‘হামুনে’ লণ্ডভণ্ড কক্সবাজার, হাজার হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত,নিহত ৩
ফারহানা মির্জা | প্রকাশিত: ২৬ অক্টোবর ২০২৩, ১১:২৬
'হামুন'র তাণ্ডবে পুরো কক্সবাজার লণ্ডভণ্ড। বাতাসের তীব্রতায় কক্সবাজার পৌরসভা, উপকূলীয় উপজেলা মহেশখালী, কুতুবদিয়া, উখিয়া, চকরিয়া, পেকুয়া, ঈদগাঁও ও টেকনাফসহ ৭১টি ইউনিয়নে ৩৭ হাজার ৮৫৪টি বসতবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে বেশ কিছু বিধ্বস্ত ও আর কিছু আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৪ লাখ ৭৬ হাজার ৫৪৯ বাসিন্দা। এছাড়াও দেওয়াল চাপায় নিহত হয়েছেন তিনজন।
গেলো মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাতটা হতে বিচ্ছিন্ন হওয়া বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল হয়েছে বুধবার রাত ১০টায়। বুধবার সারাদিন বিচ্ছিন্ন থাকা ইন্টারনেট ও মোবাইল নেট সংযোগ সন্ধ্যায় এলেও কোনো কাজ করা সম্ভব হয়নি। এতে এক প্রকার কার্যত অচল হয়ে পড়ছিল প্রশাসনিকসহ সব কার্যক্রম।
এদিকে গেলো বুধবার (২৫ অক্টোবর) সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।জেলা প্রশাসনের দেয়া তথ্য মতে, ঘূর্ণিঝড় হামুনের আঘাতে জেলার ৭১টি ইউনিয়ন ও কক্সবাজার ও মহেশখালী দুটি পৌরসভাসহ সব ইউনিয়নে ৩৭ হাজার ৮৫৪ পরিবারের ৪ লাখ ৭৬ হাজার ৫৪৯ জন বাসিন্দা ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়েছেন। ভেঙে পড়েছে পল্লী বিদ্যুতের ৩৫৪টি বৈদ্যতিক খুঁটি। বিকল হয়েছে ২৩টি ট্রান্সফরমার। ৪৯৬ স্থানে বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে গেছে। ৮০০ স্থানে গাছ পড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। সন্ধ্যায় পৌরসভার ১৫০ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারে ১ বান করে ঢেউটিন ও নগদ ১ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ে নিহতদের পরিচয় কক্সবাজার শহরের পাহাড়তলী এলাকার আবদুল খালেক (৪২), মহেশখালীর উপজেলার বড়মহেশখালী ইউনিয়নের গোরস্তানপাড়ার হারাধন দে (৪৫) ও চকরিয়া উপজেলার বদরখালী গ্রামের আশকার আলী (৪৫)।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় হামুনের আঘাতে কক্সবাজার শহর লন্ডভন্ড হয়েছে। বিদ্যুৎ-ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় বিকেল পর্যন্ত মুঠোফোন নেটওয়ার্ক সমস্যা এবং সন্ধ্যা পর্যন্ত ইন্টারনেট সেবা বন্ধ ছিল। ফলে, জেলা কার্যালয় থেকে মহেশখালী ও কুতুবদিয়া উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন উপজেলার সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।’
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় হামুন মঙ্গলবার মধ্যরাতের দিকে আঘাত হানবে বলা হয়েছিল। কিন্তু রাত সাড়ে সাতটার দিকে প্রবল গতিবেগে ঘূর্ণিঝড়টি শহরে আঘাত হানতে শুরু করে। মাত্র দুই ঘণ্টার তাণ্ডবে পুরো শহর লন্ডভন্ড হয়ে যায়। ঘূর্ণিঝড়ে এ পর্যন্ত তিনজনের মৃত্যু হয়েছে
কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘কয়েক ঘণ্টার তাণ্ডবে পৌরশহরে কয়েক শতাধিক ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আংশিক ক্ষতি হয়েছে আরো সহস্রাধিক ঘর। আমরা উপরে পড়া গাছ কাটার নির্দেশ দিয়েছি। ক্ষতিগ্রস্তদের ঢেউটিন ও ত্রিপল দিয়ে সহযোগিতা করছি।’
পৌরসভার নারী কাউন্সিলর শাহেনা আকতার পাখি বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ে তার তিনটি ওয়ার্ডে অন্তত দেড় হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসে বিলীন হয়েছে অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের শুঁটকি উৎপাদনের প্রায় ৭০০ মহাল।’
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিভীষণ কান্তি দাশ বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের তালিকা তৈরির কাজ চলছে। মানবিক সহায়তা হিসেবে কক্সবাজার সদর, রামু, ঈদগাঁও, চকরিয়া, পেকুয়া, কুতুবদিয়া ও মহেশখালীতে সাড়ে ৪ লাখ টাকা ও ১৪ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে পাঁচ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ করা হয়।’
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।