গড়ে উঠেছে শক্তিশালী একটি সিন্ডিকেট
সোনা ও মাদক চোরাচালানের নিরাপদ রোড শাহজালাল বিমানবন্দর
মনির হোসেন জীবন | প্রকাশিত: ১ জানুয়ারী ২০২৫, ১৩:৪৩
ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সোনা ও মাদকদ্রব্য চোরাচালানের নিরাপদ রোড হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কতিপয় প্রভাবশালী একাধিক সিন্ডিকেট দীর্ঘ দিন ধরে বিমানবন্দর বিমানবন্দরে ভেতরে ও বাহিরের এই কাজের সাথে জড়িত। খবর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট একাধিক তথ্যসূত্রের।
জানা গেছে, কিছুদিন আগে বাংলাদেশ বিমানের প্যান্ট্রিম্যান শাহিনুর ও রুহুল আমিন, নিরাপত্তা কর্মী ইব্রাহীম খলিল ও যাত্রী কামাল উদ্দীনসহ অসংখ্য যাত্রী ও সোনা পাচারকারীকে আটক করে আইনশৃংলা বাহিনী।
এছাড়া সন্দেহভাজন হিসেব ছয় জনকে আটক করা হয়েছে। তারা হলেন- বাংলাদেশ এক্সপ্রেস লিমিটেড এর এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর (অর্থ) খন্দকার ইফতেখার উদ্দিন আহমেদ (৫০) ও সিনিয়র ম্যানেজার (অপারেশন) রাসেল মাহমুদ (৩২)।
ইউনাইটেড এক্সপ্রেস এর জেনারেল ম্যানেজার গাজী শামসুল আলম (৪৩)। ইক্সপোর্ট কার্গোর ভেতরে এমজিএইচ গ্রুপের লোডিং সুপারভাইজার কাজল থুটোকিশ গোমেজ, কার্গো হেলপার/লোডার মো. হামিদুল ইসলাম (৩০) ও মো. নজরুল ইসলাম।
তার মধ্যে আটক কামাল উদ্দীন সোনা পাচারের একজন বাহক। বিমানবন্দরের অ্যাপ্রোন (এপ্রন সাইড) ও লাগেজ বেল্ট ও চেকিং এলাকা সহ বিভিন্ন এলাকায় পৃথক অভিযান চালিয়ে তাদেরকে আটক করা হয়।
সূত্র বলছে, ১২ কেজি ৩২০ গ্রাম ওজনের প্রায় ২৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা মূল্যের অ্যামফিটামিন পাউডার (মাদক) জব্দ করা হয়েছে। জিন্সের প্যান্টের আড়ালে কার্টনের গায়ে ১৪টি বড় প্যাকেট ও ১৪টি ছোট প্যাকেটে মোট ২৮টি কার্বনের লেয়ার দ্বারা প্রস্তুত পাতলা অ্যালুমিনিয়াম প্যাকেট উদ্ধার করা হয়।
আন্তর্জাতিক কুরিয়ার সার্ভিস ফেডেক্সের মাধ্যমে নিষিদ্ধ মাদক অ্যামফিটামিন পাউডার পাঠানো হচ্ছিলো অস্ট্রেলিয়ায়। বাংলাদেশ থেকে হংকং হয়ে অস্ট্রেলিয়া পাঠানো হচিছল। এই ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে। ২০০৮ সালে ১৬ মার্চ ৯ কেজি ৪০০ গ্রাম ৮০ পিস সোনা আটক করা হয়। যার আনুমানিক বাজার মূল্য পৌনে ৫ কোটি টাকা, ২০২২ সালের ২৭ জানুয়ারি ৩০ পিস ৩.৪৮০ গ্রাম সোনা জব্দ করা হয়। যার মূল্য প্রায় ২ কোটি ১৫ লাখ টাকা,
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফকরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আহসানুল জব্বার নিউজ ফ্ল্যাশ ৭১ ডটকম জানান, আমরা বাংলাদেশে অবস্থিত ইন্টারন্যাশনাল কুরিয়ার সার্ভিসগুলোর উপর নজরদারি রাখছি। কেউ যাতে কোনোভাবে মিথ্যে তথ্য দিয়ে কুরিয়ার সার্ভিসকে ব্যবহার করে বিভিন্ন পণ্যের আড়ালে মাদকের চোরাচালান করতে না পারেন। এই আন্তর্জাতিক পাচারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এবিষয়ে কাউকে বিন্দুমাত্র ছাড় প্রদান করা হবে না।
অধিদফতরের পরিচালক (অপারেশন) ডিআইজি মাসুম রব্বানী নিউজ ফ্লাশ ৭১ ডটকমকে বলেন, এই মাদক বাংলাদেশে উৎপাদন হয়না। তবে পার্শ্ববর্তী মিয়ানমার ও চীন উৎপাদন করে থাকে। সেখান থেকে কোনো না কোনোভাবে এটি বাংলাদেশে আসতে পারে।
এদিকে, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের এক কর্মকর্তা নিউজ ফ্লাশ ৭১ ডটকমকে জানান, বিমানবন্দরে রপ্তানি কার্গো ভিলেজে ডুয়েল ভিউ স্ক্যানারে নিরাপত্তা তল্লাশি বা স্ক্রিনিংয়ের সময় গার্মেন্ট পণ্যের (জিন্স প্যান্ট) কার্টনে ভর্তি অবস্থায় এসব মাদক পাউডার জাতীয় পদার্থ পাওয়া যায়। মূলত ইয়াবা তৈরির উপাদান দিয়ে কোকেন সদৃশ্য এই মাদক তৈরি করা হয়েছে। হংকং হয়ে অস্ট্রেলিয়াগামী বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে তা হংকংয়ে পাঠানোর উদ্দেশ্য ছিলো।
বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পাশাপাশি বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোয় খাবার পরিবেশন ও কেবিন ড্রেসিংয়ের দায়িত্ব পালন করে বিমান ফ্লাইট ক্যাটারিং সেন্টার-বিএফসিসি। প্রয়োজনীয় খাবার ফ্লাইটে পৌঁছে দিতে কর্মীরা ব্যবহার করেন বিমানবন্দরের অ্যাপ্রোন এলাকার লাগোয়া বিএফসিসির পেছনের গেট। এ সুযোগে হাতবদল করা হয় চোরাচালানের বিভিন্ন পণ্য। পরে বিএফসিসির সামনের গেট হয়ে চত্বরের বাইরে চলে আসে সেসব স্বর্ণ। এসব কর্মকা- করতে গড়ে উঠছে একটি সিন্ডিকেট। এ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চালানো হচ্ছে তাদের অপকর্ম।
সূত্র আরো বলছে, দুর্বল নিরাপত্তা ব্যবস্থা, অপর্যাপ্ত নিরাপত্তাকর্মী, অপরিসর নিরাপত্তা গেট ও নিজস্ব লোক দিয়ে নামমাত্র চেকিংয়ের সুযোগে বিএফসিসিতে গড়ে উঠেছে সোনা পাচারের নিরাপদ স্হান। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন পর্যায়ের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর সিন্ডিকেট এই পথে নির্বিঘ্নে পাচার করছে সোনা। বিমানের তদন্ত প্রতিবেদনেই উঠে এসেছে এসব তথ্য।
জানা গেছে, বিভিন্ন সময় পাচারের স্বর্ণসহ বিমানের কর্মী আটক হলেও মূল অপরাধীরা থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। এবারের তদন্ত প্রতিবেদনেও তাদের শাস্তির আওতায় আনার সুপারিশ নেই। গত ২ সেপ্টেম্বর বিমানের পেন্ট্রিম্যান (সিসি-৩৯২) জাহাঙ্গীরের দেহ তল্লাশি করে স্বর্ণবার উদ্ধারের ঘটনায় ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে বিএফসিসি।
এ সংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চোরাচালান বন্ধে নিরাপত্তা গেট বড় করা ও নিরাপত্তাকর্মী বাড়াতে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে একাধিক মিটিংয়ের পরও ব্যবস্থা না নেওয়ার অভিযোগ এসেছে। তদন্তে ১৮ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের পর জাহাঙ্গীরসহ দু'জন অভিযুক্ত ও পাঁচজন সন্দেহভাজনকে চিহ্নিত করে কমিটি। বিএফসিসিকে ঘিরে চোরাচালানসহ বিভিন্ন অভিযোগে বিএফসিসি প্রশাসনের পর বিমান প্রশাসনেরও দুই সদস্যের কমিটির তদন্ত চলছে।
সম্পাদনা/ রাহুল রাজ
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।