ট্রাম্প কি নোবেল পুরস্কার পাচ্ছেন?
আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশিত: ৮ অক্টোবর ২০২৫, ১৭:৫৯

বিশ্বজুড়ে যখন চলছে যুদ্ধ, সংঘাত ও মানবিক বিপর্যয়— এমন অস্থির সময়েই আসছে ২০২৫ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কারের ঘোষণা। আগামী শুক্রবার (১০ অক্টোবর) নরওয়ের রাজধানী অসলোতে স্থানীয় সময় বেলা ১১টা (বাংলাদেশ সময় বিকাল ৩টা) বিজয়ীর নাম ঘোষণা করবে নোবেল কমিটি।
সুইডেনের উপসালা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংঘাত–তথ্যভাণ্ডার অনুযায়ী, ১৯৪৬ সালের পর থেকে একসঙ্গে এত বেশি সশস্ত্র সংঘাত আর কখনো দেখা যায়নি, যতগুলো ২০২৪ সালে চলমান ছিল।
গাজা, ইউক্রেন, সাহেল অঞ্চল থেকে মিয়ানমার— পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি প্রান্তেই যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ ও মানবিক সংকট। এই বাস্তবতায় এ বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কার আরও তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, তিনি “কমপক্ষে আটটি সংঘাতের অবসান ঘটিয়েছেন” এবং তাই নোবেল পাওয়ার যোগ্য। তবে বিশেষজ্ঞরা তার এই দাবিকে “হাস্যকর” বলেছেন।
সুইডেনের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক পিটার ভ্যালেনস্টিন মন্তব্য করেছেন—
“না, ট্রাম্প এ বছর নোবেল পাচ্ছেন না। হয়তো ভবিষ্যতে, যদি তার উদ্যোগগুলো বাস্তব কোনো শান্তির রূপ নেয়।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি এবং আগ্রাসী কূটনীতি বরং তাকে শান্তির নয়, সংঘাতের প্রতীক করে তুলেছে।
অসলো পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রধান নিনা গ্রেগার বলেন
“নোবেল শান্তি পুরস্কার আলফ্রেড নোবেলের সেই উদ্দেশ্যের প্রতীক, যেখানে জাতির ভ্রাতৃত্ব, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও নিরস্ত্রীকরণকে উৎসাহিত করা হয়। কিন্তু ট্রাম্পের নীতিগুলো তার বিপরীত।”
তিনি আরও জানান, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে নানা আন্তর্জাতিক চুক্তি ও সংস্থা থেকে প্রত্যাহার করেছেন, বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করেছেন, এমনকি ডেনমার্ক থেকে গ্রিনল্যান্ড দখলের হুমকিও দিয়েছিলেন।
নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান ইয়োরগেন ওয়াতনে ফ্রিডনেস বলেছেন—
“আমরা কেবল কোনো ব্যক্তির বক্তব্য নয়, তার সামগ্রিক ভূমিকা ও বাস্তব অবদান দেখি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো— তিনি শান্তির জন্য বাস্তবে কী করেছেন।”
অর্থাৎ কেবল ঘোষণা নয়, কার্যকর উদ্যোগই নোবেল পাওয়ার প্রধান শর্ত।
এ বছর মোট ৩৩৮ ব্যক্তি ও সংস্থাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। যদিও নোবেল কমিটি প্রথা অনুযায়ী ৫০ বছর গোপন রাখে এই তালিকা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সম্ভাব্যদের মধ্যে রয়েছেন—
-
সুদানের ‘ইমার্জেন্সি রেসপন্স রুমস’, যারা যুদ্ধ ও দুর্ভিক্ষে আক্রান্ত মানুষদের সহায়তা করছে
-
প্রয়াত রুশ বিরোধী নেতা অ্যালেক্সি নাভালনির স্ত্রী ইউলিয়া নাভালনায়া, যিনি মানবাধিকার আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন
-
ইউরোপের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থা ওডিআইএইচআর (ODIHR)
গত বছর শান্তি পুরস্কার গিয়েছিল জাপানের “নিহোন হিদানকিও” সংস্থার হাতে, যারা পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধে কাজ করছে।
বিশ্ব যখন যুদ্ধ ও বিভাজনের অন্ধকারে নিমজ্জিত, তখন ২০২৫ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার এক ঝলক আশার প্রতীক হয়ে উঠেছে— কে জিতবেন, তা জানতে অপেক্ষা মাত্র কয়েক ঘণ্টার।
বিষয়:
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।