সরকারি চাকুরেদের আরো ছাড়!

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ১০ মার্চ ২০২১, ১৮:৩৩

সরকারি চাকুরেদের আরো ছাড়!

সরকারি চাকরি আইন অনুযায়ী কোনো সরকারি কর্মচারী অবসরে যাওয়ার পর গুরুতর অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত হলে তার অবসর সুবিধা আংশিক বা সম্পূর্ণ বাতিল করার সুযোগ আছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। তবে আইনের এ সংক্রান্ত উপধারাটি বাতিল করার জন্য সুপারিশ করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

উপধারাটি বাতিলের সুপারিশ আসায় উদ্বেগ জানিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট অনেকে। তাঁরা বলছেন, এটি করা হলে দুই বছর আগে প্রণীত সরকারি কর্মচারী আইনটি আরো দুর্বল হয়ে পড়বে। তাঁদের যুক্তি হচ্ছে, একজন সরকারি কর্মচারী কবরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত পেনশনসহ বিভিন্ন ধরনের সরকারি সুযোগ-সুবিধা পান। তিনি মারা গেলে তাঁর পরিবারও অনেক সুবিধা পায়। তাই অবসরে গেলেও তাঁদের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণের একটা সুযোগ থাকা দরকার, যাতে তাঁরা কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে না জড়ান।

স্বাধীনতার দীর্ঘ ৪৭ বছর পর ২০১৮ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে সরকারি কর্মচারী আইনটি প্রণয়ন করা হয়। কার্যকর হয় ২০১৯ সালের ১ অক্টোবর। এই আইনে সরকারি কর্মচারীদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে সরকারের অনুমোদন নেওয়ার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়। কিন্তু সেই সমালোচনা আমলে নেওয়া হয়নি। এই বিধান আইনে থাকায় আইনটি দুর্বল হয়েছে দাবি করে তা সংশোধনের দাবি জানিয়েছিল ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়, এর মাধ্যমে কার্যত দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনকে দুর্বল করা হয়েছে। এখন আইনটি সংশোধনের ক্ষেত্রে সরকারি কর্মচারীদের অবসরে যাওয়ার পর অপরাধ করার বিষয়ে ‘সাতখুন মাফ’ জাতীয় মানসিকতা প্রশ্রয় পেলে সমাজে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।

সরকারি চাকুরে আইনের ‘অবসর সুবিধা স্থগিত, প্রত্যাহার ইত্যাদি’ শীর্ষক ৫১ ধারার ৪ উপধারায় বলা আছে, ‘অবসর সুবিধাভোগী কোনো ব্যক্তি গুরুতর অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত বা কোনো গুরুতর অসদাচরণে দোষী সাব্যস্ত হইলে, কারণ দর্শাইবার যুক্তিসংগত সুযোগ প্রদান করিয়া, সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ তাহার অবসর সুবিধা সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে বাতিল, স্থগিত বা প্রত্যাহার করিতে পারিবে।’

জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব ফিরোজ মিয়া বলেন, এই বিধান বাতিল করা কোনোভাবে উচিত নয়। সরকারি চাকরিতে ঢোকা ব্যক্তি ও পরিবার সব সময় সরকারি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে। একজন ব্যক্তি অবসরে যাওয়ার পর যদি ধর্ষণ, হত্যাকাণ্ডের মতো অপরাধে যুক্ত হয়ে যান তখনো তাঁর কেন সরকারি সুযোগ-সুবিধা বহাল রাখতে হবে? এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি বলেন, ‘এই উপধারাটি বড় আকারের একটি জনগোষ্ঠীকে অপরাধ না করার জন্য কাজ করছে। এটা তুলে দেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা থাকতে পারে না।’

এনএফ৭১/আরএইচ/২০২১




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top