সোমবার, ৫ মে ২০২৫, ২২ বৈশাখ ১৪৩২

সংস্কারের জন্য অন্তর্র্বতী সরকারকে যথেষ্ট সময় দিতে হবে: ইইউ রাষ্ট্রদূত

Nasir Uddin | প্রকাশিত: ৫ মে ২০২৫, ১৭:০৩

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশে নির্বাচনের তারিখ নিয়ে ইউরোপীয় জোটের কোনো ‘চাপ’ নেই। আর প্রয়োজনীয় সংস্কারের জন্য অন্তর্র্বতীকালীন সরকারকে ‘পর্যাপ্ত সময়’ দেওয়া দরকার বলে মনে করেন ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার। সোমবার (৫ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবে ডিপ্লোমেটিক করেসপন্ডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ডিক্যাব) আয়োজিত ‘ডিক্যাব টকে’ তিনি একথা বলেন।

রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার বলেন, ‘ইইউ মনে করে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক রূপান্তর বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক নির্বাচনের দিকে নিয়ে যাবে এবং আমরা নির্বাচনের তারিখ নিয়ে কোনও চাপ দিচ্ছি না। আমরা মনে করি, সংস্কার কাজের জন্য অন্তর্র্বতী সরকারকে যথেষ্ট সময় দিতে হবে। এর জন্য ন্যাশনাল কনসেনসাস কমিটি কাজ করছে এবং দেখা যাক, কতটুকু ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমি মনে করি আমার বলা দরকার এ সিদ্ধান্ত (নির্বাচন কবে) বাংলাদেশের ব্যাপার। আমরা নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক পালাবদল দেখছি, যাতে একটি মাইলফলকে পৌঁছানো যায়।

তিনি বলেন, অন্তর্র্বতী সরকারের বয়স নয় মাস হয়ে গেলেও নির্বাচন কবে হবে, সেই তারিখ এখানো বাংলাদেশ পায়নি। প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলে আসছেন, ভোট কবে হবে তা নির্ভর করবে কতটা সংস্কার করার সিদ্ধান্ত হবে তার ওপর।

রাখাইনে মানবিক করিডর নিয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে মাইকেল মিলার বলেন, উভয় পাশেই ভুক্তভোগীদের জন্য মানবিক সহায়তা প্রয়োজন। সবাই যেন সমানভাবে ত্রাণ সহায়তা পায় সেটা নিশ্চিত করতে হবে।

জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা জাতিসংঘের রিপোর্টকে সমর্থন করি। তাদের রিপোর্ট অত্যন্ত পরিষ্কার। এখন পরবর্তী পদক্ষেপ হচ্ছে— বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার মাধ্যমে যারা অপরাধ করেছে, তাদের বিচারের মুখোমুখি করা। এখানে দায়বদ্ধতা থাকতে হবে। তবে তিনি বলেন, দায়বদ্ধতার প্রক্রিয়া যেন অত্যন্ত স্বচ্ছ হয়।

মাইকেল মিলার বলেন, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে সংস্কার এখন বড় সুযোগ এনে দিয়েছে। এই সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে।  রাজনৈতিক দল ও অন্তর্র্বতী সরকার সংস্কারের লক্ষ্যে একসঙ্গে কাজ করবে বলে আমরা আশা করি।

অন্তর্র্বতী সরকারের গঠিত ১১টি সংস্কার কমিশন ইতোমধ্যে সরকারের কাছে তাদের সুপারিশ জমা দিয়েছে। এর মধ্যে মূল সুপারিশগুলোর বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে ইউনূস নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।

ডিক্যাব টকে মাইকেল মিলার বলেন, ঐকমত্য কমিশন এক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কতটা মতৈক্যে পৌঁছাতে পারে, তা দেখার অপেক্ষায় আছেন তারা।

মতৈক্য তৈরির চেষ্টায় এই কমিশন ‘কঠোর পরিশ্রম’ করছে মন্তব্য করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত বলেন, অন্তর্র্বতী সরকারের উচ্চাভিলাষী সংস্কার উদ্যোগকে সমর্থন করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

“আমরা আশা করি, সংস্কারগুলো খুবই স্পষ্টভাবে অগ্রাধিকারভিত্তিক এবং সুনির্দিষ্ট হবে। আমি যেভাবে বলেছি, এক্ষেত্রে আমাদের (ইইউ) অভিজ্ঞতা সহায়ক হতে পারে। এক্ষেত্রে আমাদের অর্থায়নেরও সুযোগ আছে, যা দিয়ে আমরা সহায়তা করতে পারি এবং পাশে দাঁড়ানোর রাজনৈতিক স্বদিচ্ছাও আছে।”

অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাজ করার প্রসঙ্গ ধরে তিনি বলেন, নির্বাচন যেন ‘আন্তর্জাতিক মানের’ হয়, সেই কার্যক্রম চলছে।

“আমরা চাই নির্বাচন যাতে অবাধ ও নিরপেক্ষ হয় এবং ফলাফল পুরোপুরি বিশ্বাসযোগ্য হয়। আমরা সেই সফলতার গল্প অংশ হতে চাই।”

মিলার বলেন, নির্বাচন যারা পর্যবেক্ষণ করবে, সেই সব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ইইউ চুক্তি করছে। জনগণকে ভোট এবং নির্বাচন বিষয়ে সচিতন করতেও কাজ চলছে।

বাংলাদেশ থেকে ইইউ’র দেশগুলোতে অর্থপাচার হয়েছে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘অর্থপাচারের ক্ষেত্রে ইইউ কাজ করবে না, বরং সদস্য দেশগুলোর বিচার বিভাগ কাজ করবে। সদস্য দেশগুলোর বিচার বিভাগকে প্রমাণাদি দিতে হবে অপরাধ সম্পর্কে এবং তারা সেগুলো বিবেচনা করবে। তবে, এই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে কয়েক বছর লেগে যায়।’

বাংলাদেশ ও ইইউ’র মধ্যে সম্পর্কের ভিত্তি হবে মৌলিক অধিকার ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার জীবদ্দশায় ইউরোপের প্রায় অর্ধেক দেশ কর্তৃত্ববাদ থেকে গণতন্ত্রের পথে এসেছে এবং এই কাজটি বাংলাদেশ এখন করছে।’

বাংলাদেশের জন্য এটি একটি বড় সুযোগ মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করা, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা এবং সুশীল সমাজকে গুরুত্ব দেওয়া। আমরা চাই, বাংলোদেশ তার অর্থনীতি উন্মুক্ত করুক— যাতে করে ইউরোপের কোম্পানিগুলো এখানে ব্যবসা করতে পারে। পানি, ডিজিটাল, পরিবহন, জ্বালানি, অবকাঠামোসহ অন্যান্য খাতে ইউরোপের কোম্পানিগুলো আগ্রহী বলে তিনি জানান।



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top