রাতে খাদ্য সহায়তার থলে নিয়ে ছোটেন তারা
নীলফামারী থেকে | প্রকাশিত: ২ আগষ্ট ২০২১, ০১:৫৪
ওরা ১১ জন। রাতেই বের হন তারা। এক একজনের হাতে খাদ্য সহায়তার প্যাকেট। আছে চাল, ডাল, আটা, তেল, আলুসহ অন্যান্য খাদ্য সামগ্রী। লকডাউনে পরিস্থিতির শিকার নিম্নবিত্ত্ব, মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর বাসায় গিয়ে খাদ্য সহায়তার প্যাকেট তুলে দিচ্ছে তারা। তারা ‘আমাদের প্রিয় সৈয়দপুর’ নামক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্য। তাদের এই খাদ্য সহায়তার কাজে নেই কোন আনুষ্ঠানিকতা।
নীলফামারীর সৈয়দপুরে করোনাভাইরাসের সংক্রামণ হুর হুর করে বাড়ছে। গড়ে প্রতিদিন ২৫ জন করে আক্রান্ত হচ্ছেন এই উপজেলায়। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে দেওয়া হয়েছে কঠোর বিধিনিষেধ। এতে বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো।
বেশি সমস্যায় পড়েছেন মধ্যবিত্তরা। তারা না পারছেন কিছু চাইতে লক লজ্জার ভয়ে। আর এই লকডাউনের শুরু থেকে সংগঠনের আজিম, সাজু, সামিউল, রাজা, শাহবাজ, জয়, শাহজাদা, জীবন, ইমরান, সাকিব ও নওশাদ আনসারী সহ অন্যান্যরা পরিস্থিতির শিকার এসব পরিবারগুলোকে তাদের সামর্থনুযায়ী রাতে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিচ্ছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, রাতে সৈয়দপুর শহরের গোলাহাটের বিভিন্ন পাড়ায় ঘুরছে তারা। তাদের প্রত্যেকের হাতে খাদ্য সামগ্রী ভর্তি এক একটা থলে। লোক লজ্জার ভয়ে চাইতে পারেন না এমন পরিবারের খোঁজ করে তাদের হাতে তুলে দিচ্ছে খাদ্যের সেই থলে।
হাতে সহায়তা পেয়ে পরিস্থিতির শিকার এমন একজন শাকিল। তিনি বলেন, স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে ছোট সংসার। হকারী করি আমি। কিন্তু লকডাউনে সব বন্ধ থাকায় সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছিলাম। চাইতে পারতেছিলাম না কারও কাছে। ভাবতেও পারিনি রাতে ঘুম থেকে উঠিয়ে কেউ খাদ্য সহায়তা দিয়ে যাবে। আল্লাহ তাদের সর্বদা ভাল রাখুক।
সংগঠনের আজিম, সামিউল, রাজাসহ অন্যানরা জানান, আমরা মূলত রাতে বের হচ্ছি এবং লকডাউনের পরিস্থিতিতে যারা আয় রোজগারে বিপাকে পড়েছেন তাদের খাদ্য সহায়তা দিচ্ছি। মূলত সৈয়দপুরের মধ্যে গোলাহাটে বেশি অভাবি মানুষ তাই এই এলাকাকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ‘আমাদের প্রিয় সৈয়দপুর’ এর প্রতিষ্ঠাতা নওশাদ আনসারী বলেন, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরকারের নির্দেশনা মানতে গিয়ে নিম্ন আয়ের মানুষ বেকার হয়ে পড়েছেন। তাঁরা যেন খাদ্য সঙ্কটে না পড়েন, সেজন্য আমরা এই খাদ্য সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করছি। আমাদের সামর্থনুযায়ী খাদ্য সহায়তা প্রকৃত অসহায় মানুষজনের হাতে পৌঁছায় সেটা মাথায় রেখে এ কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। ঈদের আগে ও ঈদের পরে জারিকৃত লকডাউনে এ পর্যন্ত আমরা রাতে বের হয়ে পরিস্থিতির শিকার এরূপ প্রায় দেড় শতাধিক পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছি। এই কার্যক্রম লকডাউন থাকাকালীন পর্যন্ত চলবে।
সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. রমিজ আলম বলেন, ‘আমাদের প্রিয় সৈয়দপুর’ সংগঠনটি নীরবে নিভৃত খাদ্য সহায়তা দিয়ে আসছে আমরা লক্ষ করেছি। খাদ্য সহায়তার যে প্রকৃত হকদার তাদের বাসায় গিয়ে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছে তারা।
এনএফ৭১/এনজেএ/২০২১
বিষয়: নীলফামারী
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।