সারাদেশে বিএনপি-জামায়াতের ডাকা ৭২ ঘণ্টার অবরোধ চলছে
রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ৩১ অক্টোবর ২০২৩, ১১:৫৮
সরকারের পদত্যাগসহ বিভিন্ন দাবিতে মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) থেকে টানা তিন দিন দেশব্যাপী সড়ক-রেল-নৌপথ, রাজপথসহ সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি-জামায়াতসহ সমমনা রাজনৈতিক দল ও জোট। কর্মসূচি সফলে সর্বস্তরের নেতাকর্মীসহ দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, রাজপথ, নৌপথ, সড়ক-মহাসড়ক, রেলপথ-সর্বাত্মক অবরোধ চলবে। রাজধানীর সঙ্গে জেলার, জেলার সঙ্গে উপজেলা, উপজেলার সঙ্গে বিভিন্ন ইউনিয়নের যে মূল সংযোগ; অর্থাৎ মূল সড়কসহ সব সড়কে অবরোধ থাকবে। তেমনি রেল ও নৌপথগুলোয়ও অবরোধ হবে।
গত ২৮ অক্টোবরে বিএনপির মহাসমাবেশে হামলা, নেতা-কর্মীদের হত্যা, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ আন্দোলনরত বিভিন্ন দলের সহস্রাধিক নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার, হয়রানি ও নির্যাতনের প্রতিবাদে এবং এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষে সোমবার (৩০ অক্টোবর) দিবাগত রাত ১২টা থেকে বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) রাত ১২টা পর্যন্ত সড়ক, রেল ও নৌপথে সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয় বিএনপি।
একই সময়ে বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচির সঙ্গে মিল রেখে ৭২ ঘণ্টার অবরোধ ঘোষণা করেছে জামায়াতে ইসলামীও।
সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি বাস্তবায়নে দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছেন বিএনপির হাইকমান্ড। সারাদেশে সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে ভিডিওবার্তা দিয়েছেন বিএনপির শীর্ষ নেতা। একই সঙ্গে দায়িত্বশীল নেতাদের মাঠে থাকার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।
এর আগে, রোববার (২৯ অক্টোবর) সন্ধ্যায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আন্দোলন কর্মসূচি প্রণয়ন ও পরবর্তী করণীয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একই কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ ধারায় আন্দোলনরত গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, এলডিপি, গণঅধিকার পরিষদ (নুর), বাংলাদেশ লেবার পার্টিসহ আরও বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল।
এদিকে সরকার বিরোধীদের টানা ৭২ ঘণ্টা অবরোধ ও শ্রমিকের মৃত্যুতে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে। এ পরিস্থিতিতে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কমিটির সদস্যদের নিয়ে সভা করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
নাশকতা ঠেকাতে এরইমধ্যে মোতায়েন করা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য। মাঠে নেমেছে বিজিবিও। সোমবার রাত থেকে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় টহল দিচ্ছেন তারা।
বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম বলেন, বিএনপি ও জামায়াতের অবরোধকে কেন্দ্র করে রাজধানীসহ সারাদেশে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সারাদেশে প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিজিবি মোতায়েন থাকবে।
এদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) জানিয়েছে, শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অনুমতি নিয়েও গত শনিবার সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা। ২৮ অক্টোবরের ওই সহিংসতায় এক পুলিশ সদস্য নিহত হন এবং ৪১ পুলিশ সদস্য আহত হন। এ অভিজ্ঞতা মাথায় রেখে বিএনপি-জামায়াতের ডাকা ৩ দিনের অবরোধের জন্য বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ, নাশকতা, আগুন, ভাঙচুর ও পুলিশ সদস্য হত্যাসহ নানা অভিযোগে ৩৬ মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় ১৫৪৪ জন এজাহারনামীয়সহ অজ্ঞাতনামা আরও অনেককে আসামি করা হয়েছে।
বিএনপি ও জামায়াতের ডাকা টানা তিন দিনের অবরোধে সারাদেশে পণ্যবাহী গাড়ি ও বাস চালানোর ঘোষণা দিয়ে নিরাপত্তা চেয়েছে পরিবহন মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। একই সঙ্গে যেসব গাড়ি ভাঙচুর ও পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে, সেগুলোর জন্য ক্ষতিপূরণের দাবিও জানানো হয়েছে। সোমবার সমিতির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মালিক-শ্রমিকদের যৌথসভায় এই সিদ্ধান্ত হয় বলে সংগঠনের মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।