স্ত্রীকে খুন করে মেডিকেলে মরদেহ রেখে স্বামী পলাতক

সুজন হাসান | প্রকাশিত: ২৩ মে ২০২৪, ১৫:০২

ছবি: সংগৃহীত

নীলফামারী জেলার ডিমলা থানার শালহাটি নাউতারা নামক গ্রামে স্বামীর দ্বারা নির্মমভাবে স্ত্রী খুন। যৌতুকের দাবী ও স্বামীর পরকিয়া আসক্তির কারণে এ ঘটনা ঘটে। নিহতের নাম উম্মান সাদিয়া (৩৩)। নিহতের ঔরষের দুটি ছেলে সন্তান রয়েছে- সাদ (০৮), জুলকিফল (৪)। উম্মান সাদিয়ার বাবার বাড়ী রংপুর জেলার গংগাচড়া থানার পাকুড়িয়া শরীফ গ্রামে।

দীর্ঘ সময়ের সংসার জীবনে অনেক বাঁধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে উম্মান সাদিয়া সংসার আগলে রেখেছিলেন। কিন্তু গত দুই বছর ধরে জাহিদুল ইসলাম লিটন অস্বাভাবিক আচরণ করতে শুরু করে। বিভিন্ন সময় তাকে যৌতুকের জন্য মারপিট ও অত্যাচার করে। ডিমলা থানার অদূরে এক ধূর্ত ডিভোর্সপ্রাপ্ত মহিলা আরজিনা খাতুন আঁখি (পিতা- মো. আব্দুল, মাতা- আহেমা খাতুন) এর সাথে লিটন পরকিয়ায় লিপ্ত হয়।

নিহতের স্বামী জাহিদুল ইসলাম লিটন (৩৬) নিজ বাড়ীতে ১৭ মে তারিখে রাত ১২:০০ টার পর পরিকল্পিত ভাবে কয়েকজন সহযোগী সহ এ নির্মম হত্যাকান্ড সম্পন্ন করেন বলে বোঝা যায়।

জাহিদুল ইসলাম লিটন পেশায় সোনালী ব্যাংক লিমিটেড পিএলসি ডিমলা শাখার অফিসার (ক্যাশ)। তার এগারো ভাই-বোনের মধ্যে সে সবচেয়ে ছোট। হুকুমদাতা হিসেবে তার ভাই মোঃ আশরাফুল -কে অভিযুক্ত করেছেন নিহতের পরিবার। লিটন বিভিন্ন সময় উম্মে সাদিয়ার পরিবারের সদস্যদেরকে মানহানি সহ হত্যার হুমকি ও বিভিন্ন হয়রানি সংকেত দিয়ে আসছে।

মান-সন্মানের ভয়ে নিহতের পিতা-মাতা বিষয়গুলো চেপে গেছে। বারবার অপরাধ করে বারবার ক্ষমা চেয়েছে লিটন। ক্ষমা পেতে পেতে এবং অপরাধ করতে করতে লিটন ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। স্ত্রীকে বিভিন্ন সময় অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ, মারধর সহ ইমোশনাল টর্চার করে। ছোট ছোট অপরাধে পার পাওয়ার অভ্যস্ত হয়ে গেলে মানুষ বড় ধরণের অপরাধে ধাবিত হয়-। সেটাই আরেকবার প্রমাণ হয়ে গেলো উম্মান সাদিয়া খুনের মাধ্যমে।

আনুমানিক রাত ১২ টার পর জাহিদুল ইসলাম লিটন নিহতের পিতাকে মোবাইল ফোনে জানায়, ‘আপনার মেয়ে অসুস্থ; তাকে রংপুর মেডিকেল হাসপাতালে নিবো নাকি আপনার বাসায় নিবো?’ নিহতের পিতা বলেন, ‘অসুস্থ্য হলে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে- বাসায় নয়।’ লিটনের আরেক ভাই রেজাউল করিম জানায়, ‘আপনার মেয়ে ষ্ট্রোক করেছে।’ কিছুক্ষণ পর জাহিদুল ইসলাম লিটন আবার নিহতের পিতাকে জানায়, ‘আমার ছেলেদের মুখের দিকে দেখিয়া আমাকে ক্ষমা করে দিবেন।’

পরবর্তীতে ১৮ মে নিহতের পিতা মোঃ হেফজুর রহমান স্বজনদের নিয়ে ডিমলা থানায় উপস্থিত হয়ে এজাহার (ডিমলা থানার মামলা নং-১৮) দায়ের করেন। ডিমলা থানার ওসি দেবাশীষ কুমার রায় সেটি গ্রহন করেন।

১৮ মে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সুরতহাল প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, “মুখমন্ডলে কালো ছাপ, ডান হাতের কনুইয়ের উপড়ে কালোশিরা দাগ, গলায় ১৩-১৪ ইঞ্চি কালোশিরা দাগ (চিকন রশি দিয়ে টানা), হাত দুটি ছড়ানো (ভেঙে দেওয়া)।” তাতে প্রাথমিক ভাবে প্রমাণ হয়- এটি আত্মহত্যা নয় বরং খুন সংক্রান্ত বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। নিহতের এলাকাবাসী এবং পরিবার লিটন ও সহযোগীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top