বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞের হুঁশিয়ারি

সবচেয়ে ভয়াবহ ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাবের কবলে বাংলাদেশ, ডব্লিউএইচও কী বলছে...

রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২২:৫৬

ছবি: সংগৃহীত

মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগের বিস্তারে জলবায়ু পরিবর্তনকে আংশিকভাবে দায়ী করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সংস্থাটি বলছে, বাংলাদেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব রেকর্ডের সবচেয়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকে গত এপ্রিলে বিশ্বের অষ্টম জনবহুল এই দেশটিতে ১ লাখ ৩৫ হাজারের বেশি মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে। প্রাদুর্ভাবের পরে মৃত্যু রেকর্ড করা হয়েছে ৬৫০ জনের।

বুধবার (৬ সেপ্টেম্বর) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রোস আধানম গেব্রিয়েসুস বলেন, শুধু গত মাসেই (আগস্ট) বাংলাদেশে ডেঙ্গুতে ৩০০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ডেঙ্গুর এই ব্যাপক প্রাদুর্ভাব স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করছে। রাজধানী ঢাকায় সংক্রমণ কমতে শুরু করলেও দেশের অন্যান্য অংশে তা বাড়ছে।

ডব্লিউএইচও জানিয়েছে, বাংলাদেশে বিশেষজ্ঞ মোতায়েন করেছে সংস্থাটি। ডেঙ্গু সংশ্লিষ্ট নজরদারি জোরদার, পরীক্ষাগারের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং আক্রান্ত জনগোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করছে তারা। ডেঙ্গু গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে স্থানীয় একটি রোগ, যা হলে অতিমাত্রায় জ্বর, মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব, পেশী ব্যথা দেখা যায়। সবচেয়ে গুরুতর ক্ষেত্রে মৃত্যুর কারণ হতে পারে এই ডেঙ্গু।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ডেঙ্গু এবং মশাবাহিত ভাইরাস যেমন- চিকুনগুনিয়া, হলুদ জ্বর ও জিকার কারণে সৃষ্ট অন্যান্য রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।

সংস্থাটির বরাত দিয়ে সিএনএন এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে বাংলাদেশের হাসপাতালগুলো, চাপের মুখে পড়েছে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা। দেখা দিয়েছে শয্যা এবং কর্মী সংকটও।

ডেঙ্গু পরিস্থিতি যে শুধু বাংলাদেশে খারাপ হয়েছে তা নয়। দক্ষিণ আমেরিকার দেশ পেরু এই সংকট মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে। ডেঙ্গুর প্রকোপ থেকে বাদ যায়নি যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির ফ্লোরিডার অঙ্গরাজ্যের বেশ কয়েকটি জায়গায় সতর্কতা জারি করা হয়েছে। অপরদিকে এশিয়ায় বাংলাদেশ ছাড়াও শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড এবং মালয়েশিয়ায় ডেঙ্গুর ভয়াবহ প্রকোপ দেখা গেছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অ্যালার্ট অ্যান্ড রেসপন্স ডিরেক্টর আব্দি মাহামুদ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং এ বছরের উষ্ণ আবহাওয়ার ধরণসহ বিভিন্ন কারণের সংমিশ্রণ বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আমেরিকাসহ বেশ কয়েকটি অঞ্চলে মারাত্মক ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বাড়িয়ে তুলেছে। আফ্রিকার দেশগুলোতেও সম্প্রতি প্রাদুর্ভাবের খবর পাওয়া গেছে।

সংস্থাটির এ বিশেষজ্ঞ আরও বলেছেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি এসব রোগের ভয়াবহ ভার বহন করছে আরও অনেক দেশ। জলবায়ু সংকট এবং বিশ্বব্যাপী শুরু হওয়া এল নিনো জলবায়ু প্যাটার্ন যেটির কারণে উষ্ণ ও শুষ্ক আবহাওয়া দেখা যায় এটি পরিস্থিতি আরও খারাপ করছে। এ বিষয়টি জলবায়ু সংকটের ভয়াবহতার একটি আগাম সতর্কতা। আর এই সংকট মোকাবিলা করতে বিশ্বের সবার সহযোগিতা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন তিনি। 

ডেঙ্গুর সবশেষ পরিস্থিতি

সারা দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে বুধবার পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন আরও ১৪ জন। এ সময়ে হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন ২ হাজার ১১৫ জন।

বুধবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ডেঙ্গুবিষয়ক প্রতিবেদনে জানানো হয়, মারা যাওয়াদের মধ্যে ঢাকার রয়েছেন ১০ জন, বাকি ৪ জন ঢাকার বাইরের। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৭১ জনে।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি ২ হাজার ১১৫ জনের মধ্যে ঢাকায় ৮৩৩ জন এবং ঢাকার বাইরের রয়েছেন ১ হাজার ২৮২ জন। এ নিয়ে চলতি বছর দেশে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩৮ হাজার ২২ জনে।

এদিকে বর্তমানে ৯ হাজার ১২৭ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এর মধ্যে ঢাকার সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ৩ হাজার ৯৪৬ জন এবং ঢাকার বাইরের হাসপাতালে ৫ হাজার ১৮১ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন। আর চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১ লাখ ২৮ হাজার ২২৪ জন।




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top