এবার ইসরায়েলিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিল যুক্তরাষ্ট্র

রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ২০:০৭

ছবি: সংগৃহীত

ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে শান্তি, নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতা নষ্ট করছে এমন ব্যক্তিদের (ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারী) ওপর মার্কিন ভিসা নীতির নতুন ঘোষণা এসেছে। এই বিষয়ে অ্যান্টনি জে ব্লিনকেন একটি বিবৃতি দিয়েছেন। মঙ্গলবার (০৫ ডিসেম্বর) এক প্রেস বিবৃতিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি জে. ব্লিঙ্কেন এ নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে জানান।

বিবৃতিতে ব্লিনকেন বলেন, ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে শান্তি নষ্ট করে, এমন পদক্ষেপের বিরোধিতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সব সময় করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য, ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের আক্রমণ এবং ইসরায়েলিদের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনি আক্রমণ।

ব্লিনকেন বলেছেন, আমরা পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে সহিংস হামলাকারীদের (ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারী) বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য ইসরায়েলি সরকারকে জোর দিয়েছি। মার্কিন প্রেনিডেন্ট বাইডেনও যেমন বার বার বলেছেন, আক্রমণগুলো অগ্রহণযোগ্য। গত সপ্তাহে ইসরায়েলে গিয়ে আমি স্পষ্ট করে বলেছিলাম, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের নিজস্ব কর্তৃপক্ষের অধীনে সব ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট আজ(০৫ ডিসেম্বর) থেকে পশ্চিমতীরে শান্তি, নিরাপত্তা বা স্থিতিশীলতা নষ্ট করার সঙ্গে জড়িত আছেন, এমন ব্যক্তিদের ওপর নতুন একটি ভিসা বিধিনিষেধ প্রয়োগ করেছে। সহিংসতামূলক কাজ বা অন্যান্য কর্মকাণ্ডের মাধ্যেমে বেসামরিক নাগরিকদের প্রয়োজনীয় মৌলিক পরিষেবা নিতে বাধা দেয়, এমন ব্যক্তিসহ তাদের পরিবারের সদস্যরাও এই বিধিনিষেধের অধীনে থাকতে পারেন।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, আমরা পশ্চিম তীরে বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে ঘটা সহিংসতার জবাবদিহি চাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাব। সেখানে বিবেচনা করা হবে না অপরাধী কোন দেশের।

ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের চরমপন্থীদের হামলা থেকে রক্ষা করার জন্য ইসরায়েলকে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। এই বিষয়টি স্পষ্ট করার জন্য আমরা ইসরায়েলি নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। একইভাবে ইসরায়েলিদের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনি আক্রমণ ঠেকাতেও কিছু করতে হবে, তা স্পষ্ট করার জন্য আমরা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সম্পর্ক রাখব।

ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি, উভয় কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব পশ্চিম তীরে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা। পশ্চিম তীরের অস্থিতিশীলতা ইসরায়েলি এবং ফিলিস্তিনি উভয় পক্ষের ক্ষতি করে। এর জন্য দায়িদের জবাবদিহি করতে হবে বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

৭ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখণ্ডে হামলা চালায় মুক্তিকামী ফিলিস্তিনিদের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। এতে ১৪০০ ইসরায়েলি নাগরিক প্রাণ হারায় জবাবে গাজা উপত্যকায় নির্বিচারে হামলা শুরু করে ইসরায়েল। বিমান হামলা ও স্থল অভিযানে ১৩ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন ২৫ হাজারেরও বেশি। তাদের বেশিরভাগই বেসামরিক।

সামরিক হতাহত এড়াতে বিশ্বজুড়ে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানো হচ্ছিল। হামাসের পক্ষ থেকেও প্রথম এমন আভাস মিলে মঙ্গলবার। ২২ নভেম্বর মধ্যস্থতাকারী কাতার জানায়, বেশ কিছু শর্ত মেনে দুই পক্ষ রাজি হয়েছে। দুই দফায় বাড়া সেই যুদ্ধবিরতি শেষ হয় শুক্রবার। এরপর থেকেই গাজায় হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল।

তবে এই সময়ে পশ্চিম তীরে সহিংসতা থেমে নেই। প্রতিদিনই সেখান থেকে ফিলিস্তিনিদের মৃত্যুর খবর আসছে। এই সহিংসতায় অবৈধভাবে বসবাসকারী ইসরায়েলিরাও জড়িয়ে পড়ছে বলে জানা গেছে। যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, উগ্র যেসব ইসরায়েলি বসবাসকারী সেখান শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা নষ্ট করবে, তাদের ভিসা নিষেধাজ্ঞার দেওয়া হবে।

গত কয়েক সপ্তাহে পশ্চিম তীরে বসবাসরত ফিলিস্তিনিরা বিবিসিকে জানাচ্ছিল যে ইসরায়েলি সেটেলাররা আরও ভূমি দখলের জন্য গাজার যুদ্ধকে ব্যবহার করছে। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের এ পদক্ষেপকে বসতি স্থাপনকারীদের প্রতি ইসরায়েল সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের হতাশার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইউসেফ বুন্ডেল বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ আসলে যুদ্ধে ইসরায়েলের সমর্থন থেকে কিছুটা সরে যাওয়া। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আসলে বলতে চাইছে ‘যথেষ্ট হয়েছে।’ যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ তারই বহিঃপ্রকাশ।

তবে একে খুব গুরুত্ব দিয়ে দেখতে নারাজ যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক থিংক ট্যাংক ফেলোশিপ অব রিকনসিলিয়েশন এর নির্বাহী পরিচালক অ্যারিয়েল গোল্ড। তিনি বলেন, এই নিষেধাজ্ঞা খুব বেশি প্রভাব ফেলবে না। কারণ পশ্চিমতীরে বসবাসকারী অনেক ইসরায়েলির যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব রয়েছে। তাদের সেখানে যেতে ভিসার প্রয়োজন পড়বে না।




পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top