কল্যাণ পার্টির নেতৃত্বে নতুন জোট ‘যুক্তফ্রন্ট’
রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ২২ নভেম্বর ২০২৩, ১৭:০৯
বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির নেতৃত্বে নতুন জোট হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে ‘যুক্তফ্রন্ট’। এ জোটে রয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল) ও বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি। বুধবার (২২ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ জোটের ঘোষণা দেন কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান ও যুক্তফ্রন্টের সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার রাতে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ২২ নভেম্বর জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন একটি জোটের আত্মপ্রকাশ হবে। জোটের বিষয়ে গণমাধ্যমকে সৈয়দ ইবরাহিম বলেছিলেন, বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে নতুন এই জোট গঠন হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে সৈয়দ ইবরাহিম বলেন, আমরা যুক্তফ্রন্ট সিদ্ধান্ত নিয়েছি আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোটগতভাবে অংশ নেব। আমরা কয়টি আসনে নির্বাচন করব সেটা এখনো স্থির করিনি। তবে আমাদের ১০০টি আসনে নির্বাচন করার প্রস্তুতি রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায়ে সফল না হয়ে বিকল্প দুটি পন্থা আছে। এক, চুপ থাকো। দুই, নির্বাচনে অংশ নিয়ে অবদান রাখার চেষ্টা, সুযোগ নাও। আমরা অবদান রাখার সুযোগটা নিতে চাই।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজনীয়তা রয়ে গেছে জানিয়ে জোট সভাপতি বলেন, বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতি আসছে না। না আসার কারণে আমাকে একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যা আছে তার মধ্যে আমি অংশ নেব, নাকি সবকিছু থেকে বিরত থাকব। আমি প্রথম বিকল্পটা বেছে নিয়েছি।
তিনি বলেন, নির্বাচনের পরিবেশের বিষয়টি ক্লিয়ার হতে সকলেরই সময় লাগবে। কুয়াশা একটু একটু ধীরে ধীরে কাটে। গোধূলিও ধীরে ধীরে আসে। নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য কোনো চাপ আছে কি না জানতে চাইলে সৈয়দ ইবরাহিম বলেন, আমি পরশুদিন হাইকোর্টে গিয়েছিলাম। এই প্রশ্নটির উত্তর দেওয়া এই মুহূর্তে আমার পক্ষে সমীচীন না। এটা ঊহ্য রাখতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমি আর আমার দলের নেতা-কর্মীরা এত দিন কষ্ট করে রাজনীতি করেছি। আমাদের টিকে থাকার একটা সীমা আছে। কিন্তু এই মুহূর্তে আমার রাজনৈতিক অক্ষমতা এই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে আর পেরে উঠছি না। ২৮ অক্টোবরের পরে এটা একটা সুনির্দিষ্ট অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে। আমাকে একটা সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে- আমি কি নিশ্চুপ থাকব, নাকি বিকল্প পন্থা অবলম্বন করব। আমি বিকল্প পন্থাটা নিলাম।
জোটের তিনটি দল নিজ মার্কায় নির্বাচনে অংশ নেবেন জানিয়ে জোট সভাপতি বলেন, আমরা হাতঘড়ি, কাঁঠাল এবং হাতপাঞ্জা মার্কা নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেব। আমাদের আগ্রহ বিরোধী দলের বেঞ্চে বসা এবং জনগণের পক্ষে থাকা।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে সংলাপের আহ্বান জানিয়ে যুক্তফ্রন্ট সভাপতি বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ আন্তর্জাতিক বিশ্বের প্রতি আহ্বান রাখব উভয়ের মধ্যে গ্রহণযোগ্য পরিবেশে সংলাপের ব্যবস্থা করুন। জাতির মঙ্গলের জন্য সংলাপের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন। আমি কখনোই বলব না- বিএনপি তুমি নির্বাচনে আসো, কখনো বলব- না আসিও না।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন—বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির মহাসচিব জাফর আহমেদ জয়, নির্বাহী চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম, অতিরিক্ত মহাসচিব ফারুকুল ইসলাম, প্রেসিডিয়াম সদস্য আনোয়ারুল ইসলাম, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের চেয়ারম্যান শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, অতিরিক্ত মহাসচিব তফাজ্জেল হোসেন, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির মহাসচিব আব্দুল আউয়াল মামুন, স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য অধ্যাপক ডা. ইকবাল হাসান মাহমুদ প্রমুখ।
নতুন নির্বাচনী জোট যুক্তফ্রন্টের আত্মপ্রকাশ সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, সরকারবিরোধী চলমান আন্দোলন নস্যাৎ করতে এবং নানা চাপ ও প্রলোভনে শরিকদের নির্বাচনে নিতে দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করা হচ্ছে। সুতরাং যুগপতের শরিকরা নিজেরা স্বেচ্ছায় নতুন জোট করতেছে, না তাদের দিয়ে করানো হচ্ছে, সেটাও আলোচনার বিষয়।
তবে দেশের মানুষ যারা রাজনীতি বোঝেন কিংবা বোঝেন না, তারা সবাই জানেন, নির্বাচন সামনে রেখে এখন কী ঘটনা ঘটছে, কেন ঘটছে। এটাতে আমাদের ভাবমূর্তি যদি দুই আনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সরকারের অবশিষ্ট ভাবমূর্তি আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ ছাড়া জেনারেল ইবরাহিম জোট ত্যাগ করে কার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে জোট ছাড়বেন। কারণ, উনি তো নিজেই ১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র। কাজেই এখানে কোনো যুক্তি নেই, অন্য কোনো বিষয় আছে, আর সেটা সবাই বোঝে।
এর আগে সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের এক দফা দাবিতে বিএনপির সঙ্গে বিভিন্ন দল ও জোট দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে। এর মধ্যে ১২ দলীয় জোট অন্যতম। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল গত ১৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। তফসিল অনুযায়ী, ২০২৪ সালের সাত জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট অনুষ্ঠিত হবে।
এ ছাড়া মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ৩০ নভেম্বর, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর, মনোনয়ন বাতিলের বিরুদ্ধে আপিল ও নিষ্পত্তি ৬ থেকে ১৫ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ১৭ ডিসেম্বর, প্রতীক বরাদ্দ ১৮ ডিসেম্বর এবং নির্বাচনী প্রচারণা ১৮ ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারির ৫ তারিখ পর্যন্ত চলবে বলে জানায় ইসি।
বিষয়: কল্যাণ পার্টি যুক্তফ্রন্ট নতুন জোট
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।