শনিবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৫ আশ্বিন ১৪৩২

ডেঙ্গুর ভয়াবহতা বাড়ছে, সেপ্টেম্বরেই রেকর্ড মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯:৫৪

ছবি: সংগৃহীত

বর্ষা শেষ হলেও দেশে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা কমছে না। বরং বসন্তের বাতাস বইলেও মশাবাহিত এ রোগ উল্টো অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। সাধারণত সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমতে শুরু করে, কিন্তু এবার পরিস্থিতি উল্টো। গত এক সপ্তাহে রাজধানীসহ সারাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন প্রায় সাড়ে তিন হাজার ডেঙ্গু রোগী। এ সময়ে সরকারি হিসাবে মারা গেছেন ২২ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ১৩ থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, শুধু সেপ্টেম্বরের প্রথম ১৯ দিনেই মারা গেছেন ৪৫ জন। যা মৌসুমের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে জুলাই মাসে মারা গিয়েছিলেন ৪১ জন।

ডেঙ্গুর প্রকোপ দীর্ঘায়িত হওয়ার কারণ

জনস্বাস্থ্য বিশ্লেষকরা বলছেন, মৌসুমি বায়ু, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার দুর্বলতা এবং জনসাধারণের অসচেতনতা—এই চারটি কারণে অক্টোবর-নভেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রকোপ থাকবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এবার গ্রামাঞ্চলে ডেঙ্গুর প্রভাব শহরের তুলনায় বেশি।

অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, ডেঙ্গু কমছে না প্রধানত তিনটি কারণে—
১. নিয়মিত বৃষ্টিপাতের ফলে জমে থাকা পানিতে এডিস মশার লার্ভা জন্ম নিচ্ছে।
২. গ্রামে প্লাস্টিকের ব্যবহার ও অপরিকল্পিত বাসস্থানের কারণে পানি জমছে।
৩. সিটি করপোরেশনের বাইরে পৌরসভা ও ইউনিয়নে কার্যকর মশক নিয়ন্ত্রণ নেই।

পরিসংখ্যান বলছে ভয়াবহ চিত্র

চলতি বছর জানুয়ারি থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪০ হাজার ৭০৯ জন রোগী। এর মধ্যে মারা গেছেন ১৬৭ জন। বিভাগভিত্তিক মৃত্যুর হিসাবে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায়—৮৩ জন। এরপর চট্টগ্রাম ও বরিশালে ২২ জন করে, ঢাকা উত্তর সিটিতে ১৯, রাজশাহীতে ১০, খুলনায় ৫, ময়মনসিংহে ৪ এবং ঢাকার সিটি এলাকার বাইরে ২ জন মারা গেছেন।

মাসভিত্তিক রোগীর সংখ্যায় জুলাইয়ে সবচেয়ে বেশি ভর্তি হন ১০ হাজার ৬৮৪ জন। আগস্টে ভর্তি হন ১০ হাজার ৪৯৬ জন, আর সেপ্টেম্বরের প্রথম ১৮ দিনে ভর্তি হয়েছেন ৯ হাজার ২৩৩ জন।

সর্বশেষ পরিস্থিতি

১৯ সেপ্টেম্বর নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৪৮ জন রোগী। তবে এদিন দেশে কারও মৃত্যু হয়নি। ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে বরিশালে ৪৩ জন, চট্টগ্রামে ৫৩, ঢাকার বাইরে বিভাগীয় এলাকায় ৫২, ঢাকা উত্তর সিটিতে ৩১, দক্ষিণ সিটিতে ৫৬, খুলনায় ৩৭ এবং ময়মনসিংহে ১৩ জন।

আশঙ্কা

অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ সতর্ক করে বলেন, ‘যেভাবে গ্রামে ডেঙ্গু ছড়াচ্ছে, এখনই নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে আগামী ৩০ থেকে ৪০ বছর গ্রামীণ জনপদে দীর্ঘমেয়াদি দুর্ভোগ তৈরি করবে।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ডেঙ্গুর পরিসংখ্যান সংরক্ষণ শুরু হয় ২০০০ সাল থেকে। এর মধ্যে ২০২৩ সাল ছিল সবচেয়ে ভয়াব- ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন আক্রান্ত হয়েছিলেন এবং মারা যান ১ হাজার ৭০৫ জন।



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top