বিশ্বে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা বেড়েছে ১২ কোটি
ক্ষুধায় ধুঁকছে বিশ্বের ৭৩ কোটি ৫০ লাখ মানুষ
রাজিউর রাহমান | প্রকাশিত: ১৩ জুলাই ২০২৩, ২১:১৪
ক্ষুধার আগুনে পুড়ছে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ। যাদের জীবনে দিনে একবারও খাবার জুটে না এমন মানুষের সংখ্যাও কম নয়। নানা সংকটে এই সংখ্যা বেড়্ইে চলছে। ক্ষুধার্তের সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি তীব্রভাবে দেখা দিয়েছে প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাদ্যের অনিশ্চয়তা। বর্তমানে বিশ্বের প্রতি তিনজন মানুষের একজন এই অনিশ্চয়তার শিকার।
জাতিসংঘ বলছে, বিশ্বজুড়ে চলা করোনা মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ২০১৯ সাল থেকে বিশ্বে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা বেড়েছে ১২ কোটির ও বেশি। বিশ্বে সর্বমোট ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৩ কোটি ৫০ লাখে।
বুধবার (১২ জুলাই) বাৎসরিক ‘স্টেট অব ফুড সিকিউরিটি অ্যান্ড নিউট্রিশন ইন দ্য ওয়ার্ল্ড’ নামের একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের বৈশ্বিক খাদ্য ও কৃষি নিরাপত্তা বিষয়ক সংস্থা ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন (ফাও)। আর সেই প্রতিবেদনেই উঠে এসেছে এসব তথ্য।
ফাও বলছে, ক্ষুধার্ত মানুষ বাড়ার এ প্রবণতা অব্যাহত থাকলে ২০৩০ সাল নাগাদ প্রায় ৬০ কোটি মানুষ দীর্ঘস্থায়ীভাবে অপুষ্টির শিকার হবে। গত বছর ২০২২, আনুমানিক ৯০ কোটি মানুষ বিশ্ব জনসংখ্যার ১১.৩% গুরুতর খাদ্য সংকটে ভুগেছে।
বিশ্বের জনসংখ্যার ২৯.৬ ভাগ অর্থাৎ ২৪ কোটি মানুষের মধ্যে প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন খাদ্য সংকটে ভুগছে। এ ছাড়া ২০২২ সালে ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে ৪৫ লাখ শিশু অপুষ্টির শিকার।
সংস্থাটি বলছে, ২০১৯ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী ক্ষুধার সম্মুখীন মানুষের সংখ্যা স্থিতিশীল হওয়ার পরও, পশ্চিম এশিয়া, ক্যারিবিয়ান এবং আফ্রিকা জুড়ে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা এখনও বাড়ছে।
ফাও এর মহাপরিচালক কু ডং ইউ বলেন, বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারী থেকে পুনরুদ্ধার অসম হয়েছে, এবং ইউক্রেনের যুদ্ধ খাদ্যাভ্যাসকে প্রভাবিত করেছে। এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন, সংঘাত এবং অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা মানুষকে অনিরাপত্তায় ঠেলে দিচ্ছে।
রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) প্রধান অর্থনীতিবিদ ম্যাক্সিমো টোরো কুলেন বলেন, ‘আমরা দেখছি যে ক্ষুধা একটি উচ্চ মাত্রায় স্থিতিশীল হচ্ছে, যা খারাপ খবর।’
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বিশ্বব্যাপী ক্ষুধার প্রধান চালিকাশক্তিগুলি ছিল জীবিকার ক্ষেত্রে সংঘাত, জলবায়ুর চরমতা যা, কৃষি উৎপাদনকে হুমকির মুখে ফেলেছিল এবং মহামারির কারণে বেড়ে যাওয়া অর্থনৈতিক কষ্ট।
অক্সফামের প্রধান নীতিনির্ধারক পলিন চেটকুটি বলেন, পৃথিবীতে কোটি কোটি মানুষকে ক্ষুধার্ত অবস্থায় দেখা ক্ষমার অযোগ্য। যদিও খাদ্য সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলো গত বছর তাদের মুনাফা দ্বিগুণেরও বেশি করেছে। তারপরও বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় এক তৃতীয়াংশ গত বছর মারাত্মকভাবে খাদ্য নিরাপত্তাহীন ছিল।
আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা মার্সি কর্পসের খাদ্য ব্যবস্থার পরিচালক কেভিন মুগেনিয়া বলেন, ‘প্রত্যেক দেশকে তার স্থানীয় খাদ্য সরবরাহের চেইনকে শক্তিশালী করতে হবে। একইসঙ্গে মানবিক সহায়তায় জোর দিতে হবে। দেশগুলোকে স্থানীয়ভাবে খাদ্য নিরপাত্তাহীনতার সমাধান করতে হবে।’
২০২২ সালে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়। এই দুই দেশ খাদ্যশস্য, তেলবীজ ও সারের দুটি বৃহত্তম বৈশ্বিক উৎপাদনকারী। যুদ্ধের ফলে আন্তর্জাতিক সরবরাহ শৃঙ্খলে ব্যাঘাত ঘটে। এর ফলে শস্য, সার ও জ্বালানীর দাম বেড়ে যায়।
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।