ফিক্সিং ঠেকাতে সিআইডির সঙ্গে বিসিবির বৈঠক, কড়া নজরদারিতে আসন্ন বিপিএল
স্পোর্টস ডেস্ক | প্রকাশিত: ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:৫৭
ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট ঘিরে থাকা ফিক্সিংয়ের কালো থাবা থেকে মুক্তি পেতে মরিয়া বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) দীর্ঘদিন ধরেই ম্যাচ ও স্পট ফিক্সিং বিতর্কে জড়িয়ে রয়েছে। সেই কলঙ্ক মুছতেই এবার কড়া নজরদারি ও সমন্বিত উদ্যোগ নিয়েছে বিসিবি।
ফিক্সিং রোধে বিসিবির নবগঠিত ইন্টেগ্রিটি ইউনিটের স্বাধীন চেয়ারম্যান অ্যালেক্স মার্শাল ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছেন। এরই অংশ হিসেবে রোববার (তারিখ উল্লেখযোগ্য হলে যুক্ত করা যাবে) তিনি দেশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রধান ছিবগাত উল্লাহর সঙ্গে বৈঠক করেন। আসন্ন বিপিএল সামনে রেখে দুর্নীতি দমন, নজরদারি ও আইনগত সহায়তার কৌশল নির্ধারণে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
আগামী ২৬ ডিসেম্বর থেকে শুরু হতে যাচ্ছে দেশের একমাত্র ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট বিপিএল। ২০১২ সালে যাত্রা শুরুর পর থেকেই বিভিন্ন সময়ে ম্যাচ ফিক্সিং ও স্পট ফিক্সিংয়ের অভিযোগে বিতর্কিত হয়েছে এই লিগ। এমনকি ২০১৪ সালে টুর্নামেন্ট স্থগিত করতেও বাধ্য হয়েছিল বিসিবি।
২০১৩ সালের বিপিএলে ম্যাচ ও স্পট ফিক্সিংয়ের ঘটনায় জড়িত থাকার দায়ে বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুলকে আট বছরের নিষেধাজ্ঞা দেয় বিপিএল অ্যান্টি-করাপশন ট্রাইব্যুনাল। যার মধ্যে তিন বছর স্থগিত থাকলেও পাঁচ বছর ক্রিকেটের বাইরে থাকতে হয়েছিল তাকে। এসব ঘটনায় বিপিএলের বিশ্বাসযোগ্যতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এই প্রেক্ষাপটে বিপিএলের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) সাবেক অ্যান্টি-করাপশন ইউনিট (এসিইউ) প্রধান অ্যালেক্স মার্শালকে প্রথমে এক বছরের জন্য পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেয় বিসিবি। পরবর্তীতে তাকে বোর্ডের নবগঠিত ইন্টেগ্রিটি ইউনিটের চেয়ারম্যান করা হয়।
বিপিএলের ১১তম আসরে ব্যাপক আকারে ফিক্সিংয়ের অভিযোগ ওঠার পর তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তারা বিসিবিতে প্রায় ৯০০ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আসন্ন বিপিএলের নিলাম থেকে ৯ ক্রিকেটারকে বাদ দেওয়া হয়, যাদের মধ্যে জাতীয় দলের খেলোয়াড়ও রয়েছেন। এই সিদ্ধান্তের পর থেকেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন অ্যালেক্স মার্শাল।
সিআইডি প্রধান ছিবগাত উল্লাহ বৈঠক প্রসঙ্গে বলেন,
‘হ্যাঁ, আমরা পুরো বিসিবি টিমের সঙ্গে বসেছি। তাদের লিগ্যাল প্রতিনিধিরাও ছিলেন। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া এবং আমরা একসঙ্গে কাজ করছি।’
তিনি আরও জানান, সাইবার পুলিশ সেন্টারের (সিপিসি) সঙ্গে যুক্ত সিআইডি কর্মকর্তারাও ফিক্সিং ও অনলাইন জুয়ার মতো বিষয়গুলো নজরদারিতে রাখছেন।
‘আমি বিস্তারিত বলছি না, তবে কিছু আন্তর্জাতিক নীতি ও প্রোটোকল রয়েছে, যেগুলো অনুসরণ করার চেষ্টা করছি। কোথায় ঘাটতি রয়েছে, কোথায় ধূসর এলাকা আছে—সেগুলো চিহ্নিত করে কাঠামো দাঁড় করানো হচ্ছে,’ বলেন তিনি।
ক্রিকেটকে দুর্নীতিমুক্ত রাখার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে ছিবগাত উল্লাহ বলেন,
‘ক্রিকেট আমাদের আবেগ ও ভালোবাসার জায়গা। আমরা চাই এটি যেন কলঙ্কমুক্ত থাকে। সেই লক্ষ্যেই সিআইডি, অ্যালেক্স মার্শাল এবং বিসিবি একসঙ্গে কাজ করছে।’
এবারের বিপিএলের প্রতিটি ফ্র্যাঞ্চাইজির সঙ্গেই সিআইডি কর্মকর্তারা যুক্ত থাকবেন। বাড়তি নজরদারি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্রিয় সম্পৃক্ততা আসন্ন মৌসুমে বিপিএলকে দুর্নীতিমুক্ত রাখতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
বিষয়:

পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।