কিংবদন্তি অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদি
মঞ্চ থেকে চলচ্চিত্র, অভিনয়ের দুনিয়ায় রাজত্ব করেছেন দুর্দান্ত প্রতাপে
রাজিউর রাহমান | প্রকাশিত: ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৩, ০৯:১৭
২০১২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি। ১১ বছর আগে ঠিক এই দিনে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান বাংলা চলচ্চিত্রের দাপুটে অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদি। কিছু মানুষ আছেন যারা তার চলে যাওয়া এখনো মানতে পারেননি। অন্তত তাদের জন্য মন খারাপের দিন আজ। প্রতি বছর এই দিনে ফাল্গুনের উৎসবে সবাই মেতে থাকলেও ভক্তদের মনে একটা শূন্যতা ঠিকই নাড়া দেয়। বিষাদের ফুল হয়ে ফোটে এই কিংবদন্তিকে নিয়ে।
যখন ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতেন, দেখিয়ে দিতেন একটা সাধারণ জিনিস কীভাবে অসাধারণ করে ফুটিয়ে তোলা যায়। নিজের চরিত্রকে এত অসাধারণভাবে ফুটিয়ে তুলতেন, যেন দর্শকরাও হারিয়ে যেতেন সেই অভিনয়ের মায়াজালে। মঞ্চ থেকে চলচ্চিত্র অভিনয়ের সবখানে তিনি রাজত্ব করেছেন দুর্দান্ত প্রতাপে। কেউ বলেন তিনি অভিনেতাদের অভিনেতা । তার অভিব্যক্তি, অট্টহাসি, ব্যক্তিত্বের ভক্ত কে না ছিলেন!
হুমায়ুন ফরীদি দাপিয়ে বেড়িয়েছেন অভিনয় জগতের প্রত্যেকটি আঙিনায়। সত্তর দশকের মধ্যভাগে মঞ্চ আর টিভি নাটকে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে তার যাত্রা শুরু। পরে চলচ্চিত্র, টেলিভিশন ও মঞ্চে অভিনয় করে অসংখ্য ভক্তের মনে চিরস্থায়ী আসন করে নেন। নায়ক কিংবা খলনায়ক সব চরিত্রেই সমান পারদর্শিতা দেখিয়েছেন তিনি।
ফরীদি ঢাকার নারিন্দায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্গানিক কেমিস্ট্রিতে ভর্তি হলেও মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ায় হাতে তুলে নেন রাইফেল। রণাঙ্গন থেকে ফিরে শুরু করেন শিক্ষাজীবন। ভর্তি হন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে।
অভিনয়ের টানে সাহচর্য নেন সেলিম আল দীনের। 'কেরামত মঙ্গল', 'কীর্তনখোলা', 'মুনতাসির ফ্যান্টাসি', 'হাত হদাই'র মতো ধ্রুপদী নাটকে অভিনয় করে দর্শকনন্দিত হন। সেলিম আল দ্বীনের ‘শকুন্তলা’ নাটকের তক্ষক চরিত্রের মধ্য দিয়ে অভিনয়ে অভিষেক ফরিদীর।
মঞ্চ কাঁপিয়ে টেলিভিশনে অভিষেক ‘নিখোঁজ সংবাদ’ নাটকের মাধ্যমে। কিন্তু কালজয়ী ‘সংশপ্তক’ নাটকের কান কাটা রমজান চরিত্র দিয়ে জয় করে নেন বহু দর্শকের মন। 'কান কাটা রমজান' তাকে নিয়ে যায় অনন্য উচ্চতায়।
তানভীর মোকাম্মেলের ‘হুলিয়া’ সিনেমার মধ্য দিয়ে বড় পর্দায় অভিষেক ঘটে। দাপটের সঙ্গে খল চরিত্রে অভিনয় করলেও ইতিবাচক চরিত্রেও তার অভিনয় ছিল প্রশংসনীয়। ‘হুলিয়া’, ‘জয়যাত্রা’, ‘শ্যামলছায়া’, ‘একাত্তরের যিশু’, ‘আনন্দ অশ্রু’সহ অনেক সিনেমাতে অভিনয় করেছিলেন তিনি। তার সর্বশেষ সিনেমা ‘মেহেরজান’।
হুমায়ুন ফরীদির ব্যক্তিগত জীবনের দর্শনও অনেকের কাছে মুগ্ধতার নাম। আশির দশকে ফরিদপুরের মেয়ে মিনুকে বিয়ে করেন তিনি। এই সংসারে দেবযানি নামে এক কন্যা রয়েছে তার। এরপর ফরীদি ঘর বাঁধেন নন্দিত অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফার সঙ্গে। ২০০৮ সালে তাদের বিচ্ছেদ ঘটে। বাকি জীবন নিঃসঙ্গ কাটান এই কিংবদন্তী।
দর্শক থেক অভিনয় অঙ্গন, সবখানেই উচ্চমর্যাদা পেয়েছেন হুমায়ুন ফরীদি। তবে তার পুরস্কারভাগ্য খুব একটা ভাল নয়। লম্বা ক্যারিয়ারে তাকে মাত্র একবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার দেওয়া হয়। সেটা ২০০৪ সালের ‘মাতৃত্ব’ ছবির জন্য। ২০১৮ সালে এ অভিনেতাকে মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত করা হয়।
বিষয়: মঞ্চ চলচ্চিত্র অভিনয় অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদি জন্ম মৃত্যু নাটক News newsflash71 Latest News Update News
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।