দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ নির্বিঘ্ন করতেই পারস্পরিক এ আয়োজন

ঢাকায় মার্কিন প্রতিনিধি দল, টিকফা বৈঠক আজ, কোন বিষয়ে জোর দেবে বাংলাদেশ?

রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৪:৫১

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা ফোরাম চুক্তির (টিকফা) বৈঠক আজ। এতে মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধির কার্যালয়ের (ইউএসটিআর) দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী ইউএসটিআর ক্রিস্টোফার উইলসের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের প্রতিনিধিদল ঢাকায় এসে পৌঁছেছে। বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে টিকফার সপ্তম কাউন্সিল বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ। 

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধা, তৈরি পোশাকসহ রফতানি পণ্যের শুল্ক ছাড় এবং স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বের হওয়ার পর সম্ভাব্য ঝুঁকি মোকাবিলায় দেশটির ঐকান্তিক সহায়তা চায় বাংলাদেশ।

তপন কান্তি বলেন, যেহেতু যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানি করে পোশাক তৈরির পর যুক্তরাষ্ট্রেই রপ্তানি হচ্ছে, এটা অনেকটা বাইব্যাকের মতো। তাই তৈরি পোশাকের পুরো মূল্যের ওপর শুল্কারোপ যৌক্তিক নয়। এ কারণেই আমরা শুধু বাংলাদেশে মূল্য সংযোজনের ওপর শুল্কারোপের প্রস্তাব করব। এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি কমে যাওয়ার বিষয়টিও তুলে ধরা হবে।

অন্যদিকে কারখানার যথাযথ নিরাপত্তা বিশেষত কর্মপরিবেশ, শিশুশ্রম বন্ধ এবং মেধাস্বত্ব বিষয়ক জটিলতার দ্রুত সমাধান চায় যুক্তরাষ্ট্র। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ নির্বিঘ্ন করতেই পারস্পরিক এমন চাওয়া।

সূত্রমতে, টিকফা বৈঠকে উভয় দেশের মধ্যে আলোচনার জন্য ২০টি এজেন্টা চূড়ান্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে বাজার সুবিধার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ফার্মাসিউটিক্যালস পণ্য রেজিস্ট্রেশন সহজ এবং ইউএস ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ফিন্যান্স করপোরেশন (ডিএফসি) থেকে অর্থায়ন পাওয়ার বিষয়ে জোর দেবে বাংলাদেশ।

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ডিউটি ফ্রি, কোটা ফ্রি এক্সেস সুবিধা চাওয়া হবে। পাশাপাশি এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পরও ৬ বছর শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা ও ট্রিপস বেনিফিট অব্যাহত রাখার বিষয়ে ডব্লিউটিওতে এলডিসি গ্রুপের প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন চাইবে ঢাকা।

আগামী বছরের শুরুতে অনুষ্ঠেয় ডাব্লিউটিও-এর মিনিস্ট্রিয়াল বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র যাতে এলডিসির প্রস্তাবে সমর্থন দেয়, সে বিষয়ে বাংলাদেশ গুরুত্ব দেবে। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের ফার্মাসিউটিক্যালস প্রোডাক্ট রেজিস্ট্রেশন সহজ করা এবং ইউএস ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ফিন্যান্স করপোরেশন (ডিএফসি) থেকে অর্থায়ন পাওয়ার বিষয়ে জোর দেবে বাংলাদেশ।

এছাড়া মার্কিন বিনিয়োগকারী কোম্পানিগুলোর মুনাফা এদেশ থেকে নেওয়ার ক্ষেত্রে সৃষ্ট জটিলতা নিরসন চাইবে যুক্তরাষ্ট্র। কৃষি বায়োটেকনোলজি ডায়ালগ এবং বাংলাদেশের বীজ আইন সংশোধনের প্রস্তাব দেবে যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া মেধাস্বত্ব অধিকার, মানসম্পন্ন সনদ অবকাঠামোর জন্য প্রযুক্তিগত সহযোগিতা, শ্রম সমস্যা প্রভৃতি বিষয় নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়।

তবে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এ বৈঠক একটি চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছে পর্যবেক্ষণ মহল। তাদের মতে, এটি নির্বাচনে একধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। বৈঠককে ঘিরে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো এমনটি আভাস দিয়েছে।

২০১৩ সালে অভিন্ন উদ্দেশ্যে দুই দেশের মধ্যে টিকফা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এরই মধ্যে চুক্তির এক দশক পার হতে চলেছে। এর আওতায় ঢাকা ও ওয়াশিংটনের মধ্যে এই সময়ে ছয়টি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তবে এসব বৈঠক থেকে এখনো স্বার্থসংশ্লিষ্ট ইস্যুতে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য কোনো প্রাপ্তি ঘটেনি। অর্থাৎ অর্জন প্রায় শূন্য। মেলেনি জিএসপি সুবিধা। উল্টো ২৩২ দেশের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে সর্বোচ্চ শুল্ক দিচ্ছে বাংলাদেশ।




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top