শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শেখ হাসিনাকে নিয়ে যা বললেন তসলিমা নাসরিন

রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ৬ আগষ্ট ২০২৪, ১৮:৩৬

ছবি: সংগৃহীত

যে আগুন জ্বলেছিল ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে, ধীরে ধীরে পরে সেটাই সরকার বিরোধী আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। ইতোমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পর দেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনা। গণভবন দখল করেছেন বিক্ষোভকারীরা। হাতুড়ি দিয়ে ভাঙা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর মূর্তি।

ঘটনাচক্রে, শেখ হাসিনার সরকারের আমলেই তসলিমা নাসরিনকে নির্বাসনে পাঠায় বাংলাদেশ সরকার। তসলিমা ধারাবাহিক ভাবে ধর্মীয় মৌলবাদ ও রক্ষণশীলতার বিরুদ্ধে লিখতেন। সেই কারণেই বাংলাদেশের ইসলামি সংগঠনগুলি বিক্ষোভ শুরু করেছিল। তাদের চাপের মুখে শেখ হাসিনার নির্দেশে তসলিমাকে নির্বাসিত করা হয়।

নির্বাসিতকে নির্বাসন দেওয়া মানুষটি নিজেই আজ নির্বাসিত। এতে যে প্রথম নির্বাসিত কড়া প্রতিক্রিয়া দেবেন, সেটাই স্বাভাবিক। তসলিমা নাসরিনও তাই করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে মাত্র ৪৫ মিনিটের নোটিসে বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যাওয়া শেখ হাসিনার উদ্দেশে তিনি লিখলেন, 'হাসিনার দুঃশাসনের সমাপ্তি হল।' তবে একই সঙ্গে তিনি চিন্তিত, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়েও। সাম্প্রদায়িক শক্তি যেন ছিন্নভিন্ন না করে দেয় দেশকে, সেই উদ্বেগও প্রকাশ করেছেন তিনি।

আজ, সোমবার দুপুরে দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছেন হাসিনা। ভারত হয়ে লন্ডনের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন তিনি। এর আগে গত দু'মাস ধরে রক্তাক্ত হয়েছে বাংলাদেশ। সরকারি চাকরিতে কোটার বিরোধিতা করে শুরু হওয়া ছাত্র আন্দোলন থেকে ছড়িয়ে পড়া গণবিক্ষোভের আঁচে পড়ে গিয়েছে সরকার। সরকারে থাকা আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে প্রাণ চলে গেছে কয়েকশো মানুষের।

ঘটনাচক্রে, শেখ হাসিনার সরকারের আমলেই তসলিমা নাসরিনকে বাংলাদেশ সরকার নির্বাসনে পাঠায়। তসলিমা ধারাবাহিক ভাবে ধর্মীয় মৌলবাদ ও রক্ষণশীলতার বিরুদ্ধে লিখতেন। সেই কারণেই বাংলাদেশের ইসলামি সংগঠনগুলি বিক্ষোভ শুরু করেছিল। তাদের চাপের মুখে শেখ হাসিনার নির্দেশে তসলিমাকে নির্বাসিত করা হয়।

এই দিন সেই তসলিমা তাঁর এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, 'কট্টর ইসলামিদের খুশি করতে ১৯৯৯ সালে আমায় দেশ থেকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। আমার মা তখন মত্যুশয্যায়, থাকতে পর্যন্ত পারিনি পাশে। আমায় আর কখনও দেশে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। আজ সেই ইসলামিরাই ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে মিশে গিয়ে, হাসিনাকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করল।'

তিনি এদিন আরও লেখেন, 'হাসিনা দেশ ছেড়ে চলে গেলেন। কিন্তু এই পরিস্থিতির জন্য উনি নিজেই দায়ী। উনিই এভাবে বাড়তে দিয়েছেন ইসলামিদের। উনিই দিনের পর দিন প্রশ্রয় দিয়ে গেছেন দুর্নীতিকে। এখন বাংলাদেশ যেন পাকিস্তান না হয়ে যায়। সেনার শাসন কাম্য নয় দেশে। রাজনৈতিক দলগুলির একজোট হয়ে গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা প্রতিষ্ঠা করা উচিত।'

বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন, একটি অন্তর্র্বতী সরকার গঠন করা হবে। সেই সরকারই দেশের কার্যকলাপ চালাবে। এই নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে তিনি সব দলের নেতাদের আমন্ত্রণ করেছিলেন। সেই বৈঠকের পরই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই সরকার কতদিনের জন্য তৈরি হবে, আগামী দিনে নির্বাচিত সরকার তৈরিতে বাধা সৃষ্টি হবে কিনা, সেই নিয়েও আলোচনা তুঙ্গে।

এই পরিস্থিতির মধ্যে শেখ হাসিনার ছেলে জয় পরিষ্কার করে দিয়েছেন তাঁর মায়ের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের কথা। এক সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়ে শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, 'মা খুবই হতাশ হয়ে পড়েছেন। এত পরিশ্রমের পর তাঁর পাশে অনেকে দাঁড়াননি। তাঁরা মায়ের বিরুদ্ধে চলে গেছেন। এই কারণে মা আর রাজনীতিতে ফিরবেন না।'

প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সদ্য পদত্যাগ করা শেখ হাসিনা ব্রিটেনের কাছে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন বলে একটি সূত্র মারফষ জানা গেছে। সেখানে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার বোন রেহানা, যিনি তাঁর সঙ্গেই রয়েছেন, তিনি ব্রিটিশ নাগরিক। তাই তাঁর রাজনৈতিক আশ্রয়ের প্রয়োজন নেই। লন্ডনে তাঁর বাড়িও রয়েছে।



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top