শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১

বছরজুড়ে উত্তাল মণিপুর, সহিংসতার নেপথ্যে কী?

রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪:১৪

ছবি: সংগৃহীত

হঠাৎই অস্থির হয়ে উঠল ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুর। সেখানে জাতিগত দাঙ্গায় এক সপ্তাহে মারা গেছে অর্ধ শতাধিক মানুষ। বহু ঘরবাড়ি ও যানবাহনে আগুন দেওয়া হয়েছে, কয়েক হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সামরিক বাহিনীও মোতায়েন করতে হয়েছে।

গত ৩ মে মণিপুরজুড়ে সহিংসতার পর প্রায় ৩৬ লাখ বাসিন্দার ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে সব গোষ্ঠীকে শান্তি বজায় রাখার অনুরোধ জানানো হয়েছে। মণিপুর রাজ্যের সাধারণ নাগরিকেরা জানাচ্ছেন, সেখানে আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।

রাজ্যে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সরকার গত সপ্তাহে দাঙ্গার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ‘উপায়ান্তর’ না পেলে ‘দেখামাত্র গুলি করার’ নির্দেশ জারি করে। রোববার সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা রাজ্যজুড়ে নজরদারি ‘উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় বাড়িয়েছে’।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার দাবি করা হলেও মণিপুরে অস্থিতিশীলতা দ্বিতীয় সপ্তাহে গড়িয়েছে এবং পরিস্থিতি জটিলই রয়ে গেছে। জাতিগতভাবে বৈচিত্র্যময় ও প্রান্তিক এই জনপদে দশকের পর দশক ধরে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন, সহিংসতা ও প্রান্তিকীকরণের রাজনীতি সেখানকার মূল সংকট হয়েই থেকে গেছে। ভারতের এই উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে এখনকার অস্থিতিশীলতার নেপথ্যে আসলে কী তা জানার চেষ্টা করেছে সিএনএন।

গোড়ার কথা

ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলে ‘সেভেন সিস্টার্স’ নামে পরিচিত যে সাতটি রাজ্য রয়েছে তার একটি মণিপুর। বাংলাদেশের সিলেট থেকে পূর্ব দিকে আসামের শিলচর জেলা পার হয়ে মণিপুর রাজ্যের সীমানা শুরু। বাংলাদেশের সঙ্গে মণিপুরের সীমান্ত নেই। তবে মণিপুরের পূর্বাংশে মিয়ানমারের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে এবং ওই সীমান্তে যথেষ্ট অস্থিরতাও রয়েছে।

প্রকৃতিগতভাবে বৈচিত্র্যময় মণিপুরে আদিযুগ থেকেই বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর বসবাস এবং সেখানে পাহাড়ি ও সমতলের আদিবাসী গোষ্ঠীরা যুগযুগ ধরেই একত্রে বসবাস করে আসছে, যারা মূলত সিনো-তিব্বতি জাতিগোষ্ঠীর। তবে এদের প্রত্যেকেরই নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি রয়েছে।

ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামলে ভারতে ‘প্রিন্সলি স্টেট’ হিসেবে যে রাজ্যগুলোর মর্যাদা ছিল, তার একটি মণিপুর। কাশ্মিরের মতো মণিপুরও ভারত স্বাধীন হওয়ার পরপরই ভারতে যুক্ত হয়নি। বরং ১৯৪৯ সালে তারা ভারতের যুক্তরাজ্য ব্যবস্থায় যুক্ত হয়। মণিপুরের শাসক মহারাজা বুদ্ধচরণ ভারত সরকারের সঙ্গে এ বিষয়ে চুক্তি সই করেন। আর তা থেকেই ওই রাজ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদের আন্দোলনেরও সূত্রপাত। তবে গত সপ্তাহে শুরু হওয়া দাঙ্গা ও সহিংস পরিস্থিতি গত কয়েক বছরের মধ্যে সেখানে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ ও অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে।

সহিংসতা মাথাচাড়া দেওয়ার কারণ কী?

গত ৩ মে বুধবার মণিপুরের চন্দ্রচূড় জেলায় বিক্ষোভ মিছিল ডাকে রাজ্যের আদিবাসী ছাত্রদের ইউনিয়ন ‘অল ট্রাইবাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন’ (এটিএসইউএম)। ওই মিছিলে স্থানীয় নাগা ও কুকি সম্প্রদায়ের হাজার হাজার জন অংশ নেয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাদের সঙ্গে রাজ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায় মেইতেই বা মণিপুরীদের সংঘর্ষ বাধে এবং তা দাঙ্গায় রূপ নেয়।

মনিপুরের ৩৬ লাখ জনগোষ্ঠীর ৫৩ শতাংশই মেইতেই জাতিগোষ্ঠীর সদস্য, যারা মূলত সনাতন ধর্মাবলম্বী বা হিন্দু সম্প্রদায় হিসেবে চিহ্নিত। মণিপুরে মেইতেইরা ‘শিডিউলড ট্রাইব’ (তফসিলি জাতিগোষ্ঠী) হিসেবে গণ্য হয় না। যে কারণে সরকারি চাকরি, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ব্যবস্থায় ‘সংরক্ষণ সুবিধা’র সুযোগ থেকে তারা বঞ্চিত হয়ে আসছে বলে দাবি মেইতেইদের।

ভারতে সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করতে সেদেশের সংবিধানে এই ‘শিডিউলড ট্রাইব’ স্বীকৃতির বিধান রাখা হয়েছে। সংবিধানে ‘শিডিউলড কাস্ট’ (ভারতে যারা মূলত দলিত বা হরিজন সম্প্রদায়ের সদস্য হিসেবে পরিচিত) ও ‘শিডিউলড ট্রাইব’ ভারতের রাজনীতিতে দীর্ঘদিনের আলোচনার বিষয়বস্তু।

ভারতে আদিবাসী জাতিগোষ্ঠী হিসেবে পরিগণিত হলেও মণিপুরে সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ায় মেইতেইদের ‘শিডিউলড ট্রাইব’ স্বীকৃতি দিলে অন্য সংখ্যালঘু আদিবাসী গোষ্ঠীগুলোর জন্য ওই রাজ্যে প্রতিযোগিতা বেড়ে যাবে- এই আশঙ্কা থেকে মেইতেইদের ‘শিডিউলড ট্রাইব’ স্বীকৃতির বিরোধিতা করছে রাজ্যের অন্য আদিবাসী সংখ্যালঘুরা, যাদের একটি বড় অংশ ধর্মীয়ভাবে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী।

এদিকে মেইতেই সম্প্রদায় ‘শিউউলড ট্রাইব’ হিসেবে শ্রেণিভুক্ত হওয়ার জন্য গত কয়েক বছর ধরেই দাবি জানিয়ে আসছিল। ভারতের কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল বিজেপিও মেইতেইদের এই দাবির পক্ষে সহানুভূতিশীল। তাদের এই দাবিকে সমর্থন জানিয়েই মণিপুরে বিধানসভা নির্বাচনে জয়লাভ করে সেখানে সরকার গঠনও করেছে বিজেপি।

এই নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গন সরগরম হওয়ার মধ্যেই গত মাসে মণিপুর হাই কোর্ট রাজ্য সরকারকে মেইতেইদের দাবি বিবেচনার নির্দেশ দেয়। কিন্তু রাজ্যের অন্য আদিবাসী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে এতে উদ্বেগ সৃষ্টি হয় এবং হাই কোর্টের ওই আদেশের প্রতিক্রিয়ায় মণিপুরের অল ট্রাইবাল স্টুডেন্টস ইউনিয়নের ডাকা মিছিল শুরু হলে দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে। সহিংস সংঘর্ষের ভিডিওচিত্রে দেখা যায়, উন্মত্ত জনতা বিভিন্ন ঘরবাড়ি ও যানবাহনে আগুন দিচ্ছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা সিএনএনকে জানিয়েছে, তাদের ঘরবাড়ি ও গির্জা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ভীত-সন্তস্ত্র পরিবারগুলো সহিংসতাপূর্ণ এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে এবং অনেকেই সামরিক বাহিনীর আশ্রয় শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইম্ফলের এক আদিবাসী যুবনেতা সিএনএনকে বলেন, তাদের বাড়ি লুটপাট করে ভাঙচুর করা হয়েছে এবং পরিবারকে সামরিক আশ্রয় শিবিরে শরণার্থী হতে বাধ্য করা হয়েছে।

তিনি বলেন, “আমরা এখানে যা দেখছি, দুর্ভাগ্যজনক হলেও মনে হচ্ছে, খুবই পরিকল্পনামাফিকই এই দাঙ্গা বাধানো হয়েছে এবং বিরোধীদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। তারা স্পষ্টভাবে জানে কোন বাড়িগুলোতে সংখ্যালঘু আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকজন বাস করে এবং সেখানেই হামলা ও অভিযান চালানো হচ্ছে।”

দ্বন্দ্ব কোথায়?

মণিপুরে মেইতেই এবং অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে বিভেদটি রাজনৈতিক ও ভৌগলিকভাবে স্পষ্ট। গত সপ্তাহের দাঙ্গায় এই বিভেদের চিত্রটি সামনে এলেও দুই পক্ষের মধ্যকার উত্তেজনা দীর্ঘ দিনের এবং ভূমি অধিকার, সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে এই দূরত্ব ও বিভেদ চলছে।

সিএনএন লিখেছে, রাজ্যে সরকার এবং প্রশাসনের বিভিন্ন পদে মেইতেইদের আধিপত্য চোখে পড়ার মতো এবং সেখানে অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত উন্নতির সুবিধা অন্য আদিবাসী গোষ্ঠীগুলোর তুলনায় তারাই বেশি ভোগ করে। সম্প্রতি বিজেপি ক্ষমতা গ্রহণের পর সেখানে হিন্দু ও খ্রিস্টানদের মধ্যে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক বিভেদ সৃষ্টির প্রবণতা স্পষ্ট হয়েছে।

মেইতেইরা মূলত ভৌগলিকভাবে ছোট ইম্ফল উপত্যকা অঞ্চলে বসবাস করে। অন্যদিকে নাগা ও কুকি জনগোষ্ঠীর বাস কৃষিপ্রধান ও সংরক্ষিত পার্বত্য এলাকায়। ‘শিডিউলড ট্রাইব’ না হওয়ায় মেইতেইরা সংরক্ষিত এলাকায় ভূমির মালিকানা নিতে পারে না।

এখন মণিপুর হাই কোর্টের রায়ের পর নাগা ও কুকি সম্প্রদায়ের সদস্যদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে, এই দাবি পূরণ হলে তারা সরকারের বিভিন্ন সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে বড় প্রতিযোগিতায় পড়বে এবং মেইতেইরা তাদের এলাকায় ভূমি দখল করতে শুরু করবে।

তার উপর ভূ-রাজনৈতিক সংকট তো রয়েছেই। ২০২১ সালে প্রতিবেশী মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থান ও সামরিক বাহিনীর অভিযানের ফলে সেদেশের আদিবাসী গোষ্ঠী চিন সম্প্রদায়ের অনেকে সীমানা পেরিয়ে মণিপুরে আশ্রয় নেয়। মণিপুরের কুকিরা, যারা জাতিগতভাবে চীন সম্প্রদায়ের সমগোত্রীয়, বলছে, ভারতে আশ্রয় নেওয়া এই শরণার্থীদের বিরুদ্ধে অনৈতিক অভিযান পরিচালনা করছে রাজ্য সরকার। যে কারণে কুকিরা নিজেদের জতিগত বিদ্বেষের শিকার ভাবছে এবং অসহায়বোধ করছে।

কী বলছে প্রশাসন?

মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং বলেছেন, তিনি ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে ধারাবাহিক যোগাযোগ বজায় রেখে চলছেন এবং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে বলেও দাবি করেন তিনি।

সোমবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ইনডিয়া টুডেকে বলেন, মণিপুরের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেই আছে। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর ভয় পাওয়ার বা শঙ্কিত হওয়া কারণ নেই। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মণিপুরের দাঙ্গা ও প্রাণহানি নিয়ে এখনও কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি। এনিয়ে মণিপুরের বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে বলে সিএনএনের ভাষ্য।

ভারতের বিরোধীদলগুলো মণিপুরের ঘটনায় নরেন্দ্র মোদী ও বিজেপি সরকারের সমালোচনা করেছে এবং এই দাঙ্গার জন্য সরকারকেই দায়ী করেছে। কংগ্রেসের নেতা শশী থারুর এক টুইটে বলেন, “মণিপুরে সহিংস পরিস্থিতি বিরাজ করছে, এই পরিস্থিতি বিবেক সম্পন্ন ভারতীয়দের নিজেকে প্রশ্ন করা উচিৎ, যেই সুশাসনের অঙ্গীকার বর্তমান সরকার করেছিল, সেই সুশাসন কোথায়?” এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে মণিপুরের রাজ্য সরকার এবং ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে সিএনএন; কিন্তু তাদের উত্তর পায়নি।

সর্বশেষ পরিস্থিতি কী?

রাজ্যজুড়ে গত সপ্তাহের মতো দাঙ্গা পরিস্থিতি বিরাজ না করলেও বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন স্থানে এখনও থেমে থেমে সহিংসতার খবর পাওয়া যাচ্ছে। সিএনএনের হাতে আসা ভিডিওচিত্র ও ছবিতে দেখা গেছে, কুকি সম্প্রদায়ের কিছু বসতিতে বাঁশ-কাঠের ব্যারিকেড দিয়ে সুরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। রাজ্যটি এখনও উত্তেজনাময়, ফলে এটা এখনও বলা সম্ভবপর নয় যে কখন বা কীভাবে এই অস্থিরতা স্থিমিত হবে।

মণিপুরের অনেক বাসিন্দাই প্রাণ বাঁচাতে পাশের রাজ্য নাগাল্যান্ড, মিজোরাম ও মেঘালয়ে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের অনেকে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে বলে রয়টার্স সোমবার জানিয়েছে। ভারতের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা তাদের পাহারা দিয়ে নিজ নিজ বাড়িতে পৌঁছে দিচ্ছে বলে জানান কর্মকর্তারা।

ভারতের সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গত সপ্তাহের দাঙ্গায় কমপক্ষে ২৩ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং তাদের একটি অংশ সামরিক বাহিনীর ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে। রোববার এক বিবৃতিতে সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, আশার আলো দেখা যাচ্ছে এবং পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসছে। আসাম রাইফেলস ও সামরিক বাহিনীর ১২০ থেকে ১২৫টি দল উদ্ধারকাজ পরিচালনা করছে। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর

মেইতেই আর কুকিদের মধ্যে কেন সংঘর্ষ?

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মণিপুরের সংখ্যাগুরু সম্প্রদায় হিন্দু মেইতেই জনগোষ্ঠীর। এদের অনেকেই বৈষ্ণব। রাজ্যের জনসংখ্যার প্রায় ৬৫% তারাই। অন্যদিকে পাহাড়ি অঞ্চলে বাস করেন যেসব নাগা এবং কুকি উপজাতির মানুষ, তাদের একটা বড় অংশ খ্রিস্টান। এরকম ৩৩ টি উপজাতি গোষ্ঠীর বসবাস রাজ্যের ৯০ % পাহাড়ি অঞ্চলে।

গত কয়েক বছর ধরেই মেইতেইরা দাবি জানিয়ে আসছিলেন যে তাদের তপশিলি উপজাতি (এসটি) হিসেবে শ্রেণিভুক্ত করার জন্য। ভারতে যে সব সম্প্রদায় ঐতিহাসিকভাবে সমান সুযোগসুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে- তাদেরকে এসটি শ্রেণিভুক্ত করে তাদের জন্য সরকারি চাকরি, কলেজে ভর্তি ও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির আসন সংরক্ষণ করা হয়।

২০২৩ সালের মে মাসে মণিপুর হাইকোর্ট রাজ্য সরকারকে মেইতেই সম্প্রদায়ের দাবি বিবেচনার নির্দেশ দেয়। কিন্তু রাজ্যের অন্য উপজাতিগুলোর মধ্যে এতে উদ্বেগ সৃষ্টি হয় যে মেইতেইদেরকে এসটি মর্যাদা দেওয়া হলে তাদের চাকরির জন্য তীব্র প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হবে।

আবার রাজ্যের পার্বত্য অঞ্চলগুলি, যেখানে উপজাতীয়দের বসবাস, সেখানে মেইতেই জনগোষ্ঠীর মানুষ জায়গা জমি কিনতে পারেন না। তবে মেইতেইরা উপজাতি তালিকাভুক্ত হলে পার্বত্য অঞ্চল তারা দখল করে নেবে, এই আশঙ্কাও তৈরি হয় উপজাতিগুলির মনে।

মনিপুরের একজন অগ্রগণ্য মানবাধিকার কর্মী ব্যক্তিগত নিরাপত্তার স্বার্থে নাম উল্লেখ করতে বারণ করে গত বছর বিবিসিকে বলেন, মেইতেইরা রাজনৈতিকভাবে খুবই ক্ষমতাশালী। কিন্তু নাগা এবং কুকিসহ উপজাতীয় মানুষ সংরক্ষণের কারণে এবং তাদের পিছনে খ্রিস্টান মিশনারিদের সহায়তার কারণে পড়াশোনা বলুন বা রাজ্যের ভেতর আর বাইরে চাকরির ক্ষেত্রে, খুব দ্রুত উন্নতি করে ফেলেছে মেইতেইদের তুলনায়। তাই মেইতেই মধ্যবিত্তদের একাংশ মনে করছিলেন যে তাদেরও সংরক্ষণের আওতায় আসা উচিত, যাতে তারাও উন্নতি করতে পারে।

গত বছর হাইকোর্টের নির্দেশের প্রতিবাদ জানাতে মণিপুরের অল ট্রাইবাল স্টুডেন্টস ইউনিয়নের ডাকা এক মিছিলে হাজার হাজার লোক যোগ দেয় মে মাসের তিন তারিখ। ওইসব মিছিলগুলির একটি হচ্ছিল উপজাতীয়দের এলাকা চূড়াচন্দ্রপুর জেলায়। সেখানেই তখন সংঘর্ষ শুরু হয়। এরপর থেকে চলছেই লাগাতার সংঘর্ষ। তথ্যসূত্র: বিবিসি



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top