অবমুক্তের পর কিছু খাচ্ছে না সেই বক পাখি

ওলিউল্লাহ তুহিন | প্রকাশিত: ২৯ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০৩

সংগৃহীত

পটুয়াখালীর বাউফলের নুরাইনপুর বাজারসংলগ্ন খানবাড়ি এখন সবার মুখে মুখে পরিচিত ‘বকের বাড়ি’ নামে। এক মাস আগের একটি মানবিক ঘটনার সূত্রেই এ নাম ছড়িয়ে পড়েছে এলাকায়, এরপর তা স্থান পেয়েছে সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও।

ঘটনার শুরু প্রায় এক মাস আগে এক ঝড়ের দিনে। খানবাড়ির গাছে থাকা একটি বকের ছানা ঝড়ে নিচে পড়ে যায়। দুর্বল অবস্থায় থাকা ছানাটির ওপর তখন ঝাঁপিয়ে পড়ে একটি গুইসাপ। ঠিক সেই মুহূর্তে ছুটে আসেন স্থানীয় ব্যবসায়ী হেমায়েত উদ্দিন। তিনি গুইসাপের হাত থেকে ছানাটিকে উদ্ধার করে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসেন।

এরপর শুরু হয় যত্ন আর ভালোবাসায় বকের ছানাটিকে সুস্থ করে তোলার গল্প। ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠে ছানাটি, আর হেমায়েতের সঙ্গ ছাড়তে চায় না। প্রতিদিন তার দোকানে যেত, চারপাশে ঘুরঘুর করত— ঠিক যেন পরিবারেরই একজন সদস্য। মানুষ আর পাখির এই মমতাময় সম্পর্ক এলাকাজুড়ে সৃষ্টি করে এক অনন্য উদাহরণ।

তবে বিষয়টি পরে নজরে আসে বন বিভাগ ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কর্মকর্তাদের। তারা হেমায়েত উদ্দিনকে জানান, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের আওতায় কোনো বন্যপাখিকে দীর্ঘদিন গৃহপালিত অবস্থায় রাখা যায় না। ফলে সোমবার (২৭ অক্টোবর) দুপুরে বন বিভাগের উপস্থিতিতে বকটিকে অবমুক্ত করা হয়।

হেমায়েত উদ্দিন জানান, “বন বিভাগের কর্মকর্তারা বিষয়টি জানার পর আমার কাছে আসেন। তাদের পরামর্শেই বকটিকে ছেড়ে দিই। প্রথমে সেটি উড়তে চাইছিল না, পরে তারা হাতে নিয়ে অবমুক্ত করেন। কিন্তু তখন থেকে বকটি কিছু খায়নি। আমার কষ্ট হচ্ছে— আমার কাছে থাকলে নিয়মিত খাওয়াতে পারতাম।”

স্থানীয়দের মতে, বকটি মুক্ত হওয়ার পর থেকেই এক জায়গায় স্থির আছে, কিছু খাচ্ছে না। তাদের ধারণা, হয়তো নতুন পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারছে না, অথবা হেমায়েতের সঙ্গে থাকা মমতার বন্ধন ভুলতে পারছে না।

বাউফল উপজেলা বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা বদিউজ্জামান খান বলেন, “বকটি যেহেতু নির্দিষ্ট স্থানে লালন-পালন করা হচ্ছিল, তাই অন্য কোথাও অবমুক্ত করা যায়নি। স্থানীয়দের সঙ্গে আলোচনা করে সেটিকে সেই গাছেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, যেখানে আগে সে বাসা বাঁধত। এখন আমরা গাছের আশেপাশে খাবারের ব্যবস্থা করছি।”

তিনি আরও জানান, “বন্যপ্রাণী লালন-পালনের সুযোগ আইনগতভাবে নেই। তবে আমরা চাই বকটি আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাক।”

মানুষ ও বন্যপাখির এই সহাবস্থানের গল্প এখন বাউফলের গণ্ডি পেরিয়ে অনুপ্রেরণা জাগাচ্ছে অনেকের মনে। মানবিকতার এমন উদাহরণে প্রমাণিত, ভালোবাসা কেবল মানুষের জন্যই নয়— প্রকৃতির প্রতিটি জীবের জন্যও সমান প্রযোজ্য।

 

নিফ্লা৭১/ ওতু



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top