আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের প্রস্তুতি ও স্থায়ী সংস্কারের কাজ চলছে- ইউনূস
আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশিত: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২২:০৭

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে বাংলায় দেওয়া ভাষণে বলেছেন যে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি চলার পাশাপাশি দেশজুড়ে ব্যাপক ও টেকসই প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার চালিয়ে যাচ্ছে প্রশাসন।
ড. ইউনূস শুক্রবার রাতে সাড়ে ৯টায় দেওয়া ভাষণে বলেন, গত জুলাইয়ে সংঘটিত গণঅভ্যুত্থানের প্রথম বার্ষিকী পালন করা হয়েছে; সেই আন্দোলনে তরুণ সমাজ স্বৈরাচারকে পরাভূত করে একটি বৈষম্যমুক্ত ও ন্যায়বিচারভিত্তিক রাষ্ট্রগঠনের লক্ষ্যে যাত্রা শুরু করেছে। তিনি বলেন, ভাঙাচোড়া রাষ্ট্র কাঠামোকে পুনর্গঠন করে জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করার জন্য ব্যাপক সংস্কারের প্রয়োজন ছিল—এ জন্যই অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই পথে হাঁটতে তারা বেছে নিয়েছেন।
প্রধান উপদেষ্টা আরও জানান, একটি ভারসাম্যপূর্ণ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলাই তাদের মূল লক্ষ্য, যাতে ভবিষ্যতে আর কোনো স্বৈরশাসক বা ক্ষমতাবঞ্চিত নেতা দেশের গণতান্ত্রিক স্বরূপ ক্ষুণ্ণ করতে না পারেন এবং রাষ্ট্রের রক্ষকরা জনকল্যাণে বিশ্বাসী থাকেন।
সংশোধনী কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য তিনি বলেন, সরকার ১১টি স্বাধীন সংস্কার কমিশন গঠন করেছে, যারা জনমত যাচাই ও গভীর বিশ্লেষণের মাধ্যমে বিস্তারিত সংস্কার প্রস্তাবনা দিয়েছে। এসব প্রস্তাব টেকসইভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে একটি জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনও গঠন করা হয়েছে, যেখানে ৩০টিরও বেশি রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে আলোচনা করে দলমত নির্বিশেষে সামাজিক অঙ্গীকার তৈরি করা হয়েছে। এর ফল হিসেবে জুলাই ঘোষণার মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোও সময়াবদ্ধভাবে সংস্কার বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করেছে—তাই আগামী নির্বাচনে যে দলই জনগণের সমর্থন পাক না কেন, সংস্কারের অগ্রযাত্রায় অনিশ্চয়তার অবকাশ থাকবে না, বলেন ড. ইউনূস।
মানবাধিকার এবং জবাবদিহিতার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করে তিনি বলেন, দায়িত্ব নেওয়ার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনারকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল মাঠভিত্তিক তদন্তের জন্য। হাইকমিশনারের তদন্তমূলক রিপোর্ট ও সুপারিশগুলো জাতীয় সংস্কারের অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া গুম সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক কনভেনশনে যোগদান, নির্যাতনবিরোধী কনভেনশনের ঐচ্ছিক প্রোটকল গ্রহণসহ স্বাধীন প্রতিরোধমূলক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার জন্যও কাজ চলছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনারের তিন বছরের স্থায়ী মিশন চালুর অনুমোদন দেয়া হয়েছে এবং সেটিও ইতোমধ্যেই কার্যক্রম শুরু করেছে—যা মানবাধিকার সুরক্ষায় সহায়তা করবে, বলেছেন তিনি।
অর্থনীতিতে জবাবদিহিতার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, বিগত দেড় দশক ধরে দুর্নীতির কারণে দেশের অর্থনীতি ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে এবং জনগণের সম্পদ অজুহাতে নানা অবকাঠামো প্রকল্প কেবল ক্ষতি করেছে। দুর্নীতি বন্ধে ও অর্থনৈতিক পুনর্গঠনে জাতীয়ভাবে কঠোর কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, রাজস্ব আহরণের ব্যবস্থার সংস্কার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ—রাজস্ব নীতি নির্ধারণ ও বাস্তবায়ন সংস্থাকে পৃথক করার জন্য আইন প্রণয়ন করা হয়েছে, যাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে এবং রাজস্ব সংগ্রহ বৃদ্ধি পাবে।
অবৈধ সম্পদ ফেরত দেয়ার বিষয়ে তিনি আন্তর্জাতিক সহায়তা ও নীতি পরিবর্তনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। গত ১৫ বছরে দুর্নীতির মাধ্যমে বিদেশে পাচার হওয়া শত শত কোটি ডলার দেশে ফিরিয়ে আনা তাদের শীর্ষ অগ্রাধিকার। সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর আইনি প্রক্রিয়া ও নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে এ প্রচেষ্টা জটিল হয়েছে—তাই তিনি ওই দেশগুলোকে আহ্বান জানান, তারা যেন পাচারকৃত সম্পদ গচ্ছিত না করে প্রকৃত মালিকদের নিকট ফিরিয়ে দেয়। পাশাপাশি তিনি আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া ও বৈশ্বিক কর সহযোগিতার কাঠামো সংস্কারের প্রয়োজনীয়তাও তুলে ধরেন।
ড. ইউনূসের ভাষণ থেকে প্রকাশ—অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনের প্রস্তুতি রাখলেও দেশের অনির্দিষ্ট সমস্যা সমাধানে স্থায়ী, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সময়ানুগ সংস্কারের ওপর জোর দিচ্ছে এবং এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহযোগিতাকে অপরিহার্য মনে করছে।
সম্পাদকীয় নোট: ভাষণ থেকে উদ্ধৃত বক্তব্য ও নীতিগত সিদ্ধান্ত সংক্ষেপে উপস্থাপন করা হয়েছে; বিস্তারিত উদ্ধৃতি বা প্রস্তাবনার পূর্ণাঙ্গ তালিকার প্রয়োজন হলে মূল বক্তব্যের ট্রান্সক্রিপ্ট বা অফিসিয়াল ব্রিফিং থেকে আলাদা প্রতিবেদন করা যেতে পারে।
বিষয়:
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।