গুলিবিদ্ধ হলে প্রথম ৩০ মিনিটে কী করবেন, জীবন বাঁচাতে জরুরি করণীয়
লাইফস্টাইল ডেস্ক | প্রকাশিত: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:১৬
গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা মুহূর্তের মধ্যেই জীবন-মৃত্যুর ব্যবধান তৈরি করতে পারে। কোথায় গুলি লেগেছে, কী ধরনের বুলেট ব্যবহার হয়েছে এবং কত দ্রুত চিকিৎসা পাওয়া গেছে—এসব বিষয়ের ওপর নির্ভর করে আহত ব্যক্তির ঝুঁকি বাড়ে বা কমে। তবে সময়মতো সঠিক পদক্ষেপ নিলে অনেক ক্ষেত্রেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। বিশেষজ্ঞদের মতে, হাসপাতালে পৌঁছানোর আগের প্রথম ৩০ মিনিট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রথমেই যা করবেন
গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর প্রাথমিকভাবে তিনটি বিষয় নিশ্চিত করা জরুরি—
নিরাপদ স্থানে সরানো:
আহত ব্যক্তি হাঁটতে বা নড়াচড়া করতে সক্ষম হলে তাকে দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে হবে, যাতে আর কোনো ঝুঁকি না থাকে।
অস্ত্র নিরাপদ করা:
যদি দুর্ঘটনাবশত গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা ঘটে, তবে নিশ্চিত করতে হবে যেন অস্ত্রটি আর কারও ক্ষতি করতে না পারে।
জরুরি সেবায় ফোন:
নিরাপদ স্থানে পৌঁছানোর পর সঙ্গে সঙ্গে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে জরুরি সহায়তা চাইতে হবে এবং অপারেটরের নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। দ্রুত হাসপাতালে নেওয়াই জীবন রক্ষার সবচেয়ে কার্যকর উপায়।
রক্তপাত বন্ধ করাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ
বিশেষজ্ঞদের মতে, গুলিবিদ্ধ ব্যক্তিকে বাঁচানোর প্রথম ধাপ হলো রক্তপাত নিয়ন্ত্রণ করা। ক্ষতস্থান থেকে যেখানে রক্ত বের হচ্ছে, সেখানে শক্ত চাপ দিতে হবে। রক্তপাত বেশি হলে প্রয়োজন অনুযায়ী জোরালো চাপ প্রয়োগ করতে হতে পারে।
ড্রেসিং ব্যবহার:
ক্ষতস্থানে পরিষ্কার কাপড়, গজ, তোয়ালে বা যেকোনো পরিষ্কার কাপড় চেপে ধরলে রক্ত জমাট বাঁধতে সহায়তা করে।
টুর্নিকেট ব্যবহারে সতর্কতা:
প্রশিক্ষিত টুর্নিকেট থাকলে তা ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে ভুলভাবে ব্যবহার করলে ক্ষতি বাড়তে পারে। টুর্নিকেট না থাকলে সরাসরি চাপ প্রয়োগ করাই নিরাপদ।
যেসব ভুল করবেন না
আহত ব্যক্তিকে কখনোই পানি, খাবার বা কোনো পানীয় দেওয়া যাবে না। শকে গেলে বমি হতে পারে এবং খাবার বা তরল শ্বাসনালিতে ঢুকে বিপদ তৈরি করতে পারে।
অনেকে আহত ব্যক্তির পা বা মাথা উঁচু করে দেন, যা অনেক ক্ষেত্রে বিপজ্জনক। এতে বুক বা পেটের ভেতরের রক্তপাত বেড়ে যেতে পারে এবং শ্বাসকষ্ট সৃষ্টি হতে পারে। ব্যক্তি সচেতন থাকলে তিনি যেভাবে আরাম বোধ করেন, সেভাবেই বসতে বা শুতে দিন। অচেতন হলে তাকে রিকভারি পজিশনে (কাত হয়ে, এক পা ভাঁজ করে) রাখুন।
শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুলি লাগলে করণীয়
বুকে গুলি লাগলে:
হৃদপিণ্ড, ফুসফুস ও প্রধান রক্তনালী মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। অনেক সময় ‘সাকিং চেস্ট উন্ড’ তৈরি হয়, যেখানে ক্ষত দিয়ে বাতাস ঢুকে ফুসফুস বসে যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে ক্ষতটি প্লাস্টিক জাতীয় কিছু দিয়ে সাময়িকভাবে সিল করে দিতে হবে। শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে সিল খুলে দিতে হবে।
পেটে গুলি লাগলে:
তীব্র রক্তপাত, অভ্যন্তরীণ অঙ্গ ক্ষতি এবং সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। ক্ষতস্থানে শক্ত চাপ দিতে হবে। পেট দ্রুত ফুলে গেলে ক্ষত ছোট মনে করে অবহেলা করা যাবে না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জরুরি অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হয়।
হাত বা পায়ে গুলি লাগলে:
রক্তনালী ছিঁড়ে যাওয়া, স্নায়ু ক্ষতি কিংবা হাড় ভেঙে যেতে পারে। আক্রান্ত অঙ্গ নাড়িয়ে না দিয়ে শুধু রক্তপাত বন্ধে মনোযোগ দিতে হবে।
ঘাড় বা মেরুদণ্ডে গুলি লাগলে:
এ ধরনের আঘাতে পক্ষাঘাতের ঝুঁকি থাকে। তাই রোগীকে নড়ানো যাবে না। এতে স্পাইনাল কর্ড আরও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ঘাড়ের সামনে গুলি লাগলে সাবধানে চাপ দিয়ে রক্তপাত বন্ধ করতে হবে।
গুলির ক্ষতি কেন এত ভয়াবহ
বিশেষজ্ঞদের মতে, বুলেট শরীরে শুধু একটি ছিদ্র তৈরি করে না; এটি ভেতরে ঢুকে ঘুরে বেড়িয়ে আশপাশের টিস্যু ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গে ব্যাপক ক্ষতি করতে পারে। ক্ষতির মাত্রা নির্ভর করে গুলির অবস্থান, বুলেটের আকার এবং এর গতির ওপর।
সুস্থ হতে কত সময় লাগে
যেসব ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি, সেসব গুলিবিদ্ধ ক্ষত ১০ দিনের মধ্যেও সেরে উঠতে পারে। তবে জটিল আঘাতে সুস্থ হতে দীর্ঘ সময় লাগে। পাশাপাশি মানসিক প্রভাব—ভয়, দুঃস্বপ্ন, অস্থিরতা, খিদে না পাওয়া—দীর্ঘদিন স্থায়ী হতে পারে। এসব লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
বিশেষজ্ঞরা মনে করিয়ে দেন, এসব নির্দেশনা কেবল প্রাথমিক করণীয় হিসেবে দেওয়া হয়েছে। গুলিবিদ্ধ হলে অবশ্যই দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা নিতে হবে।
সূত্র: ভেরি ওয়েল হেলথ
এনএফ৭১/ওতু
বিষয়:

পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।