ইউএফও নিয়ে মুখ খুললেন নাসা প্রধান
কে বি আনিস | প্রকাশিত: ৮ জুন ২০২১, ০০:৪৩
এক সময় এলিয়েন বিশ্বাসীরা পৃথিবীর আকাশে ইউএফও অর্থাৎ অজানা মহাকাশযান দেখার নানা দাবি করে আসলেও মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা তথা দেশটির সরকার বরাবরই তা দৃষ্টি বিভ্রম বলে উড়িয়ে দিয়েছে। তবে যতোই দিন যাচ্ছে, অন্তহীন এই মহাকাশে প্রাণের সম্ভাবনা ততোই জোরালো হচ্ছে।
পৃথিবীর নিকটতম গ্রহ মঙ্গলে পানির অস্তিত্ব আবিষ্কারের পর নাসা এমন সব তথ্য উপাত্ত পেয়েছে যার ফলে রহস্যময় লাল গ্রহটি নিয়ে সংস্থাটি উঠেপড়ে লেগেছে। শুধু কি মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা? বিশ্বের প্রভাবশালী প্রায় অনেক দেশই এখন মঙ্গল গ্রহ নিয়ে বিশেষভাবে আগ্রহী। এমন কি যে সব দেশের মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র নেই, তারাও আজ মঙ্গল অভিযানে ব্যয় করছে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার।
নাসা'রই বেশ কয়েকজন বিজ্ঞানীর দাবি, মঙ্গলে অতীত বুদ্ধিমান সভ্যতা ছিল। প্রকৃতি অথবা সেই বুদ্ধিমান সভ্যতার ভুলের কারণে আজ গ্রহটির এই লাল দশা। এমন নজির মেলার ফলেই তাদের এমন সিদ্ধান্ত। আমাদের সৌরজগতেরই যদি পৃথিবীর বাইরে প্রাণের সম্ভাবনা জোরালো হয়, তাহলে ব্রহ্মাণ্ডের কোটি কোটি সৌরজগতে কি বুদ্ধিমান প্রাণীর পাদচারণা শুধুই অলিক কল্পনা?
ভিনগ্রহে প্রাণের সম্ভাবনা নিয়ে মার্কিন সরকারের পাশাপাশি বিশ্বের অন্যান্য শক্তিমান দেশগুলো কখনও মুখ না খুললেও গত এক দশকে ফাঁস হয়ে গেছে অনেক গোপন নথিই। সে সব দেশের সরকারে থাকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিও ভিনগ্রহে বুদ্ধিমান মানুষ থাকার সম্ভাবনার কথা এখন প্রকাশ্যেই বলছেন। হালে যেমন নজর কেড়েছে নাসা'র নতুন দায়িত্ব নেয়া বিল নেলসনের কথা।
মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা 'নাসা'র নব নিযুক্ত প্রধান বিল নেলসন সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ভিনগ্রহের বুদ্ধিমান সভ্যতার সন্ধানে তাদের সংস্থাই শুধু নয় যুক্তরাষ্ট্রের অনেক মহলই এখন বেশ আগ্রহী।
সম্প্রতি নৌবাহিনীর ক'জন সদস্য আকাশে অজানা আকাশযান শনাক্তের যে সচিত্র দাবি করেছে, সে ব্যাপারে সাবেক এই ফ্লোরিডা সিনেটর বিল নেলসন এরই মধ্যে তা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। তার মতে, যদি এটা দৃষ্টি বিভ্রম না হয়ে থাকে তাহলে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারেই দেখা উচিৎ। শুধু তাই নয়, পর্যাপ্ত প্রমাণ মিললে ভিন গ্রহীদের অস্তিত্ব সম্পর্কে পূর্বের ধারণাও বাতিল করতে হবে।
সিএনএন'কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে নেলসন আরও বলেন, 'আমরা জানি না সেটা নিছক দৃষ্টি বিভ্রম ছিল কিনা। নাকি আসলেই সেটি ভিনগ্রহের কোনো যান ছিল। যদি ভিনগ্রহের যান হয়, তবে তারা আমাদের শক্র কিনা তাও জানি না। '
সাক্ষাৎকারে তিনি সরাসরিই বলেন, তিনি মনে করেন না যে সেটি নিছকই দৃষ্টি বিভ্রম ছিল। কেননা, তাদের নিরাপত্তা বাহিনীর চৌকশ সদস্যরা এতো বড় ভুল কখনই করবে না। যদি তাই হয়, তাহলে এ বিষয়টি নিয়ে গুরুত্ব সহকারে গবেষণা করার বিকল্প নেই।
এদিকে নাসার প্রেস সেক্রেটারি জ্যাকি ম্যাকগিনিসের বক্তব্যের বরাত দিয়ে দেশটির অপর এক সংবাদমাধ্যম ইউএসএ টুডে জানিয়েছে, নেলসনের নির্দেশের পর নাসার একদল বিজ্ঞানী সব কাজ ফেলে মহাকাশে প্রাণের সম্ভাবনা নিয়ে সরাসরি কাজ শুরু করে দিয়েছে।
অবশ্য নাসা বহু আগে থেকেই ভিনগ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব নিয়ে কাজ করে আসছে। গত ২৫ বছরে সংস্থাটি ভিন সৌরজগতে ৪ হাজারের বেশি গ্রহের কথা জানিয়েছে, যেখানে পৃথিবীর মতো প্রাণের বসবাস উপযোগী আবহাওয়া রয়েছে।
২০২০ সালে ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞানী ক্রিস্টোফার কনসেলিস এক যৌথ গবেষণা প্রতিবেদনে দাবি করেন, এ মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সিতেই অন্তত ৩৬টি উন্নত সভ্যতা থাকার সম্ভাবনা জোরালো।
অবশ্য জনসমক্ষে হালের এই অনুসন্ধানী উদ্যোগকে সরাসরি ভিন গ্রহীদের সন্ধান হিসেবে জানায়নি নাসা। বরং তারা এই অনুসন্ধানের পেছনে 'পৃথিবীর বায়ু মণ্ডলে অদ্ভুত ঘটনার স্বরূপ উৎঘাটন' উদ্দেশ্য হিসেবে বলছে।
এনএফ৭১/কেবিএ/২০২১
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।