রাজশাহীতে রেললাইন অবরোধ করে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ৮ জুলাই ২০২৪, ১৬:৩৮

ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহীতে গাছের গুঁড়ি ফেলে রেললাইন অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সরকারি চাকরিতে জারি করা ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহাল ও কোটাপদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভ করছেন তারা। 

আজ সোমবার (৮ জুলাই) দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদ ভবন সংলগ্ন ফ্লাইওভার এলাকার রেললাইন অবরোধ করে অবস্থান শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। এতে রাজশাহীর সঙ্গে সারা দেশের ট্রেন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। ইতোমধ্যে তিনটি ট্রেন আটকে গেছে। শিক্ষার্থীরা দ্রুত রেললাইন না ছাড়লে সিডিউল বিপর্যয় হবে বলে জানিয়েছে রাজশাহী রেলওয়ে।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, শুধুমাত্র প্রতিবন্ধী ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর বাইরে অন্য সব কোটা বাতিলের পক্ষে তারা। এ সময় দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ না ছাড়ার হুঁশিয়ারিও দেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও বৈষম্যমূলক কোটা সংস্কার করতে হবে। সেক্ষেত্রে সংবিধান অনুযায়ী কেবল অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা যেতে পারে। সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিক ভোগের সুযোগ এবং কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দিতে হবে।

রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন ম্যানেজার আব্দুল করিম বলেন, শিক্ষার্থীদের ধর্মঘটের কারণে আন্তঃনগর ধূমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেন হরিয়ানা রেলস্টেশনে এবং কপোতাক্ষ এক্সপ্রেস ট্রেন সারদাহ রোড রেলস্টেশনে আটকা পড়েছে। এ ছাড়া রাজশাহী রেলস্টেশনে আন্তঃনগর বরেন্দ্র এক্সপ্রেস ট্রেনটি দাঁড়িয়ে আছে। শিক্ষার্থীরা অবিলম্বে রেললাইন না ছাড়লে অনেক ট্রেনের শিডিউলে বিপর্যয় ঘটবে। যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়বে।

এর আগে বেলা ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের প্যারিস রোডে জড়ো হতে থাকেন। বেলা ১১টা ২০ মিনিটের দিকে একটি মিছিল বের করেন তারা। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন হল ও সড়ক প্রদক্ষিণ করে দুপুর ১২টায় কৃষি অনুষদ ভবনসংলগ্ন ফ্লাইওভার এলাকার রেললাইন অবরোধ করে। বিকাল ৩টার দিকে এই প্রতিবেদন লেখার সময় আন্দোলনকারীরা সেখানে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছিলেন। এ সময় রেললাইন সংলগ্ন সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন হল থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে জমায়েত হন। সেখান থেকে সম্মিলিত মিছিল নিয়ে এসে রেলপথ অবরোধ করেন।  এ সময় ‘মুক্তিযুদ্ধের মূলকথা, সুযোগের সমতা’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘আঠারোর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’,‘মুক্তিযুদ্ধের বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’- এমন সব স্লোগান দেন। 

শিক্ষার্থীরা চারটি দাবি উত্থাপন করে আন্দোলন করছেন। দাবিগুলো হলো ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে সরকারি চাকরিতে কোটাপদ্ধতি সংস্কার, কোটায় প্রার্থী না পাওয়া গেলে মেধা কোটায় শূন্যপদ পূরণ; জীবদ্দশায় সব ধরনের সরকারি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় একবার কোটার ব্যবহার (এর মধ্যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা অন্তর্ভুক্ত); প্রতি জনশুমারির সঙ্গে অর্থনৈতিক সমীক্ষার মাধ্যমে বিদ্যমান কোটার পুনর্মূল্যায়ন নিশ্চিত এবং দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা।

আন্দোলনকারীরা জানান, সারা দেশের কোটাবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে তারা এক দফা দাবিতে একমত পোষণ করেছেন। দাবিটি হলো, সরকারি চাকরির সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লিখিত অনগ্রসর গোষ্ঠী ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের জন্য কোটাকে ন্যায্যতার ভিত্তিতে ন্যূনতম পর্যায়ে এনে সংসদে আইন পাস করে কোটাপদ্ধতি সংস্কার করতে হবে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) কোটাপদ্ধতি সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক ও রাকসু আন্দোলন মঞ্চের সদস্যসচিব আমানুল্লাহ আমান বলেন, তারা রেললাইন অবরোধ করে শান্তিপূর্ণ অবস্থান করছেন। রাষ্ট্রীয় সম্পদের যেন কোনো ক্ষতি না হয়, সেদিকে তারা লক্ষ রাখছেন।



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top