ভূমিকম্প: বৈজ্ঞানিক কারণের পাশাপাশি ধর্মীয় সতর্কবার্তাও— ইসলামী দৃষ্টিতে কী বলা হয়েছে
ধর্ম ডেস্ক | প্রকাশিত: ২২ নভেম্বর ২০২৫, ১৮:৫৬
প্রাকৃতিক দুর্যোগের অন্যতম ভয়াবহ ঘটনা ভূমিকম্প। ভূতত্ত্ববিদদের মতে, সাধারণত তিন প্রধান কারণে ভূমিকম্প হয়ে থাকে— ভূপৃষ্ঠগত পরিবর্তন, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত এবং শিলাস্তর চ্যুতির কারণে সৃষ্ট কম্পন। তবে ইসলামী দৃষ্টিতে ভূমিকম্প শুধুমাত্র একটি প্রাকৃতিক ঘটনা নয়; বরং মানুষের অপকর্ম, অবাধ পাপাচার ও নৈতিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধেই এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে এক সতর্কতা।
ইসলাম কী বলে ভূমিকম্প সম্পর্কে
ইসলামী আলোচনায় বলা হয়, মানুষের পাপ ও অন্যায়ের কারণে বিভিন্ন বিপদ-আপদ নেমে আসে। সৎপথ থেকে বিচ্যুতি মানুষকে কিয়ামতের দিকে আরও দ্রুত ধাবিত করে— এমন সতর্কবার্তাও দিয়েছেন মহানবী মুহাম্মদ (সা.)।
এক হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন—
যখন সমাজে অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জন বাড়বে, জাকাতকে জরিমানা মনে করা হবে, ধর্মীয় জ্ঞান ছাড়া বিদ্যা অর্জিত হবে, সামাজিক সম্পর্ক ভেঙে পড়বে, দুর্বল লোকেরা নেতৃত্বে আসবে, মসজিদে শোরগোল বাড়বে— তখন ভূমিকম্প, ভূমিধস, রক্তিম ঝড়, পাথর বৃষ্টি এবং একের পর এক ভয়াবহ নিদর্শন দেখা দেবে। (তিরমিজি, হাদিস ১৪৪৭)
ইবনু কাইয়িম (রহ.) বলেন, আল্লাহ যখন মানুষকে সতর্ক করতে চান, তখন পৃথিবী যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে এবং বড় ধরনের ভূকম্পন ঘটে। এর উদ্দেশ্য— মানুষ তাওবার দিকে ফিরে আসুক।
কোরআনে ভূমিকম্পের প্রসঙ্গ
পবিত্র কোরআনে ভূমিকম্প সম্পর্কিত ‘যিলযাল’ নামে একটি পূর্ণ সূরা রয়েছে।
আল্লাহ বলেন—
“আমি ভয় দেখানোর জন্যই (আযাবের) নিদর্শনগুলো পাঠাই।”
— সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত ৫৯
আরও বলেন—
“আল্লাহ তোমাদের ওপর থেকে কিংবা পায়ের নিচ থেকে আজাব পাঠাতে সক্ষম।”
— সুরা আনআম, আয়াত ৬৫
মুফাসসিরদের ব্যাখ্যায় বলা হয়, পায়ের নিচ থেকে আজাব বলতে ভূমিকম্প, ভূমিধস ও ভূমিতে ধসে যাওয়ার ঘটনাকে বোঝানো হয়েছে।
ভূমিকম্প— কেয়ামতের অন্যতম আলামত
বুখারি শরিফে বর্ণিত আছে—
ইলম উঠিয়ে নেওয়া হবে, ভূমিকম্প বাড়তে থাকবে, ফিতনা বৃদ্ধি পাবে, খুনোখুনি বাড়বে এবং সম্পদ উপচে পড়বে— এগুলো কেয়ামতের কাছাকাছি সময়ের লক্ষণ। (হাদিস ৯৭৯)
পাপ ও বিপর্যয়ের সম্পর্ক
ইসলাম বলে—
“যে বিপদই তোমাদের ওপর আসে, তা তোমাদের নিজেদের কৃতকর্মের ফল।”
— সুরা শুরা, আয়াত ৩০
অতএব, বর্তমান সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ভূমিকম্পের বৃদ্ধি আল্লাহর সতর্কবার্তা হিসেবে বিবেচিত হয়। যা মানুষের জন্য তাওবা, আত্মসমালোচনা ও নৈতিকতায় ফিরে আসার আহ্বান।
ভূমিকম্পের সময় দোয়া
বিপদে নবী ইউনুস (আ.) যে দোয়া পড়তেন, তা মুসলিমদের জন্য অত্যন্ত উপকারী—
আরবি:
لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ، إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ
অর্থ:
“তোমাকে ছাড়া কোনও উপাস্য নেই। তুমি পবিত্র। নিশ্চয়ই আমি জালিমদের অন্তর্ভুক্ত।”
ভূমিকম্পের সময় ও পরে করণীয়
দরিদ্র-অসহায়দের সাহায্য করা
দান-সদকা বাড়ানো
সমাজে ব্যভিচার, অন্যায় ও অবিচার রোধ করার চেষ্টা করা
আল্লাহর কাছে বেশি বেশি তাওবা ও ক্ষমা প্রার্থনা
ঝড়, বন্যা, ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগে আত্মসমালোচনায় ফিরে আসা
খলিফা উমর ইবনে আবদুল আজিজ (রহ.) ভূমিকম্প হলে তাঁর গভর্নরদের উদ্দেশে দান-সদকা বাড়ানোর নির্দেশ দিতেন— ইতিহাসে এমন তথ্য পাওয়া যায়।
এনএফ৭১/ওতু
বিষয়:

পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।