পাকিস্তানে পুলিশের গাড়িতে বোমা হামলা, নিহত ৪
রাজিউর রাহমান | প্রকাশিত: ১১ এপ্রিল ২০২৩, ২২:১৭
পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ বেলুচিস্তানের কোয়েটায় পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে চালানো বোমা হামলায় অন্তত চারজন নিহত হয়েছেন। সোমবার (১০ এপ্রিল) দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় কোয়েটায় এ ঘটনা ঘটে। খবর: আল জাজিরার।
স্থানীয় কর্মকর্তারা বলেছেন, বেলুচিস্তানের রাজধানী কোয়েটার একটি ব্যস্ত বাজারে একটি পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে চারজন নিহত হন। বেলুচিস্তানে একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপ ও বেশ কয়েকটি ইসলামপন্থী সশস্ত্র গ্রুপ রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, তারাই এই বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তা আজফার মেহসার বলেছেন, প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, একটি ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইসের মাধ্যমে বিস্ফোরণটি ঘটানো হয়েছে। ডিভাইসটি একটি মোটরসাইকেলে লাগানো ছিল এবং রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে সেটির বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। তিনি জানান, বিস্ফোরণে চার ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে দুজন পুলিশ কর্মকর্তা রয়েছেন।
এদিকে, বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) এই হামলার দায় স্বীকার করেছে। তারা বলেছে, তদন্তের অজুহাতে বেলুচ নাগরিকদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করার কারণে পুলিশকে হত্যা করা হয়েছে। তবে তারা বেসামরিক দুই নাগরিকের মৃত্যুর বিষয়টি উল্লেখ করেনি।
কোয়েটার স্যান্ডেমান প্রাদেশিক হাসপাতালের মুখপাত্র ওয়াসিম বেগ মৃত্যুর সংখ্যা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, বেসামরিক হতাহতদের মধ্যে একটি পাঁচ বছর বয়সী মেয়েও রয়েছে।
পাকিস্তানের বৃহত্তম প্রদেশ বালুচিস্তান প্রাকৃতিক ভাবে সবচেয়ে সম্পদশালী। ধীরে ধীরে তা বেহাত হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ বালোচ নাগরিকদের। ‘চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর’ (সিপিইসি) তৈরির পরে গত কয়েক বছরে তা আরও বেড়ে চলেছে।
পশ্চিম চীনের শিনজিয়াং প্রদেশের কাশগড় থেকে শুরু হওয়া এই করিডর কারাকোরাম পেরিয়ে প্রবেশ করেছে পাকিস্তানে। প্রায় ১,৩০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে শেষ হয়েছে বালুচিস্তান প্রদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে চীন নিয়ন্ত্রিত গ্বদর বন্দরে।
ওই রাস্তা ব্যবহার করেই ইসলামাবাদ এবং বেজিংয়ের শাসকেরা বালুচিস্তানের প্রাকৃতিক সম্পদ লুট করছে বলে ‘বালুচ ন্যাশনালিস্ট আর্মি’ (বিএনএ), ‘বালুচিস্তান লিবারেশন আর্মি’ (বিএলএ) এর মতো স্বাধীনতাপন্থী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর অভিযোগ।
বালুচিস্তানের গান্ধী বলে পরিচিত স্বাধীনতাপন্থী নেতা আবদুল কাদির বালোচ বেশ কিছুদিন আগে দিল্লি এসে বলেছিলেন, তারা চান ১৯৭১ সালে ভারত যেভাবে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছিল, সেভাবেই পাশে দাঁড়াক বালুচিস্তানের।
২২ কোটি জনসংখ্যার পারমাণবিক শক্তিধর দেশ পাকিস্তানে গত কয়েকমাস ধরে জঙ্গি হামলা বেড়ে চলেছে, বিশেষ করে গত বছর জঙ্গি গোষ্ঠী তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের সঙ্গে সরকারের আলোচনা ভেঙে যাওয়ার পর থেকে।
চলতি বছর এই গোষ্ঠীটি ও তাদের উপদলগুলো দেশটিজুড়ে হামলার ঢেউ বইয়ে দিয়েছে। এগুলোর মধ্যে পেশোয়ার শহরের একটি মসজিদে চালানো আত্মঘাতী বোমা হামলা অন্যতম। এ হামলায় শতাধিক মানুষ নিহত হয়, যাদের অধিকাংশ পুলিশ সদস্য।
পরিস্থিতি মোকাবেলায় অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকটের মধ্যেই দেশব্যাপী জঙ্গিবিরোধী নতুন সামরিক অভিযান শুরু করতে যাচ্ছে পাকিস্তান। ইসলামপন্থি জঙ্গিদের শিকড় উপড়ে ফেলার লক্ষ্য নিয়ে এ অভিযান শুরু হচ্ছে বলে শুক্রবার জানিয়েছে দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা কমিটি।
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।