যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটসের ফ্রামিংহামে একটি বয়স্ক সেবাদানকেন্দ্র পরিচালনা করেন টেরি হগ, নাম ‘বেথানি হেলথ কেয়ার সেন্টার’। সেখানে দেড় শতাধিক বয়স্ক নারী বসবাস করেন। অভিবাসী কর্মীদের ছাড়া ওই সব বয়স্ক মানুষের দেখভাল ও যত্ন নেওয়া, বাড়িঘর পরিষ্কার রাখা, রান্নাবান্না ও খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করা টেরি হগের জন্য খুব কঠিন হয়ে পড়বে।
টেরি হগের বেথানি হেলথ কেয়ার সেন্টারের মোট কর্মীদের ৪০ শতাংশের বেশির জন্ম বিদেশে। তাঁরা হাইতি, গুয়াতেমালা, এল সালভাদর, ঘানাসহ বিশ্বের ২৬টি দেশ থেকে এসেছেন। হগ বলেন, তাঁদের সনদপ্রাপ্ত নার্সিং অ্যাসিস্ট্যান্টদের ৮৪ শতাংশ বিদেশ থেকে এসেছেন। এবং এসব অভিবাসী কর্মী না থাকলে তাঁদের পক্ষে কেয়ার সেন্টারটি চালিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে না।
এই নারী বলেন, ‘আমাদের এখানকার বাসিন্দারা নার্সিং স্টাফ এবং হাউসকিপিং স্টাফদের সেবা ও সাহচর্যের ওপর প্রচণ্ডভাবে নির্ভরশীল। অভিবাসী কর্মীদের ছাড়া এই বয়স্ক সেবাকেন্দ্রটি পরিচালনা করা খুবই কঠিন। তাদের সেবা ছাড়া বাসিন্দাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখাও কঠিন হবে।’
এ কারণে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসন পরিকল্পনা নিয়ে হগ এবং তাঁর কর্মীরা বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্র থেকে লাখ লাখ অভিবাসীকে বিতাড়িত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বিশেষ করে ওই সব অভিবাসীকে, যাঁরা আশ্রয় প্রার্থনার আবেদন করেছেন, যাঁরা ডেফার্ড অ্যাকশন ফর চাইল্ডহুড অ্যারাইভ্যালসের (ডিএসিএ) সুবিধাভোগী এবং যাঁরা অস্থায়ী সুরক্ষা প্রকল্পের অধীনে অবস্থান করছেন।
সেই সঙ্গে ট্রাম্প সীমান্ত পেরিয়ে অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্র প্রবেশে বাধা দেওয়ার কথাও বলেছেন। নিজের প্রথম মেয়াদেও ট্রাম্প অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছিলেন। হগ বলেন, ‘তাঁদের জন্য কী ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে, তা নিয়ে তাঁরা খুবই উদ্বিগ্ন। আর আমরা, যাঁরা সেবাকেন্দ্র পরিচালনা করি, আমরা কর্মী হারানোর ঝুঁকির মধ্যে আছি।’
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ট্রাম্প এমন এক সময়ে অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যখন যুক্তরাষ্ট্রে বয়স্ক সেবাদানকেন্দ্রগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে আরও কর্মী প্রয়োজন। কারণ, দেশটিতে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। তিনি যে হুমকি দিয়েছেন, তাতেই যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী আসা কমে যেত পারে। সেই সঙ্গে স্বাস্থ্যসেবা খাতে বিদেশে জন্ম নেওয়া কর্মীদের নিয়োগ প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
অভিবাসীদের বিরুদ্ধে ট্রাম্প কী কী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে চলেছেন, সে বিষয়ে এখনো বিস্তারিত অনেক তথ্য দেননি ট্রাম্প। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বয়স্ক সেবাদানকেন্দ্রগুলোর জন্য ভবিষ্যতে কী সিদ্ধান্ত আসতে চলেছে, এখন সেটা দেখার অপেক্ষা করা ছাড়া আর কিছু করার নেই।
লিডিংএইজের ওয়ার্কফোর্স পলিসির পরিচালক নিকোল হাওয়েল বলেন, ‘আমাদের একদল বয়স্ক মানুষ আছেন, যাঁরা আমরা সাধারণত যেমনটা দেখেছি সেই তুলনায় বেশি দিন বাঁচতে চলেছেন। তাঁদের সেবা ও যত্নের প্রয়োজন আছে এবং প্রয়োজন পড়বে। তাই বয়স্ক সেবা খাতের কর্মী সরবরাহে বিঘ্ন ঘটলে ওই সব মানুষ এবং তাঁদের পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।’
অভিবাসীদের একটি বড় অংশ সেবা খাতে কাজ করেন। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মী বাহিনীর ১৭ দশমিক ৭ শতাংশ বিদেশে জন্ম নিয়েছেন। দেশটিতে বাড়িতে স্বাস্থ্যসেবা সহায়তা প্রদান করা ৪২ শতাংশের বেশি কর্মী অভিবাসী। তাঁদের আবার প্রায় সাড়ে ৬ শতাংশ অবৈধ অভিবাসী। এমনটা জানিয়েছেন আমেরিকান ইমিগ্রেশন কাউন্সিলের জ্যেষ্ঠ তথ্যবিজ্ঞানী স্টিভেন হুবার্ড।
হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের হেলথ কেয়ার পলিসির অধ্যাপক ডেভিড গ্রাবোউস্কি বলেছেন, দীর্ঘ মেয়াদে সেবাদান করে থাকে, এমন কেন্দ্রগুলোতে সহায়তাকর্মী হিসেবে অনেক অভিবাসী কাজ করেন। সরাসরি সেবাদানের সঙ্গে যুক্ত নন বিশেষ করে পরিচ্ছন্নতাকর্মী—এমন কর্মীদের ৩০ শতাংশের বেশি অভিবাসী।
অধ্যাপক গ্রাবোউস্কি বলেন, ‘দীর্ঘ মেয়াদে সেবাদান পরিষেবার মেরুদণ্ড হলেন কেয়ারগিভাররা। আর এই মেরুদণ্ডের একটি বড় অংশ অভিবাসী কর্মী। তাঁদের ছাড়া আমরা বড় ধরনের কর্মীর সংকটে পড়ব এবং বিশেষ করে ব্যক্তিগত সেবার মান এবং জীবনমান আরও খারাপ হয়ে যাবে।’
আগামী কয়েক দশকে যুক্তরাষ্ট্রে ৬৫ বা তার বেশি বয়সী মানুষের সংখ্যা রকেটগতিতে বাড়বে বলে এক গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে ২০২২ সালে ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সের মানুষের সংখ্যা ছিল ৫ কোটি ৮০ লাখ। ২০৫০ সাল নাগাদ ওই সংখ্যা বেড়ে ৮ কোটি ২০ লাখ হবে। অর্থাৎ এই বয়সী মানুষের সংখ্যা দেশটির মোট জনসংখ্যার ১৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ২৩ শতাংশ হবে। বয়স্ক জনসংখ্যার এই দ্রুত বৃদ্ধি যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘ মেয়াদি সেবা খাতে মারাত্মক চাপ সৃষ্টি করবে। এই খাত এখনই কর্মিসংকটে রয়েছে এবং অনেক কর্মী এই খাত ছেড়ে যাচ্ছেন। সূত্র: প্রথম আলো
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।