প্রেম হচ্ছে একটি জটিল মনস্তাত্ত্বিক ব্যাপার
বিখ্যাত কয়েক ব্যক্তির তরুণী গার্লফ্রেন্ড, বয়সের ব্যবধান তবুও সম্পর্ক মধুর
রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ২ ডিসেম্বর ২০২২, ০৪:১৬

প্রেম হচ্ছে একটি জটিল মনস্তাত্ত্বিক ব্যাপার। ভালোবাসা বা প্রেমে পড়ার নির্ধারিত কোনো বয়স নেই! না মানলেও এটাই সত্যি। জেনেশুনে অসম বয়সীদের সঙ্গে স্বচ্ছ প্রেমের সম্পর্কের উদাহরণতো আশপাশে অনেক আছে। অপরপক্ষ সম্মত থাক বা না থাক- এই প্র্রেম কিন্তু মনের ভেতরে ঠিকই আন্দোলন তুলতে পারে। কিন্তু কারো মনের নিয়ন্ত্রণতো আরেকজনের হাতে নেই। এমনকি নিজের মনের ওপরই নিজের নিয়ন্ত্রণ থাকে না মানুষের। আর কে, কী বললো, সেটা ভেবে তো অন্তত প্রেম সম্ভব না।
মনের দরজা খোলা বা বন্ধের কোনো সময় আছে নাকি? অনেকেরই বক্তব্য- ভালবাসার কোনো বয়স নেই, সেটা হতে পারে যখন তখন। কিংবদন্তী লেখক হুমায়ূন আহমেদসহ বিশ্বের অনেক খ্যাতনামা ব্যক্তিদের মধ্যেও এমন উদাহরণ অহরহ। ফরাসি প্র্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ তো তার চেয়ে ২৫ বছর বড় বয়সী শিক্ষিকাকে নির্দ্বিধায় বিয়েও করেছেন।
যার প্রেমে পড়ছেন তার বয়স বা আপনার বয়স কতো, সেটার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রেমের ব্যাপ্তি কেমন। আপনার মন কী চাইছে, মানুষটির সঙ্গ ভালো লাগছে কিনা। আসলে ভালোবাসা কোনো নিয়ম মেনে চলে না। ভালোবাসা সঙ্গীর বয়স মেনে হয় না, নিজের বয়সও মুখ্য মনে হয় না। কেউ ৬০ বছর পেরিয়েও উদ্যম নিয়ে প্রেম করতে পারেন। তাদের ভেতরে কেমিস্ট্রি অনেকের তুলনায় চমৎকার হতে পারে।
প্রশ্ন আসতেই পারে- ভালোবাসায় বয়স কি সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ, নাকি নেহায়েৎই সেটা একটা সংখ্যা মাত্র? একজন মানুষ কখন, কোন কারণে, কিভাবে, কার প্রেমে পড়ে যায় তা আগে থেকে বলা খুবই মুশকিল। মানুষ তাঁর জীবনের যে কোনও সময়ে এসেই প্রেমে পড়তে পারেন! এরকম কোনও অর্থ নেই যে, ৩০ বছরের মধ্য়েই সম্পর্ক শুরু করতে হবে! এরপর কি মানুষ আর প্রেমে পড়তে পারেন না! কারও বয়স ৫০ পেরিয়ে গেলেও তিনি প্রেমে পড়তে পারেন। আর এটা খুবই স্বাভাবিক একটা ঘটনা। তবে কেবলমাত্র শারীরিক চাহিদার উপর ভিত্তি করো কোন সম্পর্কের পরিণতি শুভ হতে পারে না৷
কেউ বলতে পারেন না কে, কবে, কার প্রেমে পড়বেন। প্রেম বাল্যেও আসতে পারে, বার্ধক্যেও আসতে পারে। তবে, সব কিছুরই একটা গড় হিসেব থাকে। প্রেমে পড়ার গড় বয়স অনেকটাই নির্ভর করে সাংস্কৃতিক পরিপ্রেক্ষিতের উপরে। মার্কিন সমাজে যে বয়সে একজন প্রেমে পড়ে, ভারতে তেমনটা না-ও হত পারে। একই কথা প্রযোজ্য পুরুষ ও নারীর ক্ষেত্রে। পুরুষ যে বয়সে প্রেমে পড়ে, মেয়েরা তার অনেক আগেই পড়ে যান। এখানে বায়োলজি একটা বড় ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে, সন্দেহ নেই।
তবে, এমন অনেক উপাদান আছে যা এক যুগলের সম্পর্কের রসায়ন নির্ধারণ করে। আপনি একজন সাধারণ মানুষ হন বা বিখ্যাত সেলেব্রিটি এই উপাদানের সঙ্গে আপনিও পরিচিত। সমবয়সীদের মতামত, শখ, চাহিদার মিল থাকা খুব স্বাভাবিক। কিন্তু হলিউডে এমন অনেক বিখ্যাত পুরুষ আছেন যাদের বান্ধবীর সঙ্গে বয়সের অনেক ব্যবধান থাকা সত্ত্বেও তাদের সম্পর্ক এবং বোঝাপড়া অনেক মধুর। তাদের নিয়েই আজকের এই নিবন্ধ।
স্টিভেন টাইলার সবচেয়ে আইকনিক রক 'এন' রোল তারকাদের একজন। অ্যারোস্মিথের সঙ্গে থাকাকালীন কয়েক দশক ধরে তিনি অনেক পুরষ্কার অর্জন করেছেন এবং প্রচুর মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করেছেন। তাদের মধ্যে একজন ছিল তার সহকারী অ্যামি অ্যান প্রেস্টন । এই তরুণ পেশাদার রকস্টারের সঙ্গে ৪১ বছর বয়সের ব্যবধান সত্ত্বেও তিনি প্রেমময় সম্পর্কে যুক্ত ছিলেন।
লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও ছোটবেলা থেকেই বিনোদন শিল্পে কাজ শুরু করেছিলেন। এই কারণেই পুরো ডেটিং জীবনে সকলের দৃষ্টি তার দিকে ছিল। পর্দায় তার প্রতিভা অনস্বীকার্য,। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে তিনি অনেকের সাথে সুন্দর সম্পর্কের পথ খুঁজে পেয়েছিলেন। এই সম্পর্কের মধ্যে একটি ক্যামিলা মররোনের সাথে। ক্যাপ্রিওর সাথে তাকে শহরের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে দেখা গেছে। এই যুগলের ২৩ বছর বয়সের ব্যবধান রয়েছে।
আল পাসিনো কয়েক দশক ধরে হলিউডে বেশ সামঞ্জস্যপূর্ণ অভিনয় করে যাচ্ছেন। সর্বদা ব্যাচেলর পাসিনো রোমান্টিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বেশ কয়েকজন বিখ্যাত অভিনেত্রীর সাথে যুক্ত হয়েছেন। যদিও এই অভিনেত্রীদের মধ্যে অনেককেই তার বয়সের কাছাকাছি ছিল তবে, মনে হচ্ছে এই মুহূর্তে তিনি ইসরায়েলি চলচ্চিত্র তারকা মেইটাল দোহানের সাথে ডেটিং করছেন। মেইটাল তার চেয়ে ৩৯ বছরের জুনিয়র।
বর্ণাঢ্য এবং দীর্ঘ কর্মজীবনে শন পেন বেশ কয়েকজন বিখ্যাত নারীকে বিয়ে করেছেন। তাদের মধ্যে ম্যাডোনা এবং রবিন রাইট অন্যতম। বিচ্ছেদের পর তিনি নিজেকে অনেক কম বয়সী নারীর সাথে জড়ান। তাদের মধ্যে একজন লায়লা জর্জ। তিনি ২০১৯ সালে শনের সাথে যুক্ত হন।৷ তিনি এ লিস্ট অভিনেতা শনের চেয়ে চেয়ে ৩২ বছরের ছোট।
ডেনিস কায়েদ তিনটি ব্যর্থ বিবাহের পর একটি অর্থপূর্ণ সম্পর্ক ধরে রাখতে চেয়েছিলেন। ৬৫ বছর বয়সী এই অভিনেতা তার ডেটিং জীবনকে আরও সুন্দর করার একটি উপায় খুঁজে পেয়েছিলেন। অবশেষে তিনি লরা নামের একজনকে প্রস্তাব দেন। লরা সাভোইয়ের সঙ্গে দেখা করার মাত্র চার মাস পরে তারা বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন। ৩৯ বছর বয়সের ব্যবধান থাকা সত্ত্বেও তারা বিয়ে করেন এবং তাদের একসাথে বেশ সুখী মনে হয়।
টম ক্রুজ এবং কেটি হোমস উভয়েই হলিউডে বড় পর্দা এবং ছোট পর্দায় তাদের কাজের ছাপ রেখেছেন। কেটির আগে যদিও নিকোল কিডম্যান এবং মিমি রজার্সের সঙ্গে টমের সম্পর্ক ছিল। টম ক্রুজ নিজেকে ১৬ বছরের কম বয়সী একজনর জন্য নিজেকে উপযুক্ত মনে করেছিলেন। পরবর্তীতে এই যুগল আলাদা হয়ে যান। এক্ষেত্রে বয়সের পার্থক্য কোন সমস্যা ছিল না।
পিট কুক অনেক বিখ্যাত কেউ ছিলেন না। কিন্তু ক্রিস্টি ব্রিঙ্কলিকে বিয়ে করার পর এই স্থপতি লাইমলাইটে চলে আসেন। বিবাহবিচ্ছেদের পরে পিট তার প্রাক্তনের চেয়ে কিছুটা কম বয়সী নারীদের সাথে ডেটিং শুরু করেছিলেন।তিনি ২১ বছর বয়সী আলবা জানকোর প্রেমে পড়েন । তাদের বয়সের ব্যবধান ৩৯ বছর এবং আলবা পিটের মেয়ের চেয়েও ছোট।
জ্যাক ব্রাফ কির্স্টেন ডানস্ট এবং ড্রু ব্যারিমোর সহ বড় তারকাদের সাথে সম্পর্কে যুক্ত ছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি অনেক কম বয়সী অভিনেত্রীর সাথে সম্পর্কে জড়ান। জ্যাক ব্রাফ ২০১৯ সাল থেকে ফ্লোরেন্স পুগের সাথে সম্পর্কে রয়েছেন। তাদের বয়সের ব্যবধান ২১। ব্ল্যাক উইডো তারকা এবং তার প্রেমিককে অনেক অনুষ্ঠানে কটাক্ষ্য শুনতে হয়েছে। কিন্তু তাদের মধ্যে সুসম্পর্ক রয়েছে বলে জানা যায়।
ড্যান কুক বেশ জনপ্রিয় একজন কৌতুক অভিনেতা যিনি যেকোনো বিষয়কে শীর্ষে রাখতে পছন্দ করেন। সম্ভবত সে কারণেই তিনি কম বয়সী নারী কেলসি টেলরকে সম্পর্কের জন্য বেছে নিয়েছিলেন। তারা বেশ কিছুদিন ধরে একসাথে ছিলেন। কুকের বাড়িতে এক রাতে দেখা করার পর দুজনের মধ্যে দ্রুত সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এমনকি ২৬ বছর বয়সের ব্যবধান সত্ত্বেও তাদের মধ্যে অনেক মিল রয়েছে।
এছাড়া হলিউডের অনেক তারকাই বয়সের বেশি ব্যবধানে সম্পর্ক তৈরি করেন। তাদের মধ্যে মাইকেল শিন এবং আনা লুন্ডবার্গ (২৫ বছর), কেলসি গ্রামার এবং কায়েট ওয়ালশ (২৫ বছর), রবিন থিক এবং এপ্রিল লাভ গেরি (১৮ বছর), ডেভিড ফস্টার এবং ক্যাথরিন ম্যাকফি (৩৪ বছর), পি. ডিডি এবং লরি হার্ভে (২৮ বছর), উইলমার ভালদেরামা এবং ডেমি লোভাটো (১২ বছর), মেল গিবসন এবং রোজালিন্ড রস (৩৫ বছর), বেন অ্যাফ্লেক এবং আনা ডি আরমাস (১৬ বছর) অন্যতম।
বিষয়:
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।