বাড়ি পুনর্গঠনের কাজ শুরু

তুরস্ক-সিরিয়ায় ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়াল

রাজিউর রাহমান | প্রকাশিত: ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৩, ০৬:০২

তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্প

তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে। দুই দেশ মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ৫০ হাজার ১৩২ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। এরমধ্যে তুরস্কেই ৪৪ হাজার ২১৮ জন। আর প্রতিবেশী সিরিয়ায় এই সংখ্যা ৫ হাজার ৯১৪। খবর আল জাজিরার। শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) তুরস্কের দুর্যোগ ও জরুরি ব্যবস্থাপনা বিভাগ মৃতের সংখ্যা হালনাগাদের এই তথ্য জানিয়েছে।

চলতি মাসের শুরুর দিকে তুরস্ক ও সিরিয়ার সীমান্তবর্তী অঞ্চলে বড় দুটি ভূমিকম্প আঘাত হানে। এরপর আরও অন্তত ৯ হাজার আফটারশক আঘাত হেনেছে। গত সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সবশেষ আফটারশকটি। রিখটার স্কেলে যার মাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৪। এতে আরও ৬ জনের মৃত্যু হয়। স্মরণকালের ওই ভূমিকম্পের পর দুই সপ্তাহ পার হয়েছে। এরইমধ্যে উদ্ধার অভিযান শেষ হয়ে গেছে। এখন এক্সক্যাভেটর দিয়ে সরানো হচ্ছে ধ্বংসস্তূপ। এর ফলে বেরিয়ে আসছে শত শত মরদেহ।

ভূমিকম্পে তুরস্কের ১১টি প্রদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ৮৪ হাজারের বেশি ভবন ধ্বংস হয়েছে। জাতিসংঘের উন্নয়ন বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বিগত শতাব্দীর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ এই ভূমিকম্পে তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলে দেড় কোটি মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে।

তুর্কি কর্তৃপক্ষ আরও বলেছে, কমপক্ষে ৪ লাখ ১২ হাজার ইউনিট সম্বলিত ১ লাখ ১৮ হাজার ভবন ধসে পড়েছে কিংবা এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যে, সেগুলো ভেঙে ফেলা ছাড়া উপায় নেই। তুর্কি প্রেসিডেন্ট ওই এলাকায় দুই লাখ বাড়ি তৈরির ঘোষণা দিয়েছেন। আগামী মার্চ মাসেই শুরু হবে এসব ভবন নির্মাণ। তবে জাতিসংঘ বলছে, এসব অঞ্চলে অন্তত ৫ লাখ নতুন বাড়ি তৈরি করা প্রয়োজন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ভূমিকম্পে ২ কোটি ৬০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার জন্য ১০০ কোটি ডলার সহায়তা চেয়েছে জাতিসংঘ। এদিকে তুরস্ক সরকার জানিয়েছে, ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত এলাকায় মার্চের প্রথম দিকে ২ লাখের বেশি বাড়ি নির্মাণ শুরু করবে এবং এক বছরের মধ্যে এই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করবে।

মার্কিন ব্যাংক জেপি মরগানের অনুমান, তুরস্কে বাড়িঘর ও বিভিন্ন স্থাপনা পুনর্র্নিমাণের খরচ দাঁড়াবে আড়াই হাজার কোটি ডলারে। ইউএনডিপি বলছে, ভূমিকম্প ১৫ লাখ মানুষকে গৃহহীন করেছে এবং নতুন ৫ লাখ বাড়ি দরকার বলে তাদের অনুমান। গত সপ্তাহে জাতিসংঘ তুরস্কের জন্য একশ কোটি ডলারের তহবিল গঠনের যে আবেদন জানিয়েছে, সেখান থেকে ১১ কোটি ৩৫ লাখ ডলারও চেয়েছে ইউএনডিপি, এই অর্থ ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজে লাগাতে চাইছে তারা।

ভূমিকম্প বিধ্বস্ত দুই দেশে এখন শুধুই স্বজনহারাদের কান্নার রোল। যারা বেঁচে গেছেন, তাদের খাবার, পানি ও ওষুধ সরবরাহ করতে নাজেহাল অবস্থা আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংগঠনগুলোর। পর্যাপ্ত খাবার এবং পানি ছাড়াই রাস্তায় দিন কাটাচ্ছে গৃহহীন মানুষ। প্রবল শৈত্যপ্রবাহ, ঠাণ্ডা এবং তুষারপাতের মধ্যে উদ্ধারের কাজ চালিয়ে যাওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। এরআগে, ১৯৩৯ সালে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে তুরস্কের পূর্ব এরজিনকান প্রদেশে ৩৩ হাজার মানুষ নিহত হয়েছিল।




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top