পশুপাখিরা কি ভূমিকম্পের আভাস দিতে পারে?

তুরস্কের ভয়াবহ ভূমিকম্পের আভাস দিয়েছিল পাখির ঝাঁক

রাজিউর রাহমান | প্রকাশিত: ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৩, ০৬:২৫

তুরস্কের ভূমিকম্পের আভাস

শক্তিশালী ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত তুরস্ক ও সিরিয়ায় মৃত্যুর মিছিল যেন থামছেই না। গত ৬ই ফেব্রুয়ারি তুরস্কের ভয়ঙ্কর ভূমিকম্পের শিকার হয় ১৫ হাজারের বেশি মানুষ। গত সোমবার ভোর ৪টা ১৭ মিনিটের দিকে আঘাত হানে ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্প। এতে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় দুই দেশের আবাসিক ভবনসহ বহু স্থাপনা। বেশ কয়েকটি শহর ভূমিকম্পের কোপে তছনছ হয়ে গেছে।

ভোরের দিকে বেশিরভাগ মানুষ যখন অঘোরে ঘুমিয়ে ছিলেন, ঠিক তখনই শক্তিশালী ভূমিকম্পের কারণে বেশ কয়েকবার তুরস্কের মাটি কেঁপে উঠেছে। ২০২৩ এর এটাই সবচেয়ে বড় ভূমিকম্প বলে মনে করা হচ্ছে। ভূমিকম্পের আগের এবং পরের বিভিন্ন ভিডিও এখন সোশ্যাল মিডিয়াতে ভাইরাল হয়েছে।

অনেকেরই মনে হতে পারে, যদি আগেই থেকে বোঝা যেত ভূমিকম্প হতে চলেছে, তাহলে হয়তো আগে থেকেই সাবধান হওয়া যেতো। কিন্তু এমনটা কোন ক্ষেত্রেই হয় না। বিজ্ঞান এতো উন্নত হওয়া সত্বেও ভূমিকম্পের আভাস আমরা আগে থেকে অনুভব করতে পারি না। তবে বলা হয়ে থাকে, প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগের আগে বিপদ বুঝতে পারে পশু-পাখিরা।

আশ্চর্যের ব্যাপার হল, তুরস্কে ভূমিকম্পের ঠিক আগে একটি ভিডিও ক্লিপে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে পাখিদের অস্থিরতা এবং অদ্ভুত আচরণ দেখা গেছে। বিক্ষিপ্তভাবে এদিক-ওদিক উড়ে বেড়াচ্ছিল পাখিরা। তাদের গতিবিধির মধ্যেও ছিল অস্বাভাবিকতা। উড়ে বেড়ানোর পাশাপাশি পাখিদের ডাকের মধ্যে উদ্বিগ্নভাব। ভিডিওটি শেয়ার হওয়ার পর এটা খুব পরিষ্কার যে, তারা ভয়ঙ্কর কিছু একটা ঘটতে চলেছে তার আভাস পেয়েছিল।

ভোরের দিকে পাখিরা সাধারণত নিজেদের খাবারের সন্ধানে বাসা থেকে বেরিয়ে পড়ে। কিন্তু এই ক্ষেত্রে ব্যাপারটা অন্যরকম। হয়ত তাদের মধ্যে এমন কোন সিক্সথ সেন্স কাজ করে যার মাধ্যমে তারা ভূমিকম্পের আভাস পেয়ে থাকে এবং সেই জন্যই ভূমিকম্পের ঠিক আগে তাদের মধ্যে এতো অস্থিরতা লক্ষ্য করা গেছে।

ভিডিওটির ক্যাপশনে লেখা হয় তুরস্কে, ভূমিকম্পের ঠিক আগে পাখিদের মধ্যে অদ্ভুত আচরণ দেখা গেছে। টুইটারে ভিডিওটি প্রকাশিত হওয়ার পর ওই পোস্টের মন্তব্যের ঘরে এক ব্যবহারকারী লিখেছেন, পশুপাখি, সামুদ্রিক প্রাণীরা প্রতিটি দুর্যোগের আগে আঁচ করতে পারে। মানবজাতি তাদের আঁচ করার সক্ষমতা হারিয়েছে। অন্য একজন লিখেছেন, ওরা (পাখিরা) ওড়াওড়ি করার পর একটি গাছের ওপর গিয়ে বসেছে। আমার আশপাশের এলাকায় কাকেরা প্রতিদিনই এ কাজ করে।

যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস-এর এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, শক্তিশালী মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানার আগে প্রাণীদের উদ্ভট আচরণ করার ধারণাটি অনেক পুরোনো। খ্রিস্টপূর্ব ৩৭৩-এ গ্রিসে ভয়াবহ ভূমিকম্পের কয়েক দিন আগে ইঁদুর, বেজী, সাপের মতো প্রাণীরা এলাকা ছেড়ে চলে গিয়েছিল।

যেসব প্রাণী মাটির কাছাকাছি বসবাস করে তারা ভূমিকম্প হওয়ার আগে মাটির গতিবিধি অনুভব করতে পারে। মানুষ ভূমিকম্প টের পাওয়ার আগেই মৃদু ধরনের কম্পন হয় যেটা শুধু কুকুরের মতো কিছু প্রাণী বুঝতে পারে।

হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, পশুপাখিরা বিভিন্নভাবে ভূমিকম্পের আভাস পেতে পারে। কিছু প্রাণী ভূমিকম্পের আগে মাটিতে তড়িৎচুম্বকীয় পরিবর্তন বুঝতে পারে। কেউ কেউ বায়ুমণ্ডলীয় চাপের পরিবর্তন শনাক্ত করতে পারে। ভূমিকম্পের আগে বায়ুমণ্ডলীয় চাপের পরিবর্তন হতে পারে।

শেয়ার হওয়ার পর থেকে ভিডিওটি ৬.৫ মিলিয়ন ভিউস এবং ৩৬. ৭ হাজার লাইকস অর্জন করেছে। সোশ্যাল মিডিয়াতে ভিডিওটি ছড়িয়ে যাওয়ার পর এই ঘটনাটি নেটিজেনদের হতবাক করে দিয়েছে।




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top