ছাত্রলীগ কোনো প্রোগ্রাম করার চেষ্টা করলে ব্যবস্থা নেবে পুলিশ

Nasir Uddin | প্রকাশিত: ৩১ জানুয়ারী ২০২৫, ১৫:৪৬

ছবি: সংগৃহীত

নিষিদ্ধ ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ যদি হরতাল দিয়ে নাশকতার চেষ্টা করে তাহলে তা কঠোর হস্তে দমন করা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মোহাম্মদ সাজ্জাত আলী। শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) অমর একুশে বইমেলা ঘিরে ডিএমপি কর্তৃক গৃহীত নিরাপত্তা পরিকল্পনা সংক্রান্ত পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেছেন, হরতালসহ যেকোনো নাশকতা মোকাবেলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে। নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগসহ কেউ যদি হরতালসহ বিভিন্ন কর্মসূচি দিয়ে নাশকতার চেষ্টা করে কঠোর হস্তে দমন করা হবে। ইতোমধ্যে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের অনেক কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা যদি কোনো প্রোগ্রাম করার প্রদক্ষেপ নেয় তাহলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। এ ছাড়া জেলা থেকে জামিনে বের হওয়া অপরাধীদের নজরে রাখা হচ্ছে।

ফেব্রুয়ারি মাসে আওয়ামী লীগ কর্মসূচি দিয়েছে। কর্মসূচি ঘিরে কোনো হামলার শঙ্কা আছে কি না, জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার বলেন, বিভিন্ন জায়গা থেকে তারা প্রোগ্রাম দিচ্ছে। আমরা প্রতিদিনই সেসব মোকাবিলা করছি।

এবারের একুশে বইমেলার নিরাপত্তা ব্যবস্থা তুলে ধরে ডিএমপি কমিশনার বলেন, আমরা প্রতিবারের ন্যায় এবারও কন্ট্রোল রুম স্থাপন করেছি। এখানে সবসময় আমাদের কর্মকর্তারা থাকবেন। সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা তদারকি করবেন রমনা থানার ডিসি। এ ছাড়া র‍্যাব, সিটিটিসি ও অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন সহযোগিতা করবেন।

তিনি বলেন, বইমেলা এলাকা সিসিটিভি দিয়ে নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে আনা হয়েছে। সিসিটিভির মাধ্যমে এলাকাটি তদারকি করা হবে। আজ থেকে ম্যানুয়ালি মানুষের দেহ তল্লাশি চলবে, কেউ যেন মাদক বা কোনো বিস্ফোরক দ্রব্য সঙ্গে নিয়ে মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে না পারেন। এ ছাড়া ডগ স্কোয়াড থাকবে।

মেলায় ট্রাফিক ব্যবস্থার বিষয়ে তিনি বলেন, পুরো মাস টিএসসি থেকে দোয়েল চত্বরের ক্রসিংটি বন্ধ থাকবে। কেবল মেলা চলাকালীন বন্ধ থাকবে। যারা দর্শনার্থী আসবেন, তারা দোয়েল চত্বর হয়ে তিন নেতার মাজারের সামনে পর্যন্ত আসতে পারবেন।

বইমেলা ঘিরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, সার্চলাইট বসানো হয়েছে, যেন কোনো ঘটনা বা দুর্ঘটনা ঘটলে আমাদের নিরাপত্তা জোরদার থাকে। ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কোনো ভারী যান চলাচল করবে না।

বইমেলার ভেতরে ফুডকোর্ট দেওয়া হয়েছে। ফুডকোর্টের দোকানগুলো যেন গলাকাটা দাম না নিতে পারে, সেজন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগকে নজদারির মধ্যে রাখার আহ্বান জানান তিনি।

শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, বইমেলা যেন বাণিজ্য মেলার মতো না হয়। বাণিজ্য মেলায় সবকিছুর তিনগুণ দাম রাখা হয়। এটা তো ঠিক নয়। পাঁচ টাকার একটি জিনিসের দাম ছয়-সাত টাকা হতে পারে, ১৫ টাকা নেওয়া অগ্রহণযোগ্য। সরকারের অনেক বিভাগ আছে, তারাও যেন তদারকি করে।

‘উসকানিমূলক বই’ প্রকাশ নিয়ে তিনি বলেন, আমরা বাংলা একাডেমির সঙ্গে বসেছি। এ বছর কোনো উসকানিমূলক বই বের হয় কি না, তা আমরা খেয়াল রাখব। সামনের বছর থেকে যেন আগেই পাণ্ডুলিপি নেওয়া হয়, আমরা সে অনুরোধ করেছি। তারা আগামী বছর থেকে যাচাই-বাছাই করবে।

দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে, সরকারকে অস্থিতিশীল করে এমন কোনো বই যেন বইমেলায় না আসে, ডিএমপি বাংলা একাডেমির প্রতি সে অনুরোধ জানিয়েছে বলে জানান তিনি।

ঢাকা শহরের ট্রাফিকের অবস্থা নিয়েও কথা বলেন ডিএমপি কমিশনার। তিনি ছোটখাট দাবি নিয়ে রাস্তা বন্ধ না করতে আন্দোলনকারীদের প্রতি আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, ঢাকা শহরের ট্রাফিক অবস্থা বেশ নাজুক। মানুষ কষ্ট পায়। আমিও কষ্ট পাই। ছোটখাট দাবি-দাওয়া দিয়ে রাস্তা বন্ধ করবেন না। আপনারা ফুটপাতে দাঁড়িয়ে মানববন্ধন করেন। রাস্তা বন্ধ করে দিলে একজন বয়স্ক মানুষ কিংবা একজন অসুস্থ মানুষ যেতে পারেন না।

তিনি বলেন, আমরা আমাদের পেশাগত দায়িত্ব পরিবর্তন করেছি। আমি কোনো ব্রিটিশ পুলিশ কমিশনার নই। আমি কলোনিয়াল পুলিশ কমিশনারের ন্যায় আচরণ করব না। সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ঢাকা কলেজের ঘটনায় আমি বারবার বলেছি, আমরা কোনো লাঠিচার্জ করব না। রক্তক্ষয়ী সংঘাত ঠেকাতে একটি-দুটি সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাস ছোড়া হয়েছে। আমরা আপনাদের মারতে চাই না, আমরাও মরতে চাই না।

বিভিন্ন স্থানে যেসব আন্দোলন হচ্ছে, তার পেছনে কোনো রাজনৈতিক মহলের হাত আছে কি না জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার বলেন, এ রকম কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই।

রাজধানীর নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে তিনি বলেন, ঢাকা শহর পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ শহর। এখানে প্রায় আড়াই কোটি মানুষ বাস করে। আমি তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে চেষ্টা করি। সবসময় যে সফল হই, সে দাবি করব না। কিন্তু গণমাধ্যমের প্রতি আমার অনুরোধ এমন কোনো খবর প্রকাশ করবেন না, যা জনমনে অনিরাপত্তা সৃষ্টি করে।




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top