কীর্তিমান মহাপুরুষের বিদায়ের ১০ বছর

অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর শায়খে বালিয়া আল্লামা গিয়াছ উদ্দিন (রহ.)

রাজিউর রাহমান | প্রকাশিত: ২ ফেব্রুয়ারী ২০২৩, ১২:১৯

শায়খে বালিয়া আল্লামা গিয়াছ উদ্দিন (রহ.)

শায়খে বালিয়া পীরে কামিল হযরত মাওলানা গিয়াছ উদ্দিন আহমদ পাঠান (রহ.) চলে যাওয়ার ১০ বছর পূর্ণ হলো আজ। শায়খে বালিয়া (রহ.)’র জন্ম ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দের ১১ মার্চে ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার বালিয়া জাহাঙ্গীরপুর গ্রামের পাঠান বাড়িতে। তার পিতা তৈয়্যব উদ্দিন পাঠান ও মাতা হাসান বানু বেগম।

নিজ গ্রামেই প্রাথমিক পাঠ শেষ করেন তিনি। এরপর চলে যান সিলেটে। সেখানে পীরে কামিল হযরত মাওলানা মরহুম নূরুদ্দীন গহরপুরী (রহ.)এর তত্ত্বাবধানে থেকে শিক্ষাদীক্ষার কাজ শেষ করেন। এ উস্তাদের মাদরাসাতেই কর্মজীবন শুরু করেন।

সেখান থেকে তাকে জামিয়া আরাবিয়া আশ্রাফুল উলূম বালিয়ায় নিয়ে আসা হয়। এরপর তার বাকি জীবন বালিয়াতেই শেষ হয়। ওয়াজ নসীহতের মাধ্যমে দেশ বিদেশে তিনি ফুলপুরের সম্মান বৃদ্ধি করেন। তিনি শুধু ফুলপুর নয় বরং বৃহত্তর ময়মনসিংহের একজন কৃতি সন্তান ছিলেন।

তিনি বৃহত্তর ময়মনসিংহ উলামার অভিভাবক ছিলেন। দিনের পর দিন মানুষের জীবন মান উন্নয়নের পাশাপাশি পরকালে কিভাবে নাজাত পাওয়া যায় সে বিষয়ে ফিকির করতেন এই ইসলামিক স্কলার। হাজারো মানুষকে সৎ ও ন্যায়ের পথ দেখিয়েছেন শায়খে বালিয়া (রহ.)। যে কাজ করলে দীনের, নিজের ও দেশের সুনাম বৃদ্ধি পায় সেসব কাজের প্রতি মানুষকে উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করতেন।

কুরআন- হাদীসভিত্তিক জীবন গঠনের মাধ্যমে আলোকিত মানুষ তৈরি করতে আজীবন তার চেষ্টা অব্যাহত ছিল। সমাজবিরোধী বর্বর কর্মকাণ্ডে তিনি ছিলেন প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর। বৃহত্তর ময়মনসিংহ উলামাকে নিয়ে গঠিত ‘ইত্তেফাকুল উলামা’ সংগঠনের মজলিসে শুরার সভাপতি ছিলেন তিনি।

দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনেও তিনি বিশেষ অবদান রেখেছেন। বিশেষ করে সারাজীবন কুরআন-হাদীস নিয়ে গবেষণা করেছেন। মহানবী (সা.)’র পথ ও মত অনুসরণের মাধ্যমে সমাজে আদর্শ ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় লড়ে গেছেন।

ইসলাম বিরোধী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে কেন্দ্র থেকে মিটিং মিছিলের ডাক আসলে শায়খে বালিয়া সিপাহসালার ভূমিকা পালন করতেন। দেশের অর্ধ শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মুহতামিম, সদরুল মুহতামিম, শায়খুল হাদীস ও প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।

শায়খে বালিয়ার প্রিয় উস্তাদ ও পীর নূরুদ্দীন গহরপুরী (রহ.)’র তত্ত্বাবধানে সিলেটে তিনি হাদীস, তাফ্সীর ও ফিকাহ বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি লাভ করেন। এসব বিষয়ের উপর গবেষণা শেষ করে ১৯৬০ সনে নিজ পীরের মাদ্রাসা জামিয়া ইসলামিয়া হুসাইনিয়ায় কর্মজীবন শুরু করেন। পরে মুরুব্বীদের আদেশ ও পীরের হুকুমে ১৯৬৮ সনে তিনি মুহাদ্দিস পদে বালিয়া মাদ্রাসায় যোগদান করেন।

১৯৮০ সনের ২৬ আগস্ট তাকে বালিয়া মাদরাসার মুহতামিম নিয়োগ করা হয়। ২০০০ সন পর্যন্ত তিনি বালিয়া মাদরাসার মুহতামিম ও শায়খুল হাদীস ছিলেন। জীবনের শেষ দিকে তাকে বালিয়া মাদরাসার সদরুল মুহতামিম পদে অধিষ্ঠিত করা হয়। বালিয়া মাদরাসা ছাড়াও তিনি ময়মনসিংহ, ঢাকা, রাজশাহী ও সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন মাদ্রাসার মুহতামিম, শায়খুল হাদীস ও উপদেষ্টা ছিলেন।

২০১৩ সনের ২ ফেব্রুয়ারি ভোররাতে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান এ মহাপুরুষ। শায়খে বালিয়া (রহ.) ৮ পুত্র ও ১৪ কন্যা সন্তানের জনক ছিলেন। মাওলানা ওলীউল্লাহ ও মাওলানা ফরিদ আহমাদ নামে দুই ছেলে ও জিবুন্নাহার, আসমা, নাজমা, সালমা ও হুসনা নামে ৫ মেয়ে জন্ম নেওয়ার পর তার প্রথম স্ত্রী মারা যান।

এরপর ১৯৭৭ সালে তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেন। দ্বিতীয় স্ত্রীর পুত্রসন্তানরা হলেন, নূরুল্লাহ হাফিজ্জি, আতাউল্লাহ হযরতজী, ফয়জুল্লাহ মিয়াজী, ইমদাদুল্লাহ মোল্লাজী, রেজাউল্লাহ নূরুজ্জী ও সানাউল্লাহ শাহজী। কন্যাসন্তানরা হলেন, নাসিমা, বিলকিস, শামীমা, বরকতি, রাহমাতি, তুহফা, জান্নাতি, আতিয়া ও নিয়ামাতি। তাদের মধ্যে জান্নাতি, আতিয়া ও তুহফা নামে তিনজন মারা গেছেন।

ছেলে-মেয়ে ও জামাতারা সবাই ব্যবসা ও শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত। শায়খে বালিয়ার নামে সুলতানের মোড়ে, বাড়িতে ও বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। মৃত্যুর ১০ বছর পরেও তিনি স্মৃতির মিনারে এক কীর্তিমান মহাপুরুষ। 

 

 



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top