খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে বিকেলে জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে বিএনপি

রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ৩ অক্টোবর ২০২৩, ১৫:৪০

ছবি: সংগৃহীত

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যগত অবস্থা নিয়ে আজ বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করবে বিএনপি। রাজধানীর গুলশানে দলটির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিকেল ৩টায় এ সংবাদ সম্মেলন হবে বলে জানানো হয়েছে। এতে উপস্থিত থাকবেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের কর্মকর্তা শামছুদ্দিন দিদার জানান, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যগত অবস্থা নিয়ে এ সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়েছে।

এদিকে দুদিন স্থিতিশীল থাকার পর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের ফের অবনতি হয়েছে। বিরতি দিয়ে জ্বর আসছে। মাঝেমধ্যেই বেড়ে যাচ্ছে শ্বাসকষ্ট। ফুসফুস থেকে পানি অপসারণ করতে হচ্ছে। এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা প্রসঙ্গে তার মেডিকেল বোর্ডের একজন সদস্য সোমবার (২ অক্টোবর) এ তথ্য জানান।

ওই চিকিৎসক জানান, যে কোনো মুহূর্তে আবারও খালেদা জিয়াকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) স্থানান্তর করা লাগতে পারে। এখন তার যত ধরনের টেস্ট করা হচ্ছে, তার রিপোর্টও খারাপ আসছে। প্যারামিটারগুলো ক্রমেই নিচের দিকে যাচ্ছে।

তিনি আরও জানান, অবস্থার অবনতি হওয়ায় এক্স-রে, ইসিজি, ইকোসহ রক্তের বিভিন্ন পরীক্ষা করা হয়। রিপোর্ট দেখে ওষুধে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীর শারীরিক দুর্বলতা বেড়েছে। ইলেকট্রোরাইল ইমব্যালেন্স (দেহে খনিজ অসমতা) হওয়ায় শরীরে দুর্বলতা রয়েছে। এগুলোর উন্নতির চেষ্টা চলছে। স্যুপ ও তরল জাতীয় খাবার ছাড়া তিনি তেমন কিছু খেতে পারছেন না। হাসপাতালের বিছানায় সারাক্ষণ থাকতে হচ্ছে ইনজেকশন ও স্যালাইনের ওপর।

চিকিৎসক জানান, খালেদা জিয়ার শারীরিক দুর্বলতার পাশাপাশি লিভার সিরোসিসের অবস্থাও গুরুতর। এ ছাড়া তার কিডনি জটিলতা ও ডায়াবেটিসের মাত্রা বাড়ছে। ফলে একটিকে কমাতে গেলে আরেকটিতে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। সহনশীল ওষুধ দিয়ে এসব জটিলতা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে। এখন লিভার প্রতিস্থাপন ছাড়া দেশে আর কোনো চিকিৎসা নেই। তার যেহেতু শারীরিক নানা জটিলতা, তাই উন্নত মাল্টিডিসিপ্লিনারি সেন্টারে চিকিৎসা দেওয়া জরুরি।

হাসপাতালে খালেদা জিয়ার শয্যাপাশে রয়েছেন ছোট পুত্রবধূ শর্মিলা রহমান সিঁথি। তিনি গুলশানের বাসা ফিরোজা থেকে শাশুড়ির জন্য খাবার রান্না করে নিয়ে যান। গত ৯ আগস্ট ‘ফিরোজা’য় অসুস্থ হয়ে পড়লে ৭৮ বছর বয়সী খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

গত ২৫ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়ার স্থায়ী মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। ওই আবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পরে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। তবে আইন মন্ত্রণালয় রোববার খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার আবেদন বিবেচনার সুযোগ নেই বলে জানিয়ে দেয়। বরং জানানো হয় বিদেশে যেতে হলে জেলে গিয়ে আদালতে আবেদন করতে হবে।

আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের মতামত জানানোর কথা ব্যক্ত করেন। আইনমন্ত্রী বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আইনি মতামতের জন্য খালেদা জিয়ার ভাইয়ের সর্বশেষ যে দরখাস্ত সেটা হলো-তার স্থায়ী মুক্তি ও বিদেশ পাঠানোর অনুমতি দেওয়া। সেটা আইনি মতামতের জন্য আমাদের কাছে পাঠানো হয়েছিল। আইনি মতামত দিয়ে সেটা কিছুক্ষণ আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাঠানো হয়েছে।

আপনাদের প্রশ্ন আমরা কী আইনি মতামত দিয়েছি-প্রথম কথা হচ্ছে প্রথম যে দরখাস্তটা ছিল যেটা ২০২০ সালের মার্চ মাসে নিষ্পত্তি হয়। সেই দরখাস্তে ছিল যে, খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ, তাকে কারাগার থেকে মুক্তি দিয়ে তার সুচিকিৎসা যেন হয়, সেই ব্যবস্থা করা। তখন সেই দরখাস্তের ওপর আমরা একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। তখন দুটি শর্তে তার দণ্ডাদেশ ছয় মাসের জন্য স্থগিত রেখে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল।

আনিসুল হক বলেন, এটা ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ৪০১(১) এর ক্ষমতাবলে। সেখানে দুটি শর্ত দেওয়া হয়েছিল, সেই দুটো শর্ত হচ্ছে-তিনি বাসায় থেকে চিকিৎসা নেবেন ও তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না।




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top