রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১

ফুলের রাজ্য গদখালি

ডেস্ক রিপোর্ট | প্রকাশিত: ১ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৩:৫৮

নিজস্ব প্রতিবেদক: যেদিকে দু’চোখ যায় শুধু ফুল আর ফুল। মনে হবে যেন ফুলের রাজ্য- ফুলের চাদরে ঢাকা; ফুলের মেঘে চেপে আপনি ভাসছেন। চোখ বুজে চিন্তা করুন তো, আপনি একটা গ্রামের রাস্তা ধরে হাঁটছেন। যেখানে পথের দুইপাশে নানা রং-এর ফুল ফুটে আছে আর ফুলে ফুলে উড়ছে রঙিন প্রজাপতি।

বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে নানা বর্ণের, নানা গন্ধের ফুলের ছড়াছড়ি। তাতে নাম না জানা পাখিদের ওড়া-উড়ি আর মৌ মাছিরা ফুলে ফুলে উড়ে মধু সংগ্রহ করছে। হেঁটে হেঁটে পথ যেতে যেতে দু’হাতকে প্রসারিত করে ধরুন। নিজেকে খুঁজে পাবেন এক উড়ন্ত পাখির বেশে। ভেবে বলুন তো এমন মনোরম পরিবেশে মন কী বিষন্ন হয়ে থাকবে! এই বর্ণিল পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে ইচ্ছে করবে! জীবনের রংগুলোকে আরও রঙিন করে নিতে চান? বেঁচে থাকার আসা আর জীবনের রং খুঁজে পেতে কে না চায়? তাহলে যশোরের বেনাপোলগামী বাসের একটা টিকেট কেটে গদখালি ঘুরে আসুন। হ্যাঁ বলছি দেশের স্বাধীনতা ইতিহাসের সাথে অতপ্রতভাবে জড়িত সেই জেলা যশোরের কথা। যশোর জেলা শহর থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে যশোর-বেনাপোল সড়কের দক্ষিণ-পশ্চিমে ঝিকরগাছা থানা।

১৯৮২ সালে প্রথম ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালিতে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষ শুরু হয়। এখন দু’টি থানার আশপাশের ৯০টি গ্রামে ফুল চাষ করা হয়। ঝিকরগাছা, শার্শা ছাড়াও যশোরের মনিরামপুর, কেশবপুরেও বাণিজ্যিকভাবে ফুলের চাষ হচ্ছে। প্রায় সাড়ে চার হাজার বিঘা জমিতে স্থানীয় কৃষকরা ফুল চাষ করে থাকেন। প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার ফুল উৎপাদন হয় এই গদখালিতে। প্রথম দিকে বছরের নির্দিষ্ট কয়েক মাসে ফুল চাষ হলেও এখন প্রায় সারা বছরই ফুল চাষ হয়ে থাকে।

দেশের ৭০-৭৫ ভাগ ফুলের চাহিদা পূরণ হয়ে থাকে যশোরের ফুল থেকে। যশোরের জেলার গদখালী ইউনিয়নের পানিসারা, হাড়িয়া, কৃষ্ণচন্দ্রপুর, পটুয়াপাড়া, সৈয়দপাড়া, মাটিকুমড়া, বাইসা, কাউরা ও ফুলিয়া গ্রামের প্রতিটি মাঠেই শত শত বিঘা জমি নিয়ে গাঁদা, গোলাপ, গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, জারবেরা, কসমস, ডেইজি জিপসি, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকাসহ আরো বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের চাষ হয়। এখানকার জারবেরার মান চায়নার চেয়েও ভালো। আর গ্লাডিওলাস ও রজনীগন্ধার মান ভারতের চেয়েও উন্নত মানের।

প্রতিবছর এই জেলায় ১২০ কোটি পিস ফুল উৎপাদিত হয়। মাঠের পর মাঠে ফুটে আছে ফুল আর ফুল। লাল, হলুদ গোলাপী, সাদা নীল হরেক রঙের ফুল। যেন এক বাহারি ফুলের রাজ্য এটি। বাতাসে ফুলের সৌরভ আর ফুলে ফুলে উড়ছে রঙিন প্রজাপতি। বাহরি রঙের ডানা মেলে ধরেছে তাতে। বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে নানা বর্ণের, নানা গন্ধের ফুলের ছড়াছড়ি। নাম না জানা অনেক পাক-পাখালিরা ওড়াউড়ি করছে গাছের ডালে ডালে, ফুলে ফুলে। পাখিদের কলকাকলিতে মুখরিত মুহুর্ত যে কাউকেই হারিয়ে নিয়ে যাবে স্বপ্নের রাজ্যে। যেন বাংলাদেশের বুকে এক টুকরো স্বর্গ। এখানকার ফুল চাষিদের মনটা ফুলের মতোই সুন্দর।

যে কোনো বাগানে ঢুকে ইচ্ছে মতো ঘুরে বেড়ান, ছবি তুলুন, পছন্দমতো কয়েকটা ফুল তুলুন; কেউ কিছু বলবে না। বরং আপনার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি একটা হাসি দিবে। তবে ফুলের বাগানে ঢোকার আগে অবশ্যই চাষিদের অনুমতি নিবেন। দিগন্ত জুড়ে রঙের সমাহার ছড়িয়ে এক বিস্তীর্ণ চাদর যেন বিছিয়ে রেখেছে আপনারই জন্য। এখানকার চাষিরা জমিতে ফুল চাষই করে থাকেন। মাঠের পর মাঠ জোড়া শুধু ফুলের ক্ষেত। পুরো গ্রাম জোড়া শুধু ফুলের সুভাস। এখানকার ফুলই তাদের ফসল। আর প্রজাপতির ডানার সৌন্দর্য যেন অপূর্ব এক সৌন্দর্য্য সৃষ্টি করেছে। এমন মনোমুদ্ধকর পরিবেশে নিজেকে হারিয়ে নিয়ে যাবেন। মনে হবে যেন এক ইউরোপেরই কোন ফুল বাগান। কিন্তু এমন দৃশ্য বাংলাদেশেই রয়েছে। ফুলের স্বর্গে এমন নির্মল পরিবেশে নিজেকে হারাতে চাইলে যেতে হবে যশোরের বেনাপোলগামী বাসের একটা টিকেট কেটে গদখালিতে। সেখানেই মিলবে জীবনের রং, বেঁচে থাকার আশা।

গদখালী যাওয়ার সবচেয়ে ভালো সময় জানুয়ারি ফেব্রুয়ারি মাস। ঢাকা থেকে সড়ক, রেল ও আকাশপথে যশোর যাওয়া যায়। যশোর বাস স্ট্যান্ড থেকে রিক্সা নিয়ে চলে যান লোকাল বাস স্ট্যান্ডে। এখান থেকেই পেয়ে যাবেন গদখালি যাবার বাস। গদখালি নেমে ক্ষেত দেখার জন্য ভ্যান নিয়ে নিতে পারেন। ভ্যান ভাড়া নিবে ১০০-১৫০ টাকা। গ্রামের রাস্তা দিয়ে যাবার সময় রাস্তার দুপাশে চোখে পড়বে ফুলের ক্ষেত।

বাসস্ট্যান্ডের রাস্তার পাশেই সকালে বসে দেশের সর্ববৃহৎ ফুলের পাইকারি বাজার। গদখালী বাজারের ফুল ব্যবসায়ীরা জানান, এ বাজারে গোলাপ এক টাকা পিস, একশ রজনীগন্ধা একশ থেকে দেড়শ টাকা, এক হাজার গাঁদা দুইশ টাকা, গ্লাডিওলাস ছয় থেকে আট টাকা, জারবেরা তিন থেকে আট টাকায় বিক্রি হয়। থাকার জন্য যশোর শহরকেই বেছে নিতে হবে। সেখানে থাকা এবং খাবারের জন্য হোটেল পেয়ে যাবেন। বেশ ভাল মানেরই হোটেল পাবেন। সাথে যশোরের বিখ্যাত খেজুরের রসের ও স্বাদ নিয়ে আসতে পারবেন।

এনএফ৭১/এনএম/২০২০



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top