বয়স অনুসারে ঘুমের তারতম্য

নিউজফ্ল্যাশ৭১ ডেস্ক | প্রকাশিত: ৩১ জুলাই ২০২১, ২২:০৭

বয়স অনুসারে ঘুমের তারতম্য

একজন মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য ও সুস্থতা বজায় রাখতে ঘুমের প্রয়োজন অপরিসীম। স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির সাইকিয়াট্রি অ্যান্ড বিহেভিয়ারাল সায়েন্সেসের পোস্টডক্টরাল স্কলার ক্রিস্টিনা চিক বলেন, ‘একটা মানুষের জীবনকালের বিভিন্ন ধাপে ঘুমের প্রয়োজন ভিন্ন হয়।’

একজন মানুষের কতক্ষণ ঘুমানো দরকার তার সহজে বলা যায় না। তবে সাধারণত প্রতিরাতে সাত থেকে নয় ঘণ্টা। বয়স অনুসারেও সুপারিশকৃত পরিসর রয়েছে। ঘুমের ঘাটতিতে নানারকম দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি রয়েছে। চলুন জেনে নেই বয়স ভেদে ঘুমের কি তারতম্য রয়েছে।

প্রাপ্তবয়স্কদের: যুক্তরাষ্ট্রের রোগনিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের (সিডিসি) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতিরাতে কমপক্ষে ৭ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত, কিন্তু প্রতি ৩ জনের একজন এমনটা করে না।

ডা. রাজ বলেন, ‘যারা পর্যাপ্ত ঘুমান না তাদের উদ্বেগ, বিষণ্নতা ও আকস্মিক মেজাজ পরিবর্তন বা বাইপোলার ডিসঅর্ডারের ঝুঁকি বেশি। ঘুমের ঘাটতির স্বল্পস্থায়ী পরিণতি ও দীর্ঘস্থায়ী পরিণতি উভয় রয়েছে। একারণে পর্যাপ্ত ঘুমের প্রভূত গুরুত্ব রয়েছে।’

শিশু-কিশোর: শিশুরা বেশি বেশি ঘুমালে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। বরং এটাই ভালো। প্রথম বছরে শিশুরা ১৭ থেকে ২০ ঘণ্টা ঘুমাতে পারে, জানান ডা. রাজ। ডা. চিক বলেন, ‘৪ থেকে ১২ মাসের শিশুদের ১২ থেকে ১৬ ঘণ্টা ঘুমের দরকার আছে।’ মায়ো ক্লিনিকের সাইকিয়াট্রি অ্যান্ড সাইকোলজির সহযোগী অধ্যাপক ভানু কোলা বলেন, ১ থেকে ৩ বছর বয়সী শিশুদের ১১-১৪ ঘণ্টা ঘুমানোর প্রয়োজন আছে। তিনি আরো জানান, ‘৩ থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুদের ১০-১৩ ঘণ্টা এবং ৬ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুদের ৯-১২ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত। কিশোর-কিশোরীদের প্রতিরাতে আট ঘণ্টা ঘুমাতে হবে।’

শিশুরা বয়ঃসন্ধিতে উপনীত হলে দেরিতে ঘুমাতে পছন্দ করে, কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাওয়ার জন্য সকাল সকাল জেগে উঠতে হয়। ফলে তারা যে ঘুমের ঘাটতিতে থাকে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এটা তাদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ডা. রাজের মতে, ‘ঘুমের পরিমাণ যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি ঘুমের মানও বজায় রাখতে হবে।’



কলেজ পড়ুয়া: ডা. কোলা কলেজ পড়ুয়া ও প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতিরাতে ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা ঘুমাতে পরামর্শ দিচ্ছেন। তবে কলেজ পড়ুয়াদের প্রায়সময় ৯ ঘণ্টাই ঘুমানো উচিত। ডা. চিকের কথায় এর সমর্থন পাওয়া যায়, ‘তরুণদের মস্তিষ্ক বিকাশমান রয়েছে বলে তাদের প্রতিরাতে ৯ ঘণ্টা বা আরো বেশি ঘুমানোর প্রয়োজন হতে পারে।’

ব্যতিক্রম: ডা. কোলার মতে, কিছু ব্যতিক্রম মানুষ রয়েছে যাদের ১০ ঘণ্টার বেশি ঘুমানোর প্রয়োজন হতে পারে। আবার কেউ কেউ মাত্র ৪ ঘণ্টা ঘুমিয়েই স্বাভাবিকভাবে কাজকর্ম করতে পারেন। এরা হলো ন্যাচারাল ভ্যারিয়েন্ট।

তবে ডা. চিকের এও বলেছেন, ইনজুরি বা অসুস্থতা থেকে নিরাময়কালে যেকোনো বয়সের প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ৯ ঘণ্টা বা এর বেশি ঘুমের দরকার হতে পারে। এখন করোনাভাইরাসের মহামারি চলছে বলে এ বিষয়টা স্মরণে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পর্যাপ্ত ঘুমালে কোভিড-১৯ থেকে দ্রুত সেরে ওঠা সম্ভব হতে পারে।

গভীর ঘুম সারাদিন জ্ঞানীয় কাজগুলো করতে সাহায্য করে, যেমন- মনোযোগ ধরে রাখা যায়, সবকিছু ঠিকঠাক মনে পড়ে ও সৃজনশীলতা বা উৎপাদনশীলতা বাড়ে। কিছু বিশেষজ্ঞের মতে, পেঁচা হওয়ার চাইতে সকালের পাখি হওয়াই ভালো। অর্থাৎ রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে সকাল সকাল ওঠলে শারীরিক ও মানসিক কল্যাণ বেশি হবে। ডা. চিক বলেন, ‘যদি আপনি পেঁচা হন, কিন্তু সকাল ৮টায় অফিস করতে হবে, তাহলে ঘুমের অভাবে মন ও শরীরের স্বাস্থ্য ভেঙ্গে পড়তে বেশিদিন লাগবে না।’

এনএফ৭১/এনজেএ/২০২১



বিষয়: ঘুম


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top