বৃহঃস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

এমন মহৎ প্রাণের কি মৃত্যু হয়?

সাহসী মহৎ চেতনার উদাহরণ সৃষ্টি করে গেলো ঐশ্বর্য

রাজিউর রেহমান | প্রকাশিত: ২২ জানুয়ারী ২০২৩, ০৬:০২

সারাহ ইসলাম ঐশ্বর্য

কুড়ি বছর বয়সে ঐশ্বর্যর বিশ্ববিদ্যালয়, লাইব্রেরী, বইমেলা, চারুকলা, বৈশাখী মেলা, শপিং মল, ফুচকা চটপটির ভীড়ে বন্ধুদের সাথে মিশে থাকার কথা।কিন্তু সেটা হয়নি।

মাত্র ১০ মাস বয়সে দুরারোগ্য Tuberous sclerosis রোগে আক্রান্ত হয়েছিল সারাহ ইসলাম ঐশ্বর্য। নাম শুনেই বোঝা যায়, এটি দুরারোগ্য কোনো ব্যাধি, যার পূর্ণ চিকিৎসা  হয় না, হলেও আক্রান্তরা দীর্ঘদিন বাঁচে না।

তারপরেও অসীম প্রাণশক্তি নিয়ে ঐশ্বর্য কুড়ি বছর লড়েছে। অবশেষে লড়াইটা থামাতে হলো, প্রাণশক্তি ফুরিয়ে গেলো বলে। তবে জীবনের সমাপ্তিবেলায় সে গেয়ে গেল জীবনেরই জয়গান। ঐশ্বর্য জানতো, তার শেষ পরিণতি  কি হতে চলেছে।

হাসপাতালে চিরশয্যায় ঘুমুতে যাওয়ার আগে মানবিকতায় উজ্জ্বল ঐশ্বর্যময়ী  ঐশ্বর্য  তার দুটি কিডনি এবং দুই চোখের কর্নিয়া দান করে দিয়েছে।

আমাদের দেশে রক্ত দান করে অনেকে। কিন্তু মরণোত্তর দেহ দান, চক্ষু দান, কিডনি দান করার মানুষ নেই বললেই চলে। মৃত্যুর পরেও মানবদেহের কিছু কিছু অর্গান কয়েক ঘন্টা কর্মক্ষম থাকে, যেমন চোখ,কিডনি। এই চোখ একজন অন্ধকে দৃষ্টি দিতে পারে, কিডনি দিতে পারে ডায়ালিসিসে বেঁচে থাকা কোনো ব্যক্তিকে নতুন জীবন।

মৃত্যুর আগেই যদি কেউ লিখিতভাবে মরণোত্তর দেহ দান করার ইচ্ছা প্রকাশ করে, তাহলে তার মৃত্যুর পর তার সুস্থ অর্গানগুলো অন্য জীবিত মানুষের উপকারে আসে।

কিন্তু আমাদের দেশে মরণোত্তর দেহ দানের সংস্কৃতি এখনও চালু হয়নি। এখানেই ঐশ্বর্য বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। মাত্র কুড়ি বছর বয়সে মানব কল্যাণে মরণোত্তর দেহ দান করার সাহসী এবং উদার সিদ্ধান্ত নিয়ে অন্য দশজন থেকে আলাদা একজন হয়ে উঠতে পেরেছে।

তাই ঐশ্বর্য চলে যায়নি, বরং প্রবলভাবে আছে আমাদের মাঝে। তার চোখের কর্ণিয়ায় পৃথিবী দেখবেন দু'জন মানুষ, তার দানকৃত কিডনিতে নতুনভাবে বেঁচে থাকার আনন্দ পাবেন আরও দু'জন।

এমন মহৎ প্রাণের কি মৃত্যু হয়? এমন ঐশ্বর্য কি সবার ঘরে থাকে! সারাহ'র পরিবারের প্রতি রইলো শ্রদ্ধা, গভীর সহানুভূতি, এক সাগর ভালোবাসা।

আমরা গর্বিত এমন এক ঐশ্বর্য আপনাদের ঘরে ছিলো, এমন এক ঐশ্বর্য আমাদের সকলের কাছে প্রগতিশীল উদার সাহসী মহৎ চেতনার উদাহরণ সৃষ্টি করে গেলো। (লেখাটি ফেসবুক থেকে নেওয়া হয়েছে)



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top