কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে অগ্নিকাণ্ড, অভিযোগ ব্যবসায়ীদের

নিউ সুপার মার্কেট ৭ বছর ধরেই 'অগ্নিঝুঁকিপূর্ণ'

রাজিউর রাহমান | প্রকাশিত: ১৫ এপ্রিল ২০২৩, ২০:০২

নিউ সুপার মার্কেটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড

রাজধানীর নিউ সুপার মার্কেটের তিন তলা ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মালিকানাধীন ‘ঢাকা নিউ সুপার মার্কেটের এই ভবনটি ‘অগ্নিঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল আরও ৭ বছর আগে।

নিউ সুপার মার্কেটে শনিবার ভোরে আগুন লাগে। আগুন ইতোমধ্যেই তিন তলা ভবনের সবকটি ফ্লোরে ছড়িয়ে পড়েছে। আগুন নেভাতে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিসের ৩০টি ইউনিট।

তিনতলা মার্কেটটির ছাদ ও চারপাশের দেয়ালের বিভিন্ন অংশে পলেস্তারা খসে পড়ছিল দীর্ঘদিন ধরেই। পিলারে ছিল বড় বড় ফাটল। এতে যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা এমন আশঙ্কায় আট বছর আগে এই মার্কেটটি সংস্কার করতে সুপারিশ করেছিল বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)।

এরপর এই মার্কেট তিন সপ্তাহের মধ্যে খালি করতে সুপারিশ করা হয়। কিন্তু মার্কেটের ব্যবসায়ীদের বাধায় তা সম্ভব হয়নি। এরপর ২০১৬ সালে নিউ সুপার মার্কেটের ভবনটিকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল।

ওই বছরের ২৪শে অক্টোবর ‘মার্কেটটি ঝুঁকিপূর্ণ’ লেখা সাইনবোর্ড লাগান ডিএসসিসির কর্মীরা। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই তা খুলে ফেলেন দোকান মালিক সমিতির নেতারা। এরপর সরকারের অন্য কোনো সংস্থা কিংবা দোকানমালিকেরা ঝুঁকি প্রতিরোধে কোনো ব্যবস্থা নেননি।

এদিকে, আগুনের খবর শুনেই নিউমার্কেটের নিচে এসে ভিড় করছেন ব্যবসায়ী ও তাদের স্বজনরা।আগুনে সব হারানো ব্যবসায়ীদের আহাজারি আর হাহাকারে ভারী হয়ে উঠেছে নিউ মার্কেট এলাকা।

ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন- ব্যবসায়ী সমিতির গাফিলতির কারণে মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।তারা বলছেন, মার্কেটে বিদ্যুতের লাইন ছিল অরক্ষিত। এছাড়া অগ্নিনির্বাপণের আধুনিক কোনো ব্যবস্থা ছিল না। কাপড়ের মার্কেট হিসেবে যে ধরনের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা থাকার দরকার ছিল, তেমনটা মার্কেটে ছিল না বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

প্রত্যক্ষদর্শী ও ব্যবসায়ীরা জানান, শনিবার (১৫ এপ্রিল) ভোর ৫টা ৪০ মিনিটের দিকে মার্কেটের তৃতীয় তলায় আগুনের সূত্রপাত হয়। পুরো মার্কেটটি কাপড়ের হওয়ায় আগুন দ্রুত ছড়ায় বলে জানান ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা।

ফায়ার সার্ভিসের ৩০টি ইউনিটের সঙ্গে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর সদস্যরা। এছাড়া বিজিবি, র‌্যাব ও পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থার কর্মীরাও আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।

এরআগে, ৪ এপ্রিল রাজধানীর বঙ্গবাজারে ভয়াবহ আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। ওই ভয়াবহ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই আবার ভয়াবহ আগুনের ঘটনা ঘটলো। বঙ্গবাজারের আগুনে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছিলেন ব্যবসায়ীরা।

বঙ্গবাজার মার্কেটে ভয়াবহ আগুনে পুড়ে যায় ৫ হাজার দোকান। সেই আগুন থেকে রক্ষা পায়নি পুলিশ সদর দপ্তরও। ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি সেনা, নৌ, বিমান, বিজিবি, পুলিশ, র‌্যাব, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরা দীর্ঘ সাড়ে ৬ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।

এরপর, ১৩ এপ্রিল পুরান ঢাকার নবাবপুর সুরিটোলায় একটি টিনশেড গোডাউনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। রাত ১০টা ৮ মিনিটের দিকে আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস।

আগুন নিয়ন্ত্রণে প্রথমে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট। পরে আরও ৪টি ইউনিট সেখানে যোগ দেয়। পরে রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে ফায়ার সার্ভিস ও সেনাবাহিনী সম্মিলিতভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। প্রাথমিকভাবে আগুন লাগার কারণ ও হতাহতের কোনো খবর জানা যায়নি।

 

 

 

 




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top