গাজায় নির্বিচার হামলায় নিহত শিশুর সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়াল
নিউজফ্ল্যাশ ডেস্ক | প্রকাশিত: ৮ অক্টোবর ২০২৫, ১০:৩৩

গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনে নিহতের সংখ্যা ভয়াবহ মাত্রায় পৌঁছেছে। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর সংঘাত শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ৬৭ হাজার ১৭৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ২০ হাজার ১৭৯ জন শিশু। এছাড়া আহত হয়েছেন ১ লাখ ৬৯ হাজার ৭৮০ জন।
মন্ত্রণালয় জানায়, অব্যাহত হামলায় চিকিৎসা অবকাঠামো মারাত্মকভাবে ভেঙে পড়েছে। নিহত হয়েছেন ১ হাজার ৭০১ জন স্বাস্থ্যকর্মী, আটক হয়েছেন আরও ৩৬২ জন। অবরোধ ও বোমাবর্ষণে সৃষ্ট দুর্ভিক্ষে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৪৬০ জন, যাদের মধ্যে শিশু রয়েছে ১৫৪ জন।
জাতিসংঘের তথ্যে বলা হয়েছে, গাজা উপত্যকার মাত্র ১৮ শতাংশ এলাকা এখনো উচ্ছেদ নির্দেশ বা সামরিক নিয়ন্ত্রণের বাইরে। বারবার বাস্তুচ্যুত হয়ে দক্ষিণে আশ্রয় নিচ্ছেন লাখো ফিলিস্তিনি। শুধু গত আগস্ট মাস থেকেই গাজা সিটি থেকে ৪ লাখ ১৭ হাজার মানুষ স্থান পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছেন।
এমন পরিস্থিতিতে মিশরের শার্ম আল শেখে শুরু হয়েছে হামাস ও ইসরাইলের পরোক্ষ আলোচনা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রস্তাবিত শান্তি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আলোচনার মূল কেন্দ্রবিন্দু বন্দি বিনিময় ইস্যু।
ইসরাইলি জিম্মিদের মুক্তির বিনিময়ে ফিলিস্তিনি বন্দিদের ছেড়ে দেওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা চলছে। হামাস জানিয়েছে, তারা প্রস্তাবে আংশিকভাবে রাজি, তবে গাজার ভবিষ্যত প্রশাসন ও নিরস্ত্রীকরণ ইস্যুতে এখনো আপত্তি রয়েছে।
মিশরের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানায়, প্রথম দফার আলোচনা ‘ইতিবাচক পরিবেশে’ শেষ হয়েছে। মঙ্গলবারও আলোচনায় বসবেন হামাস, মিশর, কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আশা প্রকাশ করেছেন, শিগগিরই বন্দি মুক্তির ঘোষণা আসবে। তার ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনায় যুদ্ধবিরতি, মানবিক সহায়তা প্রবেশ ও সীমিত বন্দি বিনিময়ের বিষয় রয়েছে।
৭ অক্টোবর হামলার দ্বিতীয় বার্ষিকী উপলক্ষে বিশ্বনেতারা নতুন করে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন।
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রঁ, এবং যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির আহ্বান জানান।
এছাড়া গ্রিস, ইতালি ও সুইডেনের প্রধানমন্ত্রীরাও ট্রাম্পের শান্তি উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং স্থায়ী সমাধানের ওপর জোর দিয়েছেন।
অন্যদিকে, ইসরাইলের ভেতরে জিম্মিদের পরিবারের চাপ বাড়ছে। তেল আবিবে বিক্ষোভকারীরা সরকারের বিরুদ্ধে জিম্মিদের অবহেলার অভিযোগ তুলেছেন এবং দ্রুত বন্দি ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন।
কিছু পরিবার নোবেল কমিটিকে চিঠি দিয়ে ট্রাম্পকে শান্তি প্রচেষ্টার স্বীকৃতি হিসেবে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। যদিও এবার ৭ অক্টোবরকে সরকারি স্মরণ দিবস হিসেবে পালন করেনি ইসরাইল সরকার; তবে বেসরকারি উদ্যোগে কনসার্ট, সমাবেশ ও স্মরণ অনুষ্ঠান হচ্ছে।
এদিকে, গাজায় ইসরাইলি হামলা এখনো চলছে। হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ২১ জন নিহত ও ৯৬ জন আহত হয়েছেন।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রবেশাধিকার সীমিত থাকায় উভয় পক্ষের দাবি যাচাই কঠিন হয়ে পড়েছে।
বিষয়:
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।