নির্বাচনে জিতলে দেশে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে বিএনপি: তারেক রহমান
Nasir Uddin | প্রকাশিত: ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০:১৮
দেশে জবাদিহিমূলক সরকার দেখতে চায় জনগণ। সে লক্ষ্যে নেতাকর্মীদের কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আগামীতে ক্ষমতায় এলে বিএনপি জনগণের জন্য একটি জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা করবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) কুমিল্লার ফান টাউন পার্ক মিলনায়তনে রাষ্ট্র সংস্কারের ৩১ দফা এবং জনসম্পৃক্ত বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন।
তিনি বলেছেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হলো, এমন একটি সরকার গঠন করা, যারা জনগণের কাছে জবাবদিহি করবে। এতে দেশের সব সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হবে।’
তারেক রহমান বলেন, দেশের জন্য কাজ করতে গিয়ে আমার বাবা শহীদ হয়েছেন। আমার ভাই শহীদ হয়েছেন। আর আমার মায়ের কারাগার ও নির্যাতনের শিকার হওয়ার কথা আজ না হয়, নাই বললাম। এমন গল্প দেশের বহু বিএনপি পরিবারের। অনেকে ডান্ডাবেড়ি পরানো অবস্থায় স্বজনদের জানাজায় গিয়েছে। এরপরও বলি, শুধু নিজের কথা ভাবলে হবে না। দেশের জনগণের জন্যও ভাবতে হবে।
দেশ বদলাতে হলে প্রাথমিক শিক্ষার ভিত্তি মজবুত করতে হবে বলে মন্তব্য করে তারেক রহমান বলেন, দেশকে বদলাতে হলে প্রাথমিক শিক্ষার ভিত্তি মজবুত করতে হবে৷ আমরা প্রাথমিক শিক্ষার ওপর সর্বোচ্চ নজর দেব।
প্রাথমিক শিক্ষাকে এমনভাবে ঢেলে সাজানো হবে, যাতে দেশের সবচেয়ে মেধাবী ছেলেমেয়েরা শিক্ষকতায় আসেন। শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বাড়ানো হবে। কোনো শিক্ষককে ক্লাস শেষে অন্য কাজে যাতে যুক্ত হতে না হয়, শিক্ষকরা যাতে শুধুমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মনোনিবেশ করেন, সেই ব্যবস্থা করা হবে।
একেকজন শিক্ষার্থীর ভেতর একেকটি প্রতিভা লুকায়িত আছে। সেগুলো ধরে ধরে কাজ করতে হবে। শিক্ষার্থীদের বাংলার বাইরে অন্য ল্যাঙ্গুয়েজ শেখাতে হবে। এমনভাবে তৈরি করতে হবে, যাতে করে পৃথিবীর কোনো প্রান্তে তারা না আটকায়, যোগ করেন তারেক রহমান।
আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, পতিত সরকার দুর্নীতির ওপর ভর করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চেয়েছিল। আমরা প্রাথমিক থেকে শিক্ষার্থীদের মাথায় ঢুকিয়ে দেব, দুর্নীতি খারাপ, দুর্নীতি খারাপ, দুর্নীতি খারাপ বাক্যটি। তাহলে শৈশব থেকে সবার মাথায় দুর্নীতিবিরোধী মনোভাব জন্ম নেবে।
ক্ষমতায় গেলে জুলাই অভ্যুত্থানে যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের নামে বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি করা হবে। যাতে এ অভ্যুত্থানের কথা সবাই মনে রাখে। নিহতদের পরিবার ও আহতদের পাশে বিএনপির যেসব নেতাকর্মী দাঁড়িয়েছে, তাদের সাধুবাদ জানাই। ক্ষতিগ্রস্তরা কে কোন দলের তা চিন্তা না করে বিএনপি তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে, এটি প্রশংসনীয়, যোগ করেন তারেক রহমান।
তারেক রহমান বলেন, ‘যখন কেউ বিশ্বাস করতে চাইতো না যে স্বৈরাচারের অবসান হবে, আমরা তখন ২৭ দফা প্রস্তাব দিয়েছিলাম। পরে সেটা ৩১ দফায় পরিণত হয়েছে। আমাদের সাথে গণতান্ত্রিক দলের মতামত যুক্ত হয়েছে।’
তিনি দলের কর্মীদের সতর্ক করে বলেন, ‘জনগণের আস্থা নষ্ট হয় এমন কাজ করা যাবে না। আমাদের জনগণের আস্থা অর্জন করতে হবে। স্বৈরাচারীরা দেশকে ধ্বংস করেছে, এখন সময় এসেছে দেশের কল্যাণে কাজ করার।’
তারেক রহমান বিএনপি এবং তার পরিবারের অবদান তুলে ধরে বলেন, ‘আমার বাবা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করতে গিয়ে প্রাণ দিয়েছেন। আমার মা বেগম খালেদা জিয়া দেশের মানুষের পক্ষে থাকার কারণে নির্যাতিত হয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘যেভাবে গত ১৫ বছরে স্বৈরাচারী সরকার দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে, দেশকে দুর্নীতিতে ডুবিয়েছে, তা থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে।’
বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিম ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে প্রশিক্ষণ কর্মশালায় উদ্বোধনী বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। এতে আরও অংশ নেন বিএনপির শিল্প বিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম, ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সম্পাদক হাজী আমিন-উর রশিদ ইয়াছিনসহ কুমিল্লা ছয়টি জেলা বিএনপি, মহানগর, পৌরসভার শীর্ষ নেতৃবৃন্দ।
কর্মশালায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য অধ্যাপক মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপদেষ্টা ড. মাহাদী আমিন, সহ-প্রশিক্ষণ সম্পাদক রেহানা আক্তার বানু, সহ-ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট নেওয়াজ হালিমা আরলিসহ গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মোস্তাক মিয়া, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী ও কৃষক দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবা হাবিব।
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।