গাজা অভিযানের জন্য প্রস্তুত ইসরায়েলের সেনা: নেতানিয়াহু
রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ২৬ অক্টোবর ২০২৩, ১৬:২৫
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে স্থল অভিযান চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরায়েল। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এমন তথ্যই জানিয়েছেন। তবে সেই অভিযান কখন পরিচালনা করা হবে, সেটি জানাতে অস্বীকার করেছেন তিনি।
এছাড়া গাজা ভূখণ্ডে ‘হাজার হাজার’ সন্ত্রাসীকে হত্যার দাবি করেছেন তিনি। তার দাবি, এটা ‘কেবল শুরু’। এমনকি মাটির ওপরে-নিচে ও গাজার ভেতরে-বাইরে থাকা হামাসের সকল সদস্যকে হত্যার হুমকিও দেন নেতানিয়াহু। বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তসংস্থা আনাদোলু।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় স্থল আক্রমণের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং চলমান যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর হামাসের নজিরবিহীন হামলার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করা হবে বলে বুধবার জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু।
নেতানিয়াহু দাবি করেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে হাজার হাজার সন্ত্রাসীকে হত্যা করেছি এবং এটি কেবল শুরু। একইসঙ্গে আমরা স্থল আক্রমণের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। তবে সেটি কখন হবে, কিভাবে বা কত সেনা তাতে অংশ নেবে সে সম্পর্কে আমি বিস্তারিত বলব না। আমরা যে বিভিন্ন হিসাব-নিকাশ করছি তাও আমি বিস্তারিত বলব না। এসব বিষয়ে জনসাধারণ বেশির ভাগই জানেন না, এবং এগুলো এভাবেই হওয়া উচিত।’
তিনি বলেন, অভিযানের দুটি লক্ষ্য রয়েছে: ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাসের সক্ষমতা ধ্বংস করা এবং বন্দিদের মুক্ত করার জন্য সম্ভাব্য সবকিছু করা। ইসরায়েলি এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মাটির ওপরে ও নিচে এবং গাজার ভেতরে এবং বাইরে থাকা হামাসের সকল সদস্য মারা যাবে।’
এদিকে বুধবারই জাতিসংঘে ইসরায়েল-হামাস সংঘাত নিয়ে একটি আলোচনা হয়েছে। কিন্তু সেখানে সর্বসম্মতিক্রমে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। চীন এবং রাশিয়া বাকি সকলের সিদ্ধান্তে ভেটো প্রয়োগ করেছে। আমেরিকা সেই সিদ্ধান্তপত্র তৈরি করেছিল।
অন্যদিকে রাশিয়াও একটি খসড়া প্রস্তাব তৈরি করেছিল। কিন্তু অন্য কোনো দেশ তা গ্রহণ করেনি। অধিকাংশ দেশই সেই প্রস্তাবে ভোট দেয়নি। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেছেন, গাজায় যদি ত্রাণ পাঠানো না যায়, তাহলে এই সংঘাত মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। তার বাইরেও ছড়াবে।
আমেরিকা যে প্রস্তাব গ্রহণ করেছিল, তাতে একদিকে গাজায় মানবিক সাহায্য দেয়ার কথা বলা হয়েছিল। অন্যদিকে, ইসরায়েলের সমর্থনে সেখানে বলা হয়েছিল, প্রতিরক্ষার অধিকার সকলের আছে। আর তা নিয়েই ভেটো দিয়েছে রাশিয়া এবং চীন।
আমেরিকার খসড়া প্রস্তাবকে সম্পূর্ণভাবে নস্যাৎ করেছে রাশিয়া। অন্যদিকে, আমেরিকা জানিয়েছে, তারা একটি মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের চেষ্টা করেছিল। ইইউ বলেছে, ইসরায়েল যেন সংঘর্ষ-বিরতি ঘোষণা করে। সেই সময় গাজায় উপযুক্ত পরিমাণে ত্রাণ পাঠানো সম্ভব হবে।
মুসলিমদের তৃতীয় পবিত্র ধর্মীয় স্থান আল-আকসা মসজিদের পবিত্রতা লঙ্ঘন এবং অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের অত্যাচারের জবাব দিতে গত ৭ অক্টোবর ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’ নামে একটি অভিযান চালায় ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। হামাসের এই অভিযানে কার্যত হতবাক হয়ে পড়ে ইসরায়েল।
হামাসের এই হামলায় নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ১৪০০ ইসরায়েলি। নিহতদের মধ্যে ২৮৬ জন সেনাসদস্য রয়েছে বলে আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করা হয়েছে। হামাসের হামলায় আহত হয়েছেন আরও ৪ হাজার ৪০০ জনেরও বেশি ইসরায়েলি। এছাড়া আরও দুই শতাধিক মানুষকে বন্দি করে গাজায় নিয়ে গেছে হামাস।
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।