মিয়ানমারে মঠে সেনাবাহিনীর হামলায় নিহত ৩০

রাজিউর রাহমান | প্রকাশিত: ১৪ মার্চ ২০২৩, ০১:৩৯

মিয়ানমারে মঠে সেনাবাহিনীর হামলা

মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় শান রাজ্যের একটি মঠে ৩০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যার অভিযোগ করেছে একটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী। শনিবার সেনারা নান নিন গ্রামে গোলাবর্ষণ করে বলে দাবি করেছে ক্যারেনি ন্যাশনালিটিজ ডিফেন্স ফোর্স (কেএনডিএফ)।

দুই বছর আগে এক অভ্যুত্থানে জান্তা ক্ষমতা দখলের পর থেকে মিয়ানমারে সামরিক ও সশস্ত্র প্রতিরোধ গোষ্ঠীর মধ্যে ক্রমবর্ধমান সংখ্যক প্রাণঘাতী যুদ্ধ দেখা গেছে। রাজধানী নেপিদো এবং থাইল্যান্ডের সীমান্তবর্তী শান রাজ্যে কিছু ভয়াবহ লড়াই হয়েছে।

কেএনডিএফ জানিয়েছে, শনিবার স্থানীয় সময় বিকেল ৪টার দিকে গোলাগুলির পরে জান্তার বিমান বাহিনী এবং আর্টিলারি গ্রামে প্রবেশ করে। তারা মঠের ভেতর লুকিয়ে থাকা গ্রামবাসীকে হত্যা করে। এতে অন্তত ৩০ জন বেসামরিক নাগরিক এবং তিনজন বৌদ্ধ ভিক্ষু নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে দলটি।

স্থানীয় সংবাদপত্র কান্তরাওয়াদ্দি টাইমস কেএনডিএফ-এর একজন মুখপাত্রকে উদ্ধৃত করে বলেছে, সেনাবাহিনী ভিক্ষুসহ সবাইকে মঠের সামনে নির্মমভাবে গুলি করে। কেএনডিএফ-এর একটি ভিডিওতে অন্তত ২০টি মৃতদেহ মঠের পাশে স্তূপ করা অবস্থায় দেখা গেছে, যার মধ্যে রয়েছে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের কমলা রঙের পোশাক পরা মরদেহ।

মৃতদেহগুলোতে একাধিক গুলির আঘাতের চিহ্ন ছিল বলে মনে হচ্ছে। ভিডিওটিতে মঠের দেয়ালে বুলেটের ছিদ্র দেখা গেছে। আশেপাশের কিছু বিল্ডিং এবং বাড়িঘরও পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে, যাকে কেএনডিএফ সেনাবাহিনীর আক্রমণ বলে অভিযোগ করেছে।

এসব ঘটনার বিশদ বিবরণ যাচাই করা কঠিন, তবে নিরস্ত্র বেসামরিকদের বিরুদ্ধে আক্রমণের বর্বর প্রকৃতি মিয়ানমারের এই অংশে নতুন নয়। যেখানে অভ্যুত্থানের পর থেকে সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিরোধ দেখা গেছে।

মিয়ানমার গত কয়েক দশক ধরে গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে, যা ২০২১ সালে অভ্যুত্থানের পর থেকে আরও খারাপ পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে। এতে প্রায় দেড় মিলিয়ন মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে, ৪০ হাজার ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে, আট মিলিয়ন শিশু আর স্কুলে যাচ্ছে না এবং ১৫ মিলিয়ন লোক বিপজ্জনকভাবে খাদ্যের অভাবে রয়েছে বলে ধারণা করছে জাতিসংঘ।

পর্যবেক্ষণ গ্রুপ অ্যাসিস্টেন্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজোনারস অনুসারে, ভিন্নমতের বিরুদ্ধে জান্তার দমন অভিযানে দুই হাজার ৯০০ জনেরও বেশি লোক নিহত হয়েছে।

বিবিসি বলছে, ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া সম্ভব হয়নি, তবে দেশটির এ অংশে নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিকদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বর্বর হামলা নতুন নয়। সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকেই এ অঞ্চলের বিদ্রোহীগোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে একাধিক অভিযান চালিয়েছে সামরিক জান্তা।

আরএনডিএফ বলছে, ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে জান্তা সেনারা নান নিন ও স্থানীয় মঠের দিকে অগ্রসর হওয়ায় এখানে সংঘর্ষের মাত্রা বেড়েছে। নান নিন গ্রামটি শান রাজ্য থেকে কায়াহ রাজ্যে যাওয়ার প্রধান রুট। জান্তা সরকারের বিশ্বাস, এ রাস্তা দিয়েই তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোকে অস্ত্র সরবরাহ করা হয়।

এটি এমন একটি এলাকা, যেখানে পা-ও, শান ও কারেনি জনগণ বসবাস করে। পা-ও ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ও এর সশস্ত্র শাখা এ এলাকায় জোরালোভাবে জান্তাপন্থী। স্থানীয়সূত্রে জানা যায়, দেশটির সেনাবাহিনী এ অঞ্চলে পা-ও মিলিশিয়াদের শক্তিশালী করার জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে, যাতে এলাকাটি নিয়ন্ত্রণকারী বিরোধীদের প্রতিহত করা যায়।

২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারের ক্ষমতা দখল করে দেশটির সেনাবাহিনী। এর পরপরই গ্রেফতার করা হয় ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) নেতা নোবেলজয়ী অং সান সু চিকে। সে সময় জান্তা সরকার ক্ষমতা দখল করলেও, দেশটির সিংহভাগ জনগণ তা মেনে নেয়নি।

ক্ষমতা দখলের পর থেকেই জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র বিক্ষোভ, সরকারি কাজকর্ম বয়কটসহ সশস্ত্র বিদ্রোহের মাধ্যমে প্রতিবাদ শুরু করে দেশটির বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। এখনো কিছুদিন পরপরই বিদ্রোহী গোষ্ঠী ও জান্তা বাহিনীর লড়াইয়ের খবর পাওয়া যাচ্ছে।




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top