দুই বছরে দেড় লাখ মৃত্যু: সুদানে আসলে কী হচ্ছে?
বিবিসি নিউজ | প্রকাশিত: ২ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:৫৮
সুদানে ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া ভয়াবহ গৃহযুদ্ধ এখনো চলছে। দেশটির সেনাবাহিনী ও আধা-সামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)-এর মধ্যে এই সংঘাতে দেড় লাখেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন, এবং প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত। জাতিসংঘের ভাষ্য অনুযায়ী, বর্তমানে এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবিক সংকট।
২০১৯ সালে প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরের পতন ঘটে দীর্ঘ ৩০ বছরের শাসনের পর। সেনাবাহিনী ও বেসামরিক প্রশাসনের যৌথ সরকার গঠিত হলেও, ২০২১ সালে সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সেই সরকারও ভেঙে যায়।
এর পর থেকে দুই সামরিক নেতা—
জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান (সেনাপ্রধান ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট)
জেনারেল মোহামেদ হামদান দাগালো “হেমেডটি” (আরএসএফ প্রধান)
—এর মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব শুরু হয়।
২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে আরএসএফের সেনাদের বিভিন্ন শহরে মোতায়েনের সিদ্ধান্তকে সেনাবাহিনী “হুমকি” মনে করে। ১৫ এপ্রিল থেকেই শুরু হয় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ।
সেনাবাহিনী: জেনারেল আল-বুরহানের নেতৃত্বে; মিশরের সমর্থন পাচ্ছে।
আরএসএফ: হেমেডটির নেতৃত্বে আধা-সামরিক বাহিনী; দারফুর ও দক্ষিণাঞ্চলে তাদের প্রভাব বেশি।
আরএসএফ মূলত জানজাওয়িদ মিলিশিয়া থেকে গঠিত, যারা অতীতে দারফুরে জাতিগত নিধনের অভিযোগে কুখ্যাত ছিল। পরে ওমর আল-বশির তাদের “বর্ডার ইন্টেলিজেন্স ইউনিট” ও পরে “র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস” নামে বৈধতা দেন।
রাজধানী খার্তুম ২০২৩ সালে আরএসএফের দখলে গেলেও, ২০২৫ সালের মে মাসে সেনাবাহিনী পুনর্দখল করে।
দারফুর অঞ্চলের প্রায় পুরোটা এখন আরএসএফের নিয়ন্ত্রণে।
পশ্চিম দারফুরের এল-ফাশের শহরে আরএসএফের হাতে গণহত্যার অভিযোগ উঠেছে।
আরএসএফ এখন সুদানের বিশাল অংশ দখল করে নিজস্ব সরকার প্রতিষ্ঠার দাবি করছে, ফলে দেশটি আবার বিভক্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে (২০১১ সালে দক্ষিণ সুদান আলাদা হয়েছিল)।
আরএসএফ ও তাদের মিত্র মিলিশিয়াদের বিরুদ্ধে গণহত্যা, ধর্ষণ ও জাতিগত নিধনের অভিযোগ রয়েছে।
জাতিসংঘ ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানিয়েছে, আরএসএফ ও সেনা উভয় পক্ষই যুদ্ধাপরাধে জড়িত।
দারফুরে আরব নয় এমন জনগোষ্ঠীর ওপর হামলা চালিয়ে “আরব অঞ্চল” গড়ে তোলার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে।
ইউনিসেফের তথ্যে, শিশুরাও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে।
আফ্রিকার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত সুদানের আয়তন ১৯ লাখ বর্গকিলোমিটার, নীল নদ এর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত।
দেশটির সীমানা মিশর, লিবিয়া, দক্ষিণ সুদানসহ সাতটি দেশের সঙ্গে যুক্ত এবং লোহিত সাগরের তীরবর্তী হওয়ায় কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বিশ্বের অন্যতম স্বর্ণ উৎপাদনকারী দেশ হলেও গৃহযুদ্ধের কারণে অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে; রাষ্ট্রীয় আয় কমেছে প্রায় ৮০%।
বিষয়:

পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।