ট্রাম্পের দাবি, ভারতের দ্বিধা: রাশিয়ার তেল কিনবে কি না তা নিয়ে দ্বন্দ্ব
আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশিত: ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ১৪:০৮

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মুখে যা আসে, তা সবসময় কার্যনির্বাহী সিদ্ধান্তে পরিণত হয় না। উদাহরণস্বরূপ, তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে বন্ধু বলে সম্বোধন করলেও, তাঁর শুল্ক নীতিতে ভারতকে স্বস্তি দেওয়া হয়নি।
চলতি বছরের ২৭ অগাস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের ওপর ৫০ শতাংশ বাণিজ্য শুল্ক আরোপ করেছে। এর প্রভাব ইতিমধ্যেই দেখা যাচ্ছে। সেপ্টেম্বর মাসে ভারতের রফতানি যুক্তরাষ্ট্রে ২০ শতাংশ কমেছে এবং চলতি চার মাসে পতন দাঁড়িয়েছে ৪০ শতাংশ। দিল্লি-ভিত্তিক ‘গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ’-এর পরিচালক অজয় শ্রীবাস্তবের মতে, এই শুল্ক নীতি ভারতের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর প্রমাণিত হয়েছে।
হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথোপকথনের সময় ট্রাম্প বলেন, "মোদী একজন মহান ব্যক্তি। তিনি ট্রাম্পকে পছন্দ করেন।" একই সঙ্গে তিনি দাবি করেন, মোদী রাশিয়ার কাছ থেকে তেল না কেনার আশ্বাস দিয়েছেন। তবে ভারত তা প্রত্যাখ্যান করেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল স্পষ্টভাবে বলেছেন, "প্রধানমন্ত্রী মোদী ও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মধ্যে কোনো আলোচনা হয়নি। ভারত এনার্জি ইম্পোর্ট নীতি তৈরি করে দেশের স্বার্থ অনুযায়ী।"
ভারতের বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধী বলেন, "মোদী ট্রাম্পকে ভয় পাচ্ছেন। আমরা ট্রাম্পকে রাশিয়ার কাছ থেকে তেল না কেনার সিদ্ধান্ত নিতে বলছি।" কিন্তু বিশ্লেষকরা মনে করেন, ভারত কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন বজায় রেখে নিজ সিদ্ধান্ত নেবে।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, ট্রাম্পের মন্তব্য ভারতের জন্য দ্বিধার সৃষ্টি করছে। ভারত যদি রাশিয়া থেকে তেল কিনা অব্যাহত রাখে, তাহলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হতে পারে। অন্যদিকে, তেল কেনা বন্ধ করলে রাশিয়ার সঙ্গে ঐতিহ্যবাহী সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত ভারত রাশিয়া থেকে ১৯.৮ বিলিয়ন ডলার মূল্যের তেল আমদানি করেছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১১.২ শতাংশ কম। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে তেল আমদানি বেড়েছে ২.৮ বিলিয়ন ডলার থেকে ৫ বিলিয়ন ডলারে, যা ৭৮.৬ শতাংশ বৃদ্ধি।
অর্থাৎ, ভারত রাশিয়ার থেকে আমদানির পরিমাণ কমিয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে বৃদ্ধি করেছে। তবুও ট্রাম্পের দাবি এবং চাপ ভারতের কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সিদ্ধান্তকে জটিল করে তুলেছে।
বিষয়:
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।