স্বেচ্ছাশ্রমে এগিয়ে চলছে বিশ্ব ইজতেমার শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি

রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ২৭ জানুয়ারী ২০২৪, ১৬:২৯

ছবি: সংগৃহীত

মুসলিমদের দ্বিতীয় বৃহত্তম গণজমায়েত বিশ্ব ইজতেমা সফল করতে সমন্বিত স্বেচ্ছাশ্রমে চলছে ময়দান প্রস্তুতির কাজ। গাজীপুর, ঢাকা ও আশপাশের এলাকা থেকে তাবলিগ জামাতের সাথীরা ও সর্বস্তরের মানুষ সম্মিলিতভাবে এসব কাজ করছেন।

আগামী ২ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরের টঙ্গীতে তুরাগ নদীর তীরে শুরু হচ্ছে তাবলিগ জামাতের বার্ষিক মহাসম্মেলন ৫৭তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। এবারও দুই পর্বে অনুষ্ঠিত হবে বিশ্ব ইজতেমা।

দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা ইজতেমা ময়দানে এসে দলে দলে ভাগ হয়ে স্বেছাশ্রম দিচ্ছেন। সামিয়ানা টানানো, রাস্তাঘাট মেরামত, নিচু জমি ভরাট ও পয়ঃনিষ্কাশন কাজ চলছে দ্রুতগতিতে।

এবারের ইজতেমায় প্রথম পর্বে অংশ নেবেন মাওলানা জোবায়েরপন্থী মুসল্লিরা। ৪ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে প্রথম পর্ব। চারদিন বিরতি দিয়ে মাওলানা সাদপন্থীরা ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমায় অংশ নেবেন। ১১ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে চলতি বছরের বিশ্ব ইজতেমা।

ইজতেমার বিদেশি মেহমানদের জিম্মাদার আমির হোসেন বলেন, বিদেশি মেহমানদের থাকা-খাওয়াসহ সব ধরনের ব্যবস্থা প্রায় শেষ। আয়োজকেরা আশা করছেন এবার ৬০ লাখ মানুষ একসঙ্গে আখেরি মোনাজাতে শরিক হবেন।

বিশ্ব ইজতেমার মিডিয়া সমন্বয়কারী (মাওলানা জোবায়ের অনুসারী) মুফতি জহির ইবনে মুসলিম বলেন, স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে এগিয়ে চলছে ইজতেমার প্রস্তুতি কাজ। ইতোমধ্যে ময়দানের প্রায় ৮০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ৩১ জানুয়ারির মধ্যেই বাকি কাজ শেষ হবে।

টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমার প্রধান সমন্বয়কারী প্রকৌশলী মাহফুজ হান্নান বলেন, এবার বিশ্ব ইজতেমায় ১০৫টি খিত্তা থাকবে। টঙ্গীর মূল মঞ্চে ৭২টি, টঙ্গীর তুরাগ তীরের পশ্চিম পারে ১০টি ও উত্তরার ১৮ নম্বর সেক্টরে দিয়াবাড়ি মাঠে ২৩টি খিত্তা থাকবে।

দিয়াবাড়িতে এবার নতুনভাবে মাঠ প্রস্তুত করায় বেশ কিছু কাজ করা হচ্ছে। দিয়াবাড়ি ময়দানে ৮টি গভীর নলকূপ, ১৪টি বড় চৌবাচ্চা ও দুই হাজার ৫০০ টয়লেট নির্মাণ করা হচ্ছে।

দিয়াবাড়ি ইজতেমা ময়দানের জিম্মাদার মাওলানা ফরিদ আহমদ বলেন, ইতোমধ্যে ময়দান প্রস্তুত করার কাজ শেষ পর্যায়ে। টঙ্গী ইজতেমা মাঠে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় দুটি ময়দান করা হয়েছে। তবে টঙ্গী ইজতেমা মাঠের মূল মঞ্চ থেকে বয়ান সরবরাহ করে দিয়াবাড়িতে শোনানো হবে।

আখেরি মোনাজাতও বয়ানের মতো সরবরাহ করা হবে। টঙ্গী ইজতেমা ময়দানে ১০ লাখ, তুরাগ নদীর পশ্চিম পারে ১ লাখ ও দিয়াবাড়িতে ২ লাখ মুসল্লির অংশগ্রহণসহ আখেরি মোনাজাতে প্রায় ৬০ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান অংশগ্রহণ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন অফিস, জেলা প্রশাসক কার্যালয় ও সিটি করপোরেশন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে বিশ্ব ইজতেমা সফল ও সুশৃঙ্খল রাখতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কয়েক হাজার পুলিশ থাকবে। প্রতিটি খিত্তায় সাদা পোশাকে থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

সিসিটিভি ক্যামেরা, ওয়াচ টাওয়ার থেকে পুরো ইজতেমা ময়দানের নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ করা হবে। তুরাগ নদে নৌ-টহল থাকবে। প্রতিটি খিত্তায় দুটি করে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র রাখা হবে। এ ছাড়া কয়েক হাজার অস্থায়ী টয়লেট, পর্যাপ্ত ব্লিচিং পাউডার, ফগার মেশিন ও নিরবচ্ছিন্ন পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা হবে।

গাজীপুর জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম বলেন, দুই পর্বের ইজতেমা সফল করতে জেলা প্রশাসক থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে। এজন্য বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিক প্রস্তুতি সভাও করা হয়েছে। আশা করছি এবারের ইজতেমা শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হবে।

২০১১ সালে প্রথম বিশ্ব ইজতেমা দুই পর্বে অনুষ্ঠিত হয়। এরপর থেকে প্রতি বছর দুই পর্বে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এবারই প্রথম দুই ময়দানে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিশ্ব ইজতেমা।

গত সোমবার (২২ জানুয়ারি)  টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমাকে কেন্দ্র করে একটি ফলোআপ মিটিংয়ের আয়োজন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ওই সভায় বলেছেন, ইজতেমার মাঠে দুই গ্রুপকে যদি আপনারা মিলিয়ে দিতে পারতেন, আমরা খুশি হব। এই মেলানোর দায়িত্বটা ধর্মমন্ত্রীকে দিলাম। তিনি ভবিষ্যতে তাদের মিলিয়ে দেবেন।




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top