জীবনে প্লাস্টিকের প্রভাব কতটা ভয়াবহ, জানলে অবাক হবেন
নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৭:৩৭

হাত থেকে পড়ে গেলে সহজে ভাঙে না। পরিষ্কার করাও সহজ। ব্যবহারের কী দারুণ সুবিধা। সব জায়গাতেই প্লাস্টিকের ছড়াছড়ি। প্লাস্টিকের ব্যবহার ছাড়া জীবন চিন্তাই করা যায় না। বলা যায় প্লাস্টিক জীবনের সাথে মিশে আছে। কম বেশি সব কিছুতেই প্লাস্টিকের ব্যবহার চলছে। কিন্তু জানেন কী। প্লাস্টিক এখন দুঃস্বপ্নের শামিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। বলা যেতে পারে পরিবেশে প্লাস্টিকের প্রভাব খুব বিধ্বংসী। দিনের পর দিন প্লাস্টিকের ব্যবহার স্বাস্থ্যের পক্ষে কতটা ক্ষতিকর। অনেকেই জানেন না। তো চলুন কিছুটা জেনে নেয়া যাক।
যে প্লাস্টিক একসময় পরিত্যক্ত হয় সেই প্লাস্টিক একসময় মাইক্রোপ্লাস্টিকে পরিণত হয়। এরপর বাতাস, পানি ও খাবারের মাধ্যমে এটা মানুষের দেহে অনুপ্রবেশ করে। এর ফলে ফুসফুস ও কিডনিজনিত নানা রোগ শরীরে বাসা বাঁধে।
প্লাস্টিক ব্যাগ কেমনে তৈরি হয় জানেন। উপকরণগুলোর মধ্যে কী থাকে। থাকে বিসফেনল এ (বিপিএ) ও ফ্যালেটসের মতো রাসায়নিক পদার্থ। আরও থাকে পেট্রোলিয়ামভিত্তিক পণ্য। আর উৎপাদনে প্রয়োজন হয় প্রচুর পরিমাণে জীবাশ্ম জ্বালানি। এগুলোর প্রভাব শুনলে ভয় পেয়ে যাবেন। হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে, শ্বাসকষ্ট, ক্যানসার ঘটায়। প্রজনন সংকটের মতো ঝুঁকিপূর্ণ স্বাস্থ্য জটিলতা বাড়ায়।
অপরদিকে, প্লাস্টিক ব্যাগ যখন পোড়ানো হয় তখন কী ঘটে। কার্বন ডাইঅক্সিন ও ফুরান মিথেনের মতো বিষাক্ত ধোঁয়া নির্গত হয়। এ ধরনের বিষাক্ত গ্যাসগুলো বায়ুমণ্ডলে উন্মুক্ত হয়। আর শ্বাসযন্ত্রকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
পুনর্ব্যবহারের অযোগ্য পলিব্যাগ কী করা হয় জানেন। ব্যবহারের পর সেগুলো পুড়িয়ে ফেলা হয়। তখনো ধোঁয়ার মাধ্যমে নির্গত হয় ক্ষতিকারক গ্যাস। এভাবে পুরো বায়ুমণ্ডলকে বিষাক্ত করে ফেলে প্লাস্টিক। কী ভয়াবহ তাই না।
প্রাণীরা কী ভালো থাকে। মাইক্রোপ্লাস্টিক যেকোনো উভচর প্রাণীর পরিপাকতন্ত্র বিনষ্ট করে দেয়। যার ফলে অপুষ্টি, অনাহার ও শেষ পর্যন্ত মৃত্যুও ঘটতে পারে। ভাসমান প্লাস্টিকের ব্যাগ জেলিফিশ ভেবে ভুল করে সামুদ্রিক কচ্ছপ। যেটি তাদের প্রধান খাদ্যগুলোর একটি। গরু ও হাতির মতো বড় প্রাণীদের পাকস্থলীও প্লাস্টিকের কারণে কার্যকারিতা হারায়।
বেশিরভাগ প্লাস্টিক বর্জ্যের চূড়ান্ত গন্তব্য কোথায় জানেন, সাগর। প্লাস্টিক ব্যাগের ক্ষয়ে যাওয়া অংশ পানিতে দীর্ঘদিন ধরে ভাসতে থাকে। এভাবে সময় যত যায় জলাশয়ের ওপর আবর্জনাযুক্ত বিশাল পাহাড় গড়ে উঠে। এই আবর্জনা স্রোতের সঙ্গে সাগরের খাদ্য-শৃঙ্খলে প্রবেশ করে। আর এভাবেই ক্ষুদ্রতম প্লাঙ্কটন থেকে শুরু করে বিশাল তিমিরও মৃত্যুর কারণ হয়।
মাছ, সামুদ্রিক পাখি ও স্তন্যপায়ী প্রাণীসহ গোটা সামুদ্রিক প্রজাতি এই দানবের শিকার। সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যের জন্য দরকার হয় প্রবাল প্রাচীর। আর সেগুলোকে ঢেকে দেয় প্লাস্টিক বর্জ্য। ফলে সেগুলোতে সূর্যালোক পৌঁছাতে পারে না। বাধার মুখে পড়ে সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া।
তবে কী প্লাস্টিকের মতো দৈত্যের কবল থেকে সহজেই রেহাই মিলবে না। প্লাস্টিক ব্যবহার করলে পৃথিবীর ল্যান্ডফিল কমবে আর ল্যান্ডফিল কমলে কী হবে জানেন। পৃথিবীর তাপমাত্রা কিংবা অস্বাভাবিক জলবায়ু পরিবর্তনের হাত হতে মুক্তি মিলবে আমাদের। পৃথিবী কিন্তু ভালো নেই। তার এই খারাপ সময়ে আমরা কী চুপ করে বসে থাকবো। নিজেরা কী দায়িত্ব নেবো না। আসুন না পালস্টিকের ব্যবহার যতখানি সম্ভব কমানোর চেষ্টা করি।
বিষয়:
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।