যাগপত্র দিতে হবে। তিনি জানান, সংশ্লিষ্ট আসনগুলো শূন্য ঘোষণা করে সংসদ সচিবালয় প্রজ্ঞাপন জারি করবে।

আইন অনুযায়ী ই-মেইলে পদত্যাগপত্র পাঠালে তা আমলযোগ্য হওয়ার সুযোগ নেই। কার্যপ্রণালি বিধি অনুযায়ী, নিজের হাতে লিখিতভাবে পদত্যাগপত্র জমা দিতে হবে।

দেশের সংসদীয় রাজনীতির ইতিহাসে এর আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে ১৯৯৪ সালের ২৮ ডিসেম্বর পঞ্চম জাতীয় সংসদের ১৪৭ বিরোধী দলীয় সদস্য একযোগে পদত্যাগ করেন। এদিন আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী ও এনডিপির সদস্যরা স্পিকারের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন।

তৎকালীন স্পিকার শেখ রাজ্জাক আলী পদত্যাগপত্র গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়ে রুলিং দেন। বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে তিনি পদত্যাগপত্র অগ্রহণযোগ্য বলে আখ্যায়িত করেন। তবে পরে টানা ৯০ দিন সংসদের বৈঠকে অনুপস্থিতির কারণে তাঁদের আসনগুলো শূন্য ঘোষণা করা হয়েছিল।

নির্বাচন কমিশনার আলমগীর জানিয়েছেন, বিএনপির এমপিরা পদত্যাগ করায় তাদের আসনগুলো শূন্য ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ হলে বিধি অনুযায়ী সেখানে উপনির্বাচনের ব্যবস্থা করবে নির্বাচন কমিশন।

 

 

 

 

 

 

 

 



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top