মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫, ২ আষাঢ় ১৪৩২

খুলে দেওয়া হলো কাপ্তাই বাঁধের ১৬ গেট

রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ২৫ আগষ্ট ২০২৪, ১২:৫৭

ছবি: সংগৃহীত

রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদের পানি বৃদ্ধির হার অব্যাহত থাকায় এবং পরবর্তী অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে স্পিলওয়ের ১৬টি গেট ৬ ইঞ্চি করে খুলে দেওয়া হয়েছে। রোববার (২৫ আগস্ট) সকাল ৮টা ১০ মিনিটে এই বাঁধ খুলে দেওয়া হয়।

কাপ্তাই পানি উন্নয়ন বোর্ডের ব্যবস্থাপক এটিএম আব্দুজ্জাহের জানান, শনিবার রাতে গেট খোলার কথা থাকলেও আমরা খুলিনি। তবে পানির লেভেল বিপৎসীমার ওপরে চলে যাওয়ায় সকাল ৮টা ১০ মিনিটে আমরা গেট খুলে দিয়েছি। যা থেকে প্রতি সেকেন্ডে ৯০০০ কিউসেক পানি নিষ্কাশন করবে। পরবর্তীতে পরিস্থিতি বিবেচনায় গেট খোলার পরিমাণ বাড়ানো হতে পারে।

তিনি বলেন, পূর্বনির্ধারিত সময়ে গেট খোলার জন্যই তারা গিয়েছিলেন। সেখানে পানির প্রবাহ কম থাকায় এবং রাতের যেকোনো পরিস্থিতি এড়াতে তারা সকাল ৮টায় গেটগুলো খোলার সিদ্ধান্ত নেন। তবে আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৬টি গেট ছয় ইঞ্চি করেই খোলা হয়।

কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের সহকারী পরিচালক সাখাওয়াত কবীর জানান, হ্রদে পানির ইনফ্লো রাত ১০টার সময় ছিল দশমিক ছয়, যা প্রত্যাশা থেকে কম। তাই রাত্রিকালীন পরিস্থিতি বিবেচনায় সকালে খোলার সিদ্ধান্ত হয়। রাত ১০টায় হ্রদে ১০৮ এমএসএল পানি ছিল।

কাপ্তাই হ্রদের ১৬টি স্প্রিলওয়ে বা জলকপাট খুলে দেওয়ায় প্রতি সেকেন্ডে ৯ হাজার সিএফএস পানি হ্রদ থেকে নিষ্কাষিত হয়ে কর্ণফুলী নদীতে পড়বে বলে ধারণা করছেন কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ। নতুন করে বৃষ্টিপাত বা পানির প্রবাহ অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেলে গেট খোলার পরিমাণ পর্যায়ক্রমে বাড়ানো হতে পারে বলা জানান তারা।

কাপ্তাই হ্রদের পানি ধারণক্ষমতা সাধারণত ১০৯ ফুট। বর্তমানে পানির উচ্চতা প্রায় ১০৮ ফুট। ফলে বিপৎসীমার কাছাকাছি হওয়ায় হ্রদের উজান ও ভাটির বন্যা নিয়ন্ত্রণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন ব্যবস্থাপক এ টি এম আব্দুজ্জাহের। একইসময়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত পাঁচটি ইউনিটের মাধ্যমে আরও ৩২ হাজার সিএফএস পানি নিষ্কাশিত হচ্ছে। যার মাধ্যমে প্রায় ২১৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে।

এদিকে কাপ্তাই বাঁধ খোলার সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা স্ট্যাটাস দেয়া হচ্ছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপকের বরাত দিয়ে সংবাদ ছড়িয়েছে ফেসবুকজুড়ে। স্ট্যাটাসের নিচে অনেকে কমেন্ট করে সৃষ্টিকর্তার সাহায্য প্রার্থনা করেছেন। কেউ মন্তব্য করেছেন আল্লাহ আমাদের রহম করো।

একজন আরেকজনকে ফোন করে জানতে চাইছে গেট খুললে কোন এলাকা কতটুকু তলিয়ে যাবে। পিডিবির কর্মকর্তারা গেট খোলার সংবাদে আতংকিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, গেট ৬ ইঞ্চি করে খোলা হয়েছে। কর্ণফুলী নদীতে পানির প্রবাহ কিছুটা বাড়বে মাত্র। গ্রামের পর গ্রাম তলিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটবেনা।

এদিকে কাপ্তাই বাঁধের গেট খোলার সিদ্ধান্তের পর চট্টগ্রামজুড়ে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া,বোয়ালখালী,পটিয়া,রাউজান উপজেলার নদী তীরবর্তী এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে। ডুবে যেতে পারে নিচু এলাকার সড়ক অবকাঠামো।

১৯৫৭ সালে কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ প্রকল্প কাজ শুরু হয়। শেষ হয় ১৯৬২ সালে। ভারি বৃষ্টিতে কাপ্তাই লেকে পানি বৃদ্ধি পেলে প্রায় সময় গেট খুলে দেয়া হয়। এই কেন্দ্রের পাঁচ ইউনিট চালু থাকলে সর্বোচ্চ ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। বর্তমানে কাপ্তাই লেকে পানির লেভেল ভাল থাকায় পাঁচটি ইউনিট চালু আছে। এসব ইউনিটে প্রতিদিন ২১৭ থেকে ২২০ মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে।



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top