ভূমিকম্পের অষ্টম দিনে জীবিত উদ্ধার ৬ বছরের শিশু
১৭৮ ঘণ্টা পর ধ্বংসস্তূপ থেকে ৭০ বছরের বৃদ্ধা উদ্ধার
রাজিউর রাহমান | প্রকাশিত: ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৩, ১১:০৯
তুরস্ক-সিরিয়ায় আঘাত হানা ভূমিকম্পে ধ্বংস হয়েছে হাজার হাজার ভবন। এসব ভবনের নিচে এখনও অনেকেই আটকে আছেন। তবে তারা জীবিত নাকি মৃত সেই তথ্য উদ্ধারের আগ পর্যন্ত জানার উপায় নেই। ভূমিকম্প আঘাত হানার এক সপ্তাহের বেশি সময় পেরিয়ে যাওয়ায় এখন আটকে পড়া লোকজনকে জীবিত উদ্ধারের আশা ক্ষীণ হয়ে আসছে। তবে এর মাঝেই অলৌকিকভাবে জীবিত উদ্ধারের ঘটনাও ঘটছে আজ। ভূমিকম্পের ধ্বংসস্তূপে মিলছে প্রাণের সন্ধান।
এবার ১৭৮ ঘণ্টা পর তুরস্কের হাতায়া প্রদেশে ৭০ বছর বয়সী এক নারীকে উদ্ধার করা হয়েছে। সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জীবিত উদ্ধার হওয়া ওই নারীর নাম নুরে গুরবাজ। তিনি হাতায়া প্রদেশে ভূমিকম্পে ভেঙে পড়া একটি তিন তলা ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে ছিলেন।
এদিকে ভূমিকম্প আঘাত হানার প্রায় ১৭৭ ঘণ্টা পর একইদিনে হাতায়া প্রদেশে দেরিয়া একদোগান নামের ২৬ বছর বয়সী এক যুবককেও জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। বার্তা সংস্থা আনাদুলোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভূমিকম্পের আঘাতে দক্ষিণাঞ্চলীয় হাতায়া প্রদেশের একটি ভবনের ধ্বংসাবশেষের নিচ থেকে ওই যুবককে জীবিত উদ্ধার করেছেন উদ্ধারকর্মীরা।
এদিকে, একই দিনে তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলীয় আদিয়ামান শহরের এক অ্যাপার্টমেন্টের ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে ৬ বছর বয়সী এক শিশুকে জীবিত উদ্ধার হয়েছে। দেশটির একজন মন্ত্রী বলেছেন, ধ্বংসাত্মক ভূমিকম্পে বিপর্যস্ত আদিয়ামান শহরের একটি ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে আজ ছয় বছর বয়সী এক কিশোরীকে উদ্ধার করা হয়েছে। ভূমিকম্প আঘাত হানার ১৭৮ ঘণ্টারও বেশি সময় পর ওই কিশোরী জীবিত উদ্ধার হয়েছে।
সিএনএন বলছে, সোমবারও ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকেপড়াদের উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। যদিও ত্রাণ সংস্থা ও কর্তৃপক্ষ সতর্ক করে বলেছে, আটকেপড়াদের জীবিত উদ্ধারের সম্ভাবনা কমে যাচ্ছে।
এদিকে, তুরস্ক-সিরিয়ায় আঘাত হানা ভয়াবহ ভূমিকম্পে মৃত্যুর সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে। সোমবার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ৩৬ হাজার ছাড়িয়েছে। তুরস্কের পক্ষ থেকে সোমবার বলা হয়েছে, প্রাণহানির সংখ্যা ৩১ হাজার ৬৪৩ জনে পৌঁছেছে। অন্যদিকে সিনিয়ার চার হাজার ৫৭৪ জনের নিহতের সংখ্যা নিশ্চিত করা হয়েছে।
এদিকে, বৈরী আবহাওয়া আর প্রতিকূল পরিস্থিতির মাঝেই সিরিয়া-তুরস্কে উদ্ধার অভিযানে অংশ নিয়েছে বিশ্বের প্রায় ১০০টি দেশ। তবে সময় গড়িয়ে যাওয়ার সাথে সাথে উভয় দেশে উদ্ধারের গতি ঝিমিয়ে পড়ছে। ফলে ধ্বংস হয়ে যাওয়া হাজার হাজার ভবনের নিচে আটকে পড়া মানুষকে জীবিত উদ্ধারেরও আশাও ফুরিয়ে আসছে।
সোমবার জাতিসংঘের দাতব্যবিষয়ক প্রধান মার্টিন গ্রিফিথস সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলের আলেপ্পো শহর পরিদর্শন করেছেন। ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত এই নগরীর মানুষের মাঝে ত্রাণ সহায়তা সরবরাহ করা এখন বিশ্বের দায়িত্ব বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
গত সোমবার ভোরে মানুষ ঘুমিয়ে ছিলেন, ঠিক তখনই তুরস্ক-সিরিয়া সীমান্তে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। এর উৎপত্তিস্থল ছিল সিরিয়া সীমান্তবর্তী গাজিয়ানতেপ শহরের কাছে। পরে দুপুরে ৭ দশমিক ৬ মাত্রার আরেকটি ভূমিকম্প আঘাত হানে। এর পরদিন মঙ্গলবার তুরস্কের মধ্যাঞ্চলে ৫ দশমিক ৬ মাত্রার আরেকটি ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। এরআগে, ১৯৩৯ সালে তুরস্কে শক্তিশালী ভূমিকম্পের আঘাতে অন্তত ৩৩ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়।
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।