মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১ মাঘ ১৪৩১

বিপিএলকে কেন্দ্র করে সারাদেশে চলছে রমরমা জুয়ার আসর

রাহুল রাজ | প্রকাশিত: ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ১২:১০

প্রতিকি ফটো

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে ‘জুয়ার জালে’ নিজেদের মাতিয়ে রেখেছে সারাদেশের এক শ্রেণী জুয়াড়ীরা। অলিগলির ছোটখাটো চা দোকান থেকে শুরু করে অভিজাত হোটেলগুলোতে চলছে বিপিএল নিয়ে জুয়ার আসর। কেবল ম্যাচে হার-জিত নিয়েই বাজি নয়, ওভারে ওভারে এমনকি বলে বলে বাজি ধরছেন ছোট-বড় বাজিকররা। বিপিএল ম্যাচ যতই সামনের দিকে গড়াচ্ছে ততই রমরমা হয়ে উঠছে জুয়ার আসর।

প্রতিদিন সারাদেশে কয়েকশত কোটি টাকার হাতবদল হচ্ছে এসব আসরে। অনেকেই সর্বস্ব হারাচ্ছেন। বাজিকররা বেপরোয়া হয়ে উঠলেও প্রশাসন প্রায় নিষ্ক্রিয় থাকায় অনেক প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

অভিযোগ আছে, কোনো কোনো আসর থেকে ‘ভাগ’ চলে যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট থানায়ও।

গতবার বিপিএল নিয়ে জুয়ার টাকা জোগাড় করতে না পেরে এক যুবক আত্মহত্যা পর্যন্ত করেছিলেন চট্টগ্রামে।

ক্রিকেট খেলা নিয়ে জুয়ার আসরকে কেন্দ্র করে রাজধানী ঢাকার বাড্ডায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র খুন হয়েছিল।

বিপিএলকে শুরু হওয়ার আগে থেকেই দেশের বিভিন্ন এলাকায় চা দোকান, অভিজাত হোটেল কিংবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ক্লাব ঘরে টিভির পর্দার সামনে হাজির হন জুয়াড়িরা।

বিপিএল জুয়ার সঙ্গে জড়িতরা বলেছেন, ম্যাচের পাওয়ার প্লেতে কত রান হবে, ৫ বা ১০ ওভারে কত রান হবে, কোন বলে ছক্কা হবে, কে কত উইকেট পাবে কিংবা খেলায় কোন দল জিতবে এসব নিয়ে হাজার টাকা থেকে লাখ টাকার বাজি ধরছেন জুয়াড়িরা। বেশির ভাগ জুয়াড়ি বিপিএলে বাজি ধরছে ‘বেট ৩৬৫’ সফটওয়্যার ব্যবহার করে। এটি বেশির ভাগ সময় শিক্ষিত জুয়াড়িরা ব্যবহার করে থাকেন।

খেলা শেষে কেউ কেউ পকেট ভর্তি করে বাসায় ফেরেন। আবার কেউ হয়ে যান নিঃস্ব। সারাদেশের রিকশাচালক, ট্যাক্সিচালক থেকে শুরু করে খেটে খাওয়া দিনমজুররাও জুয়ায় মেতে উঠেছেন। থেমে নেই বাস শ্রমিক-ট্রাক শ্রমিকরাও। এসব জুয়ার আসরে দিনে অন্তত দেড়শত থেকে দুইশত কোটি টাকা হাতবদল হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে।

এদিকে গতবছর চট্টগ্রাম বাকলিয়া আহমুদ্যা কলোনি এলাকায় বিপিএলের জুয়ার টাকা জোগাড় করতে না পেরে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন মো. রাসেল (২২) নামে এক যুবক। বাজি ধরে বিপুল অঙ্কের টাকা হারানোর পর হতাশা এবং নতুন করে জুয়ার টাকা জোগাড় করতে না পারায় ওই যুবক আত্মঘাতী হন বলে পুলিশ ও এলাকাবাসী নিশ্চিত করেছিল। সারাদেশে ১৫-২৮ বছর বয়সী কিশোর-যুবকরা ক্রিকেট জুয়ায় মেতে উঠছেন বেশি। ধনীর দুলালরা বাজি ধরেন মোবাইলের মাধ্যমে ক্ষুদে বার্তা দিয়ে। তাদের বাজি ধরার ধরনও ভিন্ন এবং বাজেটও বড়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাজিকর জানান, বিভিন্ন স্থানে বিপিএল ঘিরে গড়ে ওঠা অস্থায়ী জুয়ার আসরগুলোতে সর্বনিন্ম দুই লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত হাতবদল হচ্ছে। সন্ধ্যার পরপরই টিভি সেটের সামনে জুয়াড়িরা ভিড় করছেন। বাজিকরদের মাধ্যম হিসেবে টাকা জমা, আদান-প্রদানসহ বাজি ধরার টাকা তাদের পছন্দের তৃতীয় ব্যক্তির কাছে জমা রাখা হয়।

শফিকুল ইসলাম নামে অপর এক জুয়াড়ি জানান, তিনি বিপিএল ক্রিকেট জুয়ায় বাজি ধরেন। প্রতিটি খেলায় ও প্রতিটি ওভারে বাজি ধরা হয়। তিনি বলেন, বাজি ছাড়া এখন বিপিএল ম্যাচ দেখতে ভালো লাগে না। শর্ট ভার্সনের ম্যাচ মানেই বাজি থাকতে হয়। না হয় খেলা দেখতে মন চায় না। ব্যাপক আকারে জুয়া ছড়িয়ে পড়ায় তা সামাজিক সমস্যায় রূপ নেয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এগুলো দ্রুত বন্ধ হওয়া জরুরি- বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

ক্রিকেট জুয়া প্রসঙ্গে ডিএমপির অতিরিক্ত উপকমিশনার (মিডিয়া) জানান, সমন্বয় সভায় কমিশনার মহোদয় কড়া আদেশ দিয়েছেন। কোথাও বিপিএল নিয়ে জুয়ার আসর বসলে সঙ্গে সঙ্গে অভিযান চালানোর জন্য বলেছেন।

প্রকাশ্যে যেসব জুয়ার আসর বসছে সেখানে পুলিশের অভিযান যথারীতি চলছে। অলিগলিতে বা চা দোকান রেস্টুরেন্টে বিপিএল ক্রিকেট নিয়ে জুয়া চলছে কিনা এমন খবরাখবর নেয়া হচ্ছে। এ ধরনের কোনো তথ্য পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অভিযান চালানো হবে।




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top